গৌরনদীতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ গুলি বর্ষণ ও বোমাবাজি – পুলিশ বহনকারী গাড়ি ভাংচুর – একজন নিহত

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ অভ্যন্তরীন কোন্দলের জেরধরে বরিশালের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সোমবার রাতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একাধিক গুলি বর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরন হয়েছে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত রুমান ফকির নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। উভয় পক্ষের আহত কমপক্ষে ১৫ জনকে বরিশাল শেবাচিমসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন সময় চারটি মটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। অপরদিকে নিহত রুমানের মা শামীমা বেগমকে সোমবার রাতভর থানায় আটক করে রাখার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কসবা নামক এলাকায় গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেট দিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এ সময় পুলিশ বহনকারী একটি যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর গৌরনদীতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ গুলি বর্ষণ ও বোমাবাজি - পুলিশ বহনকারী গাড়ি ভাংচুর - একজন নিহতকরা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, নিহতের পরিবার ও আহত সুত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীন কোন্দলের জেরধরে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভুঁইয়া ও সহসভাপতি লুৎফর রহমান দিপের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিলো। নিহত রুমান লুৎফর গ্রুপের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পূর্ব বিরোধের জেরধরে লুৎফর গ্রুপের সক্রিয় সদস্য, পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুবেল সরদার ও তার সহযোগীরা সোমবার সন্ধ্যায় সান্টু গ্রুপের সমর্থক রবিউল খানকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। ভাগ্যক্রমে রবিউল প্রাণে রক্ষা পায়। এ ঘটনার জেরধরে ওইদিন রাত দশটার দিকে রবিউল ও তার সহযোগীরা গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে বসে রুবেল ও তার লোকজনদের ধাওয়া করে। এসময় রুবেল ও তার লোকজনে একাধিক বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে গুলি বর্ষণ করতে করতে পাল্টা ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংষর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। আশংকাজনক অবস্থায় ছাত্রলীগ কর্মী রুমান ফকির (২৪), ফেরদাউস তালুকদার (২৫) ও হিরা বেপারীকে (২৩) বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রুমানকে ওইদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রুমান মারা যায়। নিহত ছাত্রলীগ কর্মী রুমানের বাড়ি পৌর এলাকার বড় কসবা মহল্লায়। সে ওই মহল্লার মৃত মিজান ফকিরের বড় পুত্র। সংঘর্ষ চলাকালীন গুলি ও বোমার বিকট শব্দে গোটা বাসষ্ট্যান্ড এলাকা প্রকম্পিত হয়ে হঠে। এ সময় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা আতংঙ্কে দিগবিদ্বিগ ছুটাছুটি করতে থাকে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

নিহত রুমানের মা শামীমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, সোমবার রাতে রুমানকে দেখতে আমি মটরসাইকেলযোগে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। পথিমধ্যে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে পৌঁছলে পুলিশ আমাকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যায়। রাতভর আমাকে থানায় রাখা হয়। পরবর্তীতে মামলা করার কথা বলে থানার ওসি আমার সাথে থাকা নগদ এক হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী টরকী বাসষ্ট্যান্ড ও নিহত রুমানের বাড়ির সম্মুখে কসবা এলাকায় গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেট দিয়ে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধরা বরিশাল থেকে ঢাকাগামী পুলিশ বহনকারী ঈশা পরিবহনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। পরে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

নিহতের মা শামীমা বেগমের অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম জানান, এ ঘটনায় শামীমা বেগম বাদি হয়ে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভুঁইয়া, পৌর ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক মামুন মিয়া, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সাহাবুল খানসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ওইদিন রাতেই এজাহারভুক্ত আসামি জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভুঁইয়া ও সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার ভোরে আদালতে প্রেরন করেছে।