যৌতুকের দাবিতে শরীরে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় স্বামী ও স্বজনরা – মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে গৃহবধু আছমা

মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া ॥ বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই যৌতুকের দাবি তুলে পাষান্ড স্বামী রেজাউল ও পরিবারবর্গ গৃহবধূ আছমা বেগমের ওপর চরম শারীরিক ও অমানুষিক নির্যাতন চালায়। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে এ নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে কথার কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে যৌতুক লোভী পাষান্ড স্বামী লাঠ দিয়ে বেদম পিটুনি দেয়। লাঠের পিটুনিতে আছমা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সময় যৌতুকের দাবিতে শরীরে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় স্বামী ও স্বজনরা - মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে গৃহবধু আছমাপাষান্ড স্বামী ও পরিবারবর্গ ঘরের মধ্যে আটক করে আছমার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মহুর্তের মধ্যে আছমার শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়। আছমার ডাকচিকৎকারে প্রতিবেশীরা ঘরের বেড়া ভেঙ্গে উদ্ধার করে  মুমুর্ষ অবস্থায় গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ হতভাগ্য গৃহবধুর হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর যন্ত্রনায় ছটফট করছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর আসামি ও তার লোকজন মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা ধরনের ভয়ভীতিসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সিমান্তবর্তী রমজানপুর ইউনিয়নের  চরআইকান্দি গ্রামে।

স্থানীয়, পুলিশ ও নির্যাতিতার পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, শরীয়াতপুর জেলার সখিপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের মো. ইউছুব গাজীর কন্যা আছমা বেগমের সাথে পাঁচ বছর পূর্বে পাশ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার চরআইকান্দি গ্রামের মৃত আ. লতিফ বেপারীর পুত্র রেজাউল বেপারীর সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়। নির্যাতিত গৃহ বধুর মা মরিয়ম বেগম বলেন, বিয়ের সময় মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে নগদ এক লাখ টাকাসহ অন্যান্য মালামাল দিয়ে আছমাকে বরযাত্রী করে তুলে দেই।

হাসপাতালের বেডে বসে কান্না জড়িত কন্ঠে মরিয়ম বেগম বলেন, বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই রেজাউল বেপারী আমার মেয়ে আছমার মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে আনার জন্য বলে। আমাদের পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রেজাউল প্রাই শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করত। আমার মেয়ে ও তার একমাত্র সন্তানের ভবিষৎতের কথা ভেবে এসব নির্যাতন মুখ বুঝে সয্য করেছে। সর্বশেষ বুধবার (৩১ অক্টোব্বর) রাত সাড়ে ৮ টার এ নিয়ে রেজাউল ও তার বোন সোনালী বেগম, শ্বাশুড়ি মনোয়ারার সাথে আছমার কথার কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ঘরের মধ্যে আটক করে দরজার লাঠ দিয়ে আছমাকে বেদম পিটুনি দেয়। পিটুনিতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে তারা সকলে মিলে আছমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

প্রতিবেশী সাহেরা বেগম, রাজিয়া বেগম, জসিম খানসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, আছমার ডাকচিৎকার শনে তারা ঘরের বেড়া ভেঙ্গে তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে গৌরনদী হাসপাতালে ভর্তি করি। তার অবস্থা অবনতি হলে পরের দিন বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বাবুল সাহা জানান, আছমার শরীরের শতকরা ৬০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কা জনক। এ ঘটনায় আট দিন আছমার মা  মরিয়ম বেগম বাদি হয়ে কালকিনি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন (যার নং ১৫ তারিখ ০৭-১১-১২ ইং)। মামলা দায়েরের পর  ছয় দিন অতিবাহিত হলে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি ও তার লোকজন মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা ধরনের ভয়ভীতিসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করছে। ফলে বাদি ও তার পরিবারবর্গ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ,কে,এম শাহীন মন্ডল বলেন, এজাহার ভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্ঠা চলছে।