সৈকত গুহ পিকলু – ডিজিটাল চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাম তার সৈকত গুহ পিকলু হলেও এলাকার লোক তাকে ডিজিটাল চেয়ারম্যান হিসেবেই বেশি চেনেন। এর কারন তিনি তার ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ, ভিজিডি’র চাল বিতরনসহ সকল কর্মকান্ডে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তথ্য প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দেয়া, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, গ্রাম আদালতের কার্যক্রম ও দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম ইউনিয়ন ভিত্তিক জনপ্রতিনিধির জবাবদিহিতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন। যে কারনে বেশ অল্প দিনেই তিনি পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি সকল কাজে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তরুন চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুকে এখন এলাকায় সবাই ডিজিটাল চেয়ারম্যান হিসেবেই চেনেন বা ডাকেন।

ফলশ্র“তিতে গত এক মাসের ব্যবধানে মাহিলাড়া ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন জনপ্রশাসন সচিব আব্দুস সোবাহান সিকদার, সাউথ ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ রুর‌্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ও প্রকল্পের সিনিয়র এ্যাডভাইজার ওয়াল্ডল্যান্ড রিসোর্স সাইন্স জাপানের প্রতিনিধি তশিফুমি সেরিজাওয়া, সাউথ ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ রুর‌্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের ইন্টরন্যাশনাল বিশেষজ্ঞ ড. এআরএম মমতাজউদ্দিন, বরিশালের নবাগত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ নুরুল আমিন, নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল আলম, বে-সরকারী মানবিক সংস্থা পদক্ষেপের চেয়ারম্যান মোঃ ছিদ্দিকুর রহমানসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বেসরকারী অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন। স্বল্প সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যন্ত এলাকায় তথ্য সেবা পৌঁছে দেয়া, সকল কাজে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার, দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম জনপ্রতিনিধির জবাবদিহিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় পরিদর্শনে আসা নেতৃবৃন্দরা পরিদর্শন বইতে স্ব-হস্তে লিখে মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তার ডিজিটাল কর্মকান্ডর ভূয়সি প্রশংসা করেন। পরিদর্শনে আসা জনপ্রশাসন সচিবের মতে, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। এধারা অব্যহত থাকলে অতিশীঘ্রই দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নকে দেশের মধ্যে প্রথম ডিজিটাল মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলস প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন।

মাহিলাড়া ইউনিয়নের জঙ্গলপট্টি গ্রামের আবুল কালাম বলেন, তথ্য সেবা হেইডা আবার কি, আগে বুঝিনায়। তয় এ্যাহন দেহি এহ্যানে সব আছে। মোর পোলায় বিদাশে থায়ে। এই কেন্দ্রে আইয়া অর ছবি দেহি আর মোরা অর লগে কথা কই। মোর পোলায়ও নাকি মোগো ছবি দেখতে পায়। এত সুযোগ-সুবিধা আগে কোতায় আছেলে”। মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবা পেয়ে আবুল কালাম উল্লেখিত কথাগুলো বলেছেন। একইভাবে জানালেন, ওই কেন্দ্রে তথ্য সেবা পাওয়া অনেকেই। সময়ের ব্যবধানে রাতারাতি বদলে গেছে মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর জীবন চিত্র। তারা এখন প্রতিদিন ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে নিচ্ছেন তথ্য প্রযুক্তির সেবা। এ তথ্য কেন্দ্রে মানুষের সবচেয়ে বেশি চাহিদা স্বাস্থ্য, কৃষি পরামর্শ, জমির পর্চা-খতিয়ান সংক্রান্ত তথ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরমসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি আবেদন ফরম নিতে আসেন অনেকেই। এছাড়া ই-মেইলে যোগাযোগ, ইন্টারনেটে কথা বলার পাশাপাশি প্রিয়জনের ছবি দেখতে পারছেন প্রবাসীদের স্বজনেরা। কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্ট প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ফটোকপি, পরীক্ষার ফলাফল জানা নাগরিক সনদ, জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন এবং মোবাইল ব্যাংকিং, স্ক্যানার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের সুবিধা পাচ্ছেন এ তথ্য সেবা কেন্দ্রে। তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন সেবা নিয়ে থাকেন। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ইউনিয়নের মানুষকে সেবা দেয়া হয়। তাছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী ল্যাপটপ নিয়ে পরিষদের বাহিরে গিয়েও মানুষের সেবা দেয়া হয়।

মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, ইউনিয়নবাসীকে সাথে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমি সামান্য একজন কর্মী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমি মাহিলাড়া ইউনিয়নকে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম একটি ডিজিটাল মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সৈকত গুহ পিকলু। তার পিতা গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিয়া দমন গুহ।