খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দিতে গৌরনদীতে পুলিশের সাথে আ’লীগের নিরাপত্তা পাহারা

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ আজ সোমবার বিকেল তিনটায় বরিশাল মহানগরীর বেলস্ পার্ক মাঠে অনুষ্ঠেয় জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল রবিবার ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে বরিশালে পৌঁছেছেন। বরিশাল সার্কিট হাউসে তিনি রাত যাপন করবেন। আজ সোমবার বিকেলে নগরীর বেলস্ পার্ক ময়দানে জনসভা শেষে তিনি সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১০ সনের ১২ মে বরিশাল সফর করেছিলেন। অপরদিকে খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে মহাসড়কের গুরুতপূর্ণ স্থানে ব্যাপক আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। একই সাথে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে প্রশাসনের সাথে নিরাপত্তা পাহারা বসিয়েছে আ’লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই প্রথমবারের মতো বিরোধী দলীয় নেত্রীকে নিরাপত্তা দিতে সরকার দলীয় নেতাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্ব মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক আনিসুর রহমান আনিস জানান, আ’লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নির্দেশে তিনিসহ যুব ও ছাত্রলীগের দু’শতাধিক নেতা-কর্মীরা বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে ইচলাদী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কে গত তিনদিন থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে পাহারা বসিয়েছেন। একটি বিশ্বস্ত সূত্রের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা নিজেরাই তোরণ, ফেস্টুনে অগ্নিসংযোগ করে আ’লীগের ঘারে দোষ চাপাতে পারেন। এছাড়াও তাদের বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাই তারা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নির্দেশে স্ব-স্ব এলাকায় নিরাপত্তা পাহারা বসিয়েছেন। অথচ ২০০১ সনে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরিশাল সফরের সময় মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে বসে গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছিলো তৎকালীন সরকার দলীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।

এদিকে খালেদা জিয়ার জনসভাকে ঘিরে গতকাল রবিবার সার্কিট হাউজে সংবাদ সম্মেলন করেছে ১৮দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।

সরেজমিনে ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে বিএনপির জনসভা উপলক্ষ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের মাওয়া থেকে বরিশাল শহর পর্যন্ত মহাসড়কের দু’পার্শ্বে প্রায় সহস্রাধীক তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও বং বেরংঙ্গের পোষ্টার ঝুলিয়ে পুরো এলাকাকে দলীয় নেতৃবৃন্দরা নববধূর সাজে সাজিয়েছে। অপরদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সফর উপলক্ষ্যে নগরীর সড়ক সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সিটি করর্পোরেশন। ইতোমধ্যে একাধিক সড়ক ও ফুটপাত পুনঃসংস্কার করা হয়েছে। দলমতের উর্ধ্বে থেকে সিটি করর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক শওকত হোসেন হিরন এ উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। সিটি মেয়র বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে শুধু নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ডই নয়, সার্বিক নিরাপত্তার ও সমাবেশস্থলের মঞ্চসহ সর্বাত্মক তদারকি করা হচ্ছে। রবিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান প্রধান সড়কে বিএনপির চেয়ারর্পাসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশাল বিশাল ছবির পাশাপাশি ব্যানার, তোরণ ও বিলবোর্ড শোভা পাচ্ছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার মহাসড়কে নির্মান করা হয়েছে প্রায় চার শতাধিক তোরণ। এই পথেই বেগম খালেদা জিয়া বরিশাল নগরীতে প্রবেশ করেছেন। এখন পর্যন্ত সাজসজ্জা কিংবা বিএনপির কোনো আয়োজনে শাসক দলের পক্ষ থেকে কোন ধরনের বাঁধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি।

তবে গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জ ও বাবুগঞ্জসহ যেসব এলাকায় বিরোধী দলীয় নেত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে তার সবগুলোই বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে নির্বাচনী আমেজ: সাংগঠনিক সফরে বরিশালের জনসভায় যোগদান করার জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল রবিবার সড়ক পথে বরিশালে এসেছেন। খালেদা জিয়ার শতাধিক গাড়ি বহর সম্পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে বরিশালে পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর ফয়সালা না হলেও তিন দফা তারিখ পরিবর্তনের পর বিরোধীদলীয় নেতার এ সফরকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে। বেগম জিয়াকে একনজর দেখা ও তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গতকাল রবিবার দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন রং বেরং-এর ফেস্টুন, পোষ্টার ও ব্যানার নিয়ে হাজার-হাজার দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভুরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে শুরু করে গুরুতপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করেন। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর ভুরঘাটায় পৌছলে জেলা উত্তর বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আকন কুদ্দুসুর রহমানের নেতৃত্বে সহস্রাধীক নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন, পোষ্টার, ব্যানার ও দলের নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ হাতে নিয়ে মহাসড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান।

একইভাবে মহাসড়কের বিভিন্ন বাসষ্ট্যান্ড ও গুরুতপূর্ণ এলাকায় বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক এম. জহির উদ্দিন স্বপনের সমর্থকেরা, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা দলের সভাপতি শরীফ হাফিজুর রহমান টিপু, বিএনপি নেতা এস.এম মনির-উজ জামান মনির, লোকমান হোসেন খান, বদিউজ্জামান মিন্টুর সমর্থকেরা বিভিন্ন শ্লোগানসহ বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান। হাজারো নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভালোবাসায় এভাবেই সিক্ত হতে হতে নির্বাচনী আবহেই বরিশাল শহরের সার্কিট হাউজে বেগম জিয়ার গাড়ি বহর এসে পৌঁছেছে।