গ্রামের মানুষের কাছে গৌরনদীর আইউব আলী কমন্ডারের গাজীর গানের দলের কদর দিন দিন বাড়ছে

মোঃ জামাল উদ্দিন ॥ গ্রামের মানুষের কাছে গৌরনদীর আইউব আলী কমন্ডারের গাজীর গানের দলের কদর দিন দিন বেড়েই চলছে। তার গানের দলে নারী অভিনেত্রী না থাকলেও নারী চরিত্রে পুরুষরা অভিনয় করে দর্শকদের আকৃষ্ট করছে। তাদের অভিনয় দেখে কখনো দর্শকরা হাসছেন, কখনো বা কেঁদে চোখের পানিতে বুক ভাসাছেন।

আমাদের গ্রাম বাংলার প্রাচীন লোকজ সংস্কৃতি গাজীর-কালূর গান কালের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় কবি গান, পালা গান, জারী গানের কদর থাকলেও এখন আর এ সবের কদর নেই। সময়ের ব্যবধানে দেশী- বিদেশী অপসংস্কৃতির ছোয়ায় পাল্টে গেছে সবকিছু। তার পরেও নানা প্রতিকুলতার মাঝে টিকে আছে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী গাজীর গান। উপজেলার পিংগলাকাঠী গ্রামের আইউব আলী কমান্ডার প্রায় ২০ বছর আগে গাজী –কালুর গানের দল তৈরী করেন। তাকে সহয়তায় এগিয়ে আসেন গাজী- কালুর আরেক ভক্ত কালনা গ্রামের এস্কান্দার মল্লিক। তাদের দলে মোট সদস্য সংখ্যা ২৪ জন, তবে কোন নারী সদস্য নেই। পুরুষরা নারী সেজে নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। গত রবিবার রাতে গাজীর গানের আসর বসেছিল গৌরনদীর চরদিয়াশুর গ্রামের শাজাহান বেপারীর বড়ীতে। জানা গেছে , নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে  বসত বাড়ী রক্ষার জন্য শাহজাহান তার বাড়ীতে গাজীর গানের আসর বসানোর মানত করে সুফল পেয়েছেন। তাই স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে তিনি বাড়ীতে গাজীর গানের আসর বসান। ওই অনুষ্ঠান দেখার জন্য দুরদুরান্তের শত শত নারী পুরুষের সমাগম হয়। সেখানে বসে কথা হয় দলনেতা আইউব আলী কমান্ডারের সাথে। তিনি জানান, গ্রামের মানুষের কাছে গাজীর গানের কদর আগের চেয়ে বেড়েছে। শুকনার দিনে প্রতিদিনই বায়না থাকে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এখনো তার দলের কদর বেশী বলে তিনি দাবী করেন। আর্থিক সংকটের কারণে যুগের সাথে তাল মেলাতে না পেরে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে দল চালাচ্ছেন আইউব আলী। অভিনেতা ,অভিনেত্রী, বাঘ-ভাল্লুক,হাতীর পোষাক কেনা হচ্ছেনা টাকার অভাবে। দিন দিন খরচ বাড়ছে তাই বায়নার টাকায় দল ঠিক রাখা যায়না। গরীব লোকজন গাজী কালুর গানের বেশী ভক্ত। ইচ্ছা থাকা সত্যেও তারা বেশী টাকা দিতে পারেন না। এ কারণে যারা অভিনয় করছেন তারা নিজের জন্য নয়, পরের জন্য বিনে পয়সায় কাজ করছেন বলে জানালেন,প্রবীন দলনেতা এসকেন্দার মল্লিক (৬৫)। নারী চরিত্রে পুরুষরা অভিনয় করছে এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটা গাজীর গানের নিয়ম। ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলে এখানে নারীদের দিয়ে অভিনয় করানো নিষেধ। তিনি আরো জানান, গ্রামের লোজন বিভিন্ন ধরনের বিপদ আপদ, রোগ মুক্তি ও মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার আশায় গাজীর গানের মানত করেন। নিয়ত সহি হলে তাদের বাসনা পূর্ণ হয়। এ ধরনের বহু নজির আছে বলে তিনি জানান। গাজীর সিন্নীতে লোকজন আর্থিক সহাতা প্রদান করে থাকেন। প্রতি পূর্ণিমার রাতে গাজী –কালুর সিন্নী হয়। এছাড়া বছরে একবার দলপতির বাড়ীতে বড় আকারে অনুষ্ঠান হয়।

গ্রামের মানুষের কাছে গৌরনদীর আইউব আলী কমন্ডারের গাজীর গানের দলের কদর দিন দিন বাড়ছে