মাদকের পাইকারি বাজার গৌরনদী!

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকা ও পাড়া মহল্লায় মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। ফলে ক্রমেই এসব এলাকা মাদকের পাইকারি বাজারে পরিণত হয়েছে। ইতিপূর্বে গৌরনদীর কসবা থেকে পাইকারী মাদক দ্রব্য ক্রয় করে নৌ-পথে স্পীড বোটযোগে বরিশালে নেয়ার সময় পুলিশ প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য আটক করেছিলো। এছাড়াও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকের চালান আটক করলেও তার পরিমাণ অতিসামান্য। প্রায় প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান এসব উপজেলায় প্রবেশ করছে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে।

দেশের উত্তর ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকার নৈশকোচ ও ট্রাকে করে কৌশলে এসব উপজেলায় মাদক প্রবেশ করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন এমনকি ভারত থেকে বিভিন্ন নেশার ও যৌণ উত্তেজক ট্যাবলেট আমদানি করে এলাকার বিভিন্ন স্থানে মজুত করে রাখে। পরে উপজেলার বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছে তা কৌশলে পৌঁছে দেয়া হয়। এসব উপজেলায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় ইতিপূর্বে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। মাদক ব্যবসার প্রসারে ও সহজলভ্যতার কারণে এলাকার যুব ও তরুন সমাজ এমনকি স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ক্রমান্বয়েই বিপথগামী হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এক সময় গৌরনদীর কসবা নামক এলাকায় মাদক ব্যবসার ডিপো ছিলো। পরবর্তীতে তা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তার লাভ করে।

গৌরনদীর কটকস্থল, নীলখোলা, ধানডোবা, রাজাপুর, মাহিলাড়া, হাজ্বীপাড়া, পিঙ্গলাকাঠী, আগরপুর মিশুকষ্ঠ্যান্ড, আনন্দপুর, চাঁদশী, আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট ব্রীজ, রাজিহার এলাকাসহ গৌরনদী পৌর এলাকার কসবা, দক্ষিণ বিজয়পুর, টরকী, দক্ষিণ ও উত্তর পালরদী, উত্তর বিজয়পুর, লীলা সিনেমা হল এলাকায় রয়েছে মাদকের অসংখ্য স্পট। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু সদস্যর ছত্রছায়ায় এ অঞ্চলে মাদক ব্যবসার প্রসার বেড়েই চলেছে। এসব মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে এলাকার অনেক মহিলা সদস্যরাও। বিভিন্ন সময়ে নারী মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারও করা হয়েছিলো। অভিযোগে আরো জানা গেছে, মাদক ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। অনেক ক্ষেত্রে চাঁপের মুখে সামান্য মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হলেও পরবর্তীতে এ অভিযান আর বেশি দিন চলমান থাকেনা। নামপ্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাদক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের মাসোহারা দিয়েই তারা এ ব্যবসা চালাচ্ছে। তারা আরো জানান, এলাকার অনেক প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। কোন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলেই প্রভাবশালী ওই গ্রুপটি তাদের ছাড়িয়ে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে।

অপরদিকে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করা হলেও আইনের ফাঁক ফোকর পেড়িয়ে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে পূর্ণরায় এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরায় প্রশাসনের অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার ফলপ্রসূ হয়না। এ ক্ষেত্রে আইনেরও তেমন কোন প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন এ ব্যবসা মহামারি আকারে ধারন করছে।

মাদকের পাইকারি বাজার গৌরনদী!