ভেস্তে গেল অশোক গুপ্তের বিএনপিতে যোগদান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সব কিছু ঠিকঠাক করাই ছিল। গতরাত সাড়ে ৮ টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় গিয়ে অশোক সেন গুপ্ত জাপা ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিবেন। সোমবার রাতেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় গিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে গৌরনদী- আগৈলঝাড়ার সকল জাপা নেতা-কর্মীদের নিয়ে অশোক গুপ্ত যথা রীতি হাজির হয়েছিলেন। কিন্ত দুপুরের পর থেকেই বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী উত্তর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান সহ মনোনয়ন প্রত্যাশী আরো একাধিক নেতা এ যোগদানের অন্তরায় হয়ে দাড়ান। আকন কুদ্দুস জানান-দুপুরে তাকে বেগম জিয়ার অফিস থেকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। তিনি যোগদান অনুষ্টানে যাবেন না ইঙ্গিত দিয়ে বলেন ফুল দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি আর পোস্টার করে নির্বাচনের আগে রাজনীতির ফায়দা হাসিল নেতা-কর্মীরা মেনে নিবে না। শেষ পর্যন্ত সেই ফুল হাতে কাঙ্খিত ছবিটি অশোক গুপ্তর তোলা হয়নি। শুধু দেখা করেছেন বিএনপি চেয়ার পার্সনের সাথে। সৌজন্য সাক্ষাত বলে বিষয়টি বিএনপি ও জাপার পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া হলেও মুলত অশোক গুপ্ত আনুষ্টানিক যোগদান করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন বলে শেষ খবরে জানা গেছে।

বিগত সংসদ নির্বাচনে সুনীল গুপ্ত ও তার ছেলে অশোক গুপ্ত বরিশাল-১ গৌরনদী-আগৈলঝাড়া আসন থেকে মনোনয়ন দাখিল করেন। সুনীল গুপ্ত’র ছেলে অশোক গুপ্ত এরশাদের পার্টি থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে লাঙ্গল প্রতিক বরাদ্দ চেয়েছিলেন। কিন্ত পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আওয়ামী লীগের সাথে মহাজোট করার পর বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল জেলার দু’টি আসন রেখে বাকী সবগুলোতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। নির্বাচনের মাঠ থেকে তখনই সুনীল গুপ্ত সরে দাড়ান। তার ছেলে লাঙ্গল প্রতিক না পাওয়ায় পুরো পরিবার জাপার উপর ক্ষুদ্ধ হয়। পরের বছর সুনীল গুপ্ত মারা যান। ছেলে অশোক গুপ্ত দলীয় কোন কর্মকান্ডে তেমন সম্পৃক্ত ছিলেন না। অতি সম্প্রতি এরশাদের জাপা একক নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে দেড়’শ আসনে  প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলে  তাতে বরিশাল -১ আসন থেকে অশোক গুপ্তর নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা করা হয়। কিন্ত মান-অভিমানে জাপা ছেড়ে অশোক গুপ্ত বিএনপিতে যোগদানের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। সোমবার রাত সাড়ে ৮ টায় অশোক গুপ্তর বিএনপিতে যোগদানের খবরটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিএনপি নেতাদের জানানো হয়। কিন্ত সেখানকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩ নেতা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। যোগদান অনুষ্টানে আমন্ত্রিত অতিথি বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুস জানান- ফুলেড় তোড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নেতা হওয়া যাবে না। মাঠের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে হলে মাঠ থেকেই নেতা হয়ে আসতে হবে। তৃনমুলে যারা কাজ করেছেন তাদেরই নেত্রী মূল্যায়ন করবে। আমি অবশ্যই স্বাগত জানাই অশোক গুপ্তকে। শুধু অশোক গুপ্ত নয় বিএনপিতে যে কেউ যোগদান করতে পারে। কিন্ত পোস্টার বিক্রি করে সস্তায় নেতা হওয়া যাবে না। দলের অনেক পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা রয়েছে।

বরিশাল-১ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন জানান- আমি অশোক গুপ্তকে স্বাগত জানাই। তবে গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় সুনীল গুপ্তর একটি ভাল অবস্থান ছিল। কিন্ত রাজনীতিতে অশোক গুপ্তর তেমন কোন অবস্থান নেই। আর গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় জাপার তেমন কোন নেতা-কর্মী নেই।

অশোক গুপ্ত’র যোগদানের খবরে অসন্তষ্ঠ হয়েছেন বরিশাল-১ এর গত নির্বাচনের দলীয় মনোনয় প্রাপ্ত পরাজিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। ব

র্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তালুকদার মোহম্দ ইউনুস জানান- ভাল খবর, বাবু সুনীল গুপ্ত এক সময় প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন পরে জাতীয়তাবাদী দল হয়ে এরশাদের পার্টি করেছেন। ছেলে বিএনপিতে যোগদান করলে একজন সম্ভাব্য প্রার্থী বাড়লো বলে আমি মনে করছি। সম্ভাব্য ৩-৪ জন প্রার্থীর মধ্যে কাকে শক্তিশালী মনে করেন বলে প্রশ্ন করা হলে তালুকদার মোহম্মদ ইউনুস বলেন, যিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়বেন আমার কাছে তিনিই শক্তিশালী প্রার্থী। দলের বাইরে ব্যক্তি হিসাবে অশোক গুপ্ত কেন কেউ কোন শক্তিশালী প্রার্থী বলে আমি মনে করি না।