নির্যাতিতা গৃহবধূর মামলা থেকে রক্ষায় অপহরনের নাটক সাজানোর পরিকল্পনা

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ যৌতুক লোভি স্বামী ও তার পরিবারের সদ্যদের হাতে নির্যাতিতা বরিশালের গৌরনদীর গৃহবধূ সবিতা রানী দাস (৩০) এর মামলা থেকে নিজেদেরকে রক্ষায় ও গৃহবধূকে আটকাতে শশুর পরিবার স্বামী দিনেশ চন্দ্র দাসকে গোপনে ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে একটি অপহরন নাটক সাজিয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূ ও তার মা, ভাই, বোনদের নামে মিথ্যা অপহরন মামলা দেয়ার গোপন পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্যাতিতা গৃহবধূর মামলা থেকে রক্ষায় অপহরনের নাটক সাজানোর পরিকল্পনামঙ্গলবার দুপুরে বরিশালের গৌরনদী প্রেসক্লাবে হাজির হয়ে নির্যাতিতা গৃহবধু সবিতা রানী দাস (৩০) অভিযোগ করেন, যৌতুক লোভি স্বামী ও তার পরিবারের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় স্বামী, শশুর, শাশুড়ি, দেবর, ভাসুরদের হাতে তিনি নির্মম ভাবে নির্যাতিত হন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তারা একমাত্র সন্তানসহ গৃহবধূ সবিতাকে স্বামীর গৃহ থেকে তাড়িয়ে দেয়। নিরুপায় হয়ে গৃহবধূ সবিতা তাকে নির্যাতন করা ও তার পিতৃ পরিবারের কাছে যৌতুক দাবির অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা থেকে নিজেদের রক্ষায় ও সবিতাকে আটকাতে তার শশুর পরিবার এখন নির্যাতিতার স্বামী দিনেশ চন্দ্র দাসকে গোপনে ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে, তাকে অপহরন করার একটি নাটক সাজিয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূ সবিতা ও তার মা, ভাই, বোনদের নামে মিথ্যা অপহরন মামলা দেয়ার গোপন পরিকল্পনা করছে।

জানাগেছে, নির্যাতিতা গৃহবধূ সবিতা রানী দাস গৌরনদীর পার্শ্ববর্তি আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের মৃত হরিপদ দাশের কন্যা। বিগত ২০০০ সালে গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী গ্রামের সুনিল দাসের পুত্র দিনেশ দাসের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় পিতৃ পরিবারের পক্ষ থেকে স্বামী দিনেশকে নগদ ৮০ হাজার টাকা, ৪ ভরি স্বর্নালংকার, রঙিন টেলিভিশন, খাট, আলমীরা সহ প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়। বিয়ের ৩ বছর পর সবিতার কোল জুড়ে জন্ম নেয় একমাত্র পুত্র সন্তান সুব্রত। একমাত্র পুত্রকে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু স্বামী দিনেশ ২০০৪ সালে চাদঁশী ইউপি নির্বাচনে মেম্বর পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে হেরে যায়। ওই নির্বাচনে দিনেশের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। এ কারনে সে আর্থিক দৈন্যতায় পরে যায়। তখন শ্বশুর বাড়ী থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দেয়ার জন্য দিনেশ সবিতার ওপর চাপ প্রয়োগ করে। সবিতার তার বাবার বাড়ী থেকে টাকা এনে দিতে না পারায় তার ওপর শুরু হয় শারিরিক ও মানষিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে স্বামী দিনেশ, শশুর, শাশুড়ি, দেবর, ভাসুর ও শশুর পরিবারের সদস্যরা সবিতাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তখন বিচারের আশায় সে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার, স্থানীয় সাংসদসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারস্ত হয়। কোন জায়গা থেকেই সে সুবিচার পায়নি। একান্ত নিরুপায় হয়ে পরে সে তার শিশু পুত্রকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। এর পর সে কয়েক দফায় স্বামী গৃহে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। একান্ত নিরুপায় হয়ে শেষে সবিতা রানী দাস তার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ী, দেবর ভাসুরদের বিরুদ্ধে বরিশাল বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ও বরিশাল পারিবারিক আদালতে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। এতে তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজন সবিতার উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে সবিতা ও তার মা, ভাই বোনদেরকে আসামি করে বরিশাল ২ নং নির্বাহী আদালতে পৃথক দুটি মিথ্যা মামলা করে। আদালত দুটি মামলাই খারিজ করে দেয়।

অপরদিকে সবিতার করা ৩টি মামলার অভিযুক্তরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে সবিতা ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে একের পর এক হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। অভিযুক্তদের হুমকির প্রমান হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা ভিডিও ডকুমেন্টটিও সম্প্রতি আদালতের বারান্ধায় রাখা সবিতার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে থেকে অভিযুক্তরা চুরি করে নিয়ে গেছে বলে সবিতা অভিযোগ করেছেন। সবিতাকে আটকাতে দিনেশ সম্প্রতি গোপনে আরেকটি বিয়ে করার পায়তারা করে। এতেও বাধ সাধে সবিতা। সবিতার বাধার মুখে দিনেশের দ্বিতীয় বিয়ের প্রচেষ্টাও থমকে যায়। যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলা করায় এখন কোন ভাবে ঘরছাড়া সবিতাকে ঘরে তুলতে নারাজ সবিতার স্বামী ও শশুর পরিবার। তাই তারা সবিতাকে আটকাতে নানা ফন্দি ফিকির করছে। এরই ধারাবাহিকতায় দিনেশের পরিবার এখন সবিতাকে আটকাতে স্বামী দিনেশ চন্দ্র দাসকে গোপনে ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে তাকে অপহরন করা হয়েছে বলে এলাকায় প্রচারনা চালিয়ে সবিতা ও তার মা, ভাই, বোনদের নামে মিথ্যা অপহরন মামলা দেয়ার গোপন পরিকল্পনা করছে বলে সবিতা জানান। সবিতা দাবি করেন, তাদের এ গোপন পরিকল্পনার কথা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পরিবারেরই এক সদস্যের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন। ফলে এ ব্যাপারে নির্যাতিতা গৃহবধূ সবিতা রানী দাস সম্প্রতি গৌরনদী থানায় একটি সাধারন ডাইরী (জিডি) করেছেন।