ঝালকাঠির সাবেক জেলা রেজিষ্ট্র্রার নূরুল হকের নারী কেলেংকারী ফাঁস – ঘুষ বানিজ্যে কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়!

ঝালকাঠি সংবাদদাতা ॥ ঝালকাঠি ও বরগুনার সাবেক জেলা রেজিষ্ট্রার কাজী নূরুল হকের নারী কেলেংকারী ফাঁসের পর এবার কোটি কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে রেজিষ্ট্রিবিহীন এক বৌ বিচার চেয়ে এ সকল অবৈধ সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। বরিশাল, মঠবাড়িয়া, কাউখালীসহ রাজধানী ঢাকায় রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি ও মার্কেট। দূর্নীতি দমন কমিশনের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে এসবের বেশীর ভাগই করেছেন স্ত্রী ও সন্তানদের নামে। সুচতুর ধূরন্ধর কাজী নূরুল হক বলেছেন তার নিজের নামে কিছুই নেই। তিনি দু’বার হজ্জ্ব করেছেন, স্ত্রীদেরকেও হজ্জ্ব করিয়েছেন। অবৈধ কোন সম্পদ তার নেই। এদিকে ঝালকাঠি নাগরিক ফোরাম পরিচালিত পারিবারিক বিরোধ নিস্পত্তি সেল ও ব্লাষ্ট বরিশাল বরাবরে রেজিস্ট্রিবিহীন শিউলি নামের এক স্ত্রী নুরুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে তার নারী কেলেংকারী ও অবৈধ সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।  

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার থানা পাড়া এলাকার বাসিন্ধা কাজী নূরুল হক। ১০ ভাই ২ বোনের মধ্যে নুরুল হক ভাইদের মধে বড়। ১৯৮৩ সালে ইন্দ্রেরহাট জিয়ানগর থেকে চাকরীতে যোগদান করে অর্থের জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০১১ সালের ৪ মে সদর সাব রেজিষ্টার থেকে অর্থের বিনিময়ে তিনি ঝালকাঠি জেলা রেজিষ্ট্রার ও ৬ মে বরগুনা জেলা রেজিষ্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পন। সূত্র জানায়, নারী কেলেংকারী ও অনৈতিক কাজের অভিযোগে তাকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু সুচতুর নুরুল হক এ থেকে রাতারাতি তিনি কোটিপতি বনে যান।

জানাগেছে, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া নিজ এলাকায় ক্রয় করেছেন প্রচুর পরিমানে জমি। মঠবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার তিনটি বাড়ি। একটিতে রয়েছে ব্যাংক ভাড়া। সেখানে তিনি মায়ের নামে গড়ে তুলছেন মজিদা মোজাম্মেল মেমোরিয়াল হাসপাতাল। সেখানে মসজিদসহ মাদ্রাসাও রয়েছে। এছাড়া বরিশাল শহরের বৈধ্যপাড়ায় ‘নির্ঝর’ নামে আড়াইতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি রয়েছে তার। চকবাজার ফলপট্টি গির্জামহল্লার জোহরা মার্কেটটিও তার কেনা। ওখানে ২৫টি ষ্টল রয়েছে তার নিজস্ব। রুপাতলীতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জমি। বড় বৌ নূর জাহানের নামে রয়েছে বেশী সম্পদ। এছাড়া কাজী নূরুল হকের রাজধানী ঢাকার জুরাইনে রয়েছে ৪টি প্লট। এর মধ্যে ২০১০ সালে একটিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে ৭ তলার অনুমতি নিয়ে অনুমতিবিহীন ১০ তলার কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন। এর ২য় তলায় থাকেন কাজীর প্রথম ঘরের সন্তান আফরোজা জাহান রনি।

অন্যতিকে পরকীয়ার মাধ্যমে বিয়ে করা দ্বিতীয় স্ত্রী নাসিমা বেগমের নামে রয়েছে কাউখালী সিএন্ডবি রোড কচুকাঠিতে ১২ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন একটি বাড়ি। ওখানে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন বেশ কিছু নাল জমিও। নিজ নামে লাইসেন্সকৃত পিস্তল রয়েছে একটি।

যেভাবে নাসিমার সাথে পরিচয় হয়: নাসিমার পিতা কাউখালী উপজেলা পরিষদের পেছনের বাড়ির সুপারী ব্যবসায়ী শেখ মান্নান জমি সংক্রান্ত কাজে নুরুল হকের কাছে যান। সেখানে গেলে কথা হয় নুরুল হকের সাথে। এক পর্যায়ে নুরুল হক মান্নানের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান সুদর্শন নাসিমাকে। কুনজর পড়ে নাসিমার দিকে। নাসিমা তখন এক কন্যা সন্তানের ( নিপা) মা। তখন নুরুল হক ফুঁসলাতে শুরু করে নাসিমাকে। নাসিমার বিয়ে হয়েছিল বড় ভাই মিজানের শ্যালক পিরোজপুরের এক ব্যবসায়ীর সাথে। নুরুল হক ঐ বাসায় প্রায়ই যাতায়াতের কারনে স্বামীর সাথে বিরোধ বাঁধে নাসিমার। আর এ বিরোধ নিস্পত্তিতে যেত কাজী নুরুল হক। এক পর্যায়ে পারিবারিক বিরোধ তুঙ্গে ওঠলে তিনি নাসিমাকে নিয়ে বরিশাল আলী ইন্টারন্যাশনাল হোটেলসহ ঝালকাঠি হালিমা বোডিংয়ে একাধিক রাত্রিযাপন করেন বলে সূত্রটি জানায়। পরবর্তীতে নাসিমার সাথে তার স্বামীর দূরত্ব সৃষ্টি হলে তালাক হয় নাসিমা। সুচতুর কাজী নুরুল হক এক পর্যায়ে ১৯৯১ সালে মহৎ ব্যক্তিরুপ ধারন করে বিয়ে করেন নাসিমাকে। ব্লাস্ট বরিশালের সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান জানায়, নুরুল হককে আমরা বারবার নোটিশ করলে গত ২০ নভেম্বর তিনি তার আইনজীবী গোলাম মাসউদ বাবলুকে নিয়ে উপস্থিত হন এবং সমস্ত ঘটনা মিথ্যে বলে দাবী করেন। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি।

এ ব্যাপরে কাজী নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন আমার বিরুদ্ধে চাকরীকালীন কিছু লোক মিথ্যা ঘটনারটিয়ে আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে।