এক সুপারের কাছে জিম্মি দুই মাদ্রাসা! অবৈধ অর্থ যোগান দিতে সেল্টার দিচ্ছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ নানা অপকর্মে অভিযুক্ত বরিশাল সোমের্তবান মহিলা মাদ্রাসার সুপার মাওঃ রফিকুল ইসলাম একই সময় দুটি মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্ব পালন করে আত্মসাৎ করছেন সরাকারি টাকা। ধোকা দিচ্ছেন নগরীর ঐতিহ্যবাহি লেচুশাহ আলিয়া মাদ্রসার শত-শত শিক্ষার্থিদের। ম্যানেজিং কমিটির সাধারন সম্পাদক মাহাবুব আলমকে ম্যানেজ করেই চলছে তার এই অভিনব দূর্নীতি। লেচুশাহ মাদ্রাসাকে সরকারি করে দেয়ার নাম করে ২০০৫সাল থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ৭লক্ষ টাকা আতœসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া সোমের্তবান মহিলা মাদ্রসায় তার দূর্নীতির কীর্তিকলাপ প্রকাশ হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছে মাদ্রাসাটির শোভাকাঙ্খিরা। অনুসন্ধানে জানাযায়, দূর্নীতিবাজ এই সুপার সোমের্তবান মাদ্রাসাটিতে তার স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম, মেয়ে জামাই মাওঃ মাসুম বিল্লাহ, বেয়াই নজরুল ইসলাম, জামাতার বোন তাহেরা, ভাগীনি কারী আফজাল, ধর্ম বোন নাসিমুন নেছাকে নিয়োগ দিয়েছেন ক্ষমাতার অপব্যাবহার করে, অবৈধ প্রক্রিয়ায়। পরবর্তীতে সহঃসুপার সহ মাদ্রসাটির ৫জন শিক্ষককে প্রভাবশালি এক ক্ষমতা ধর নেতাকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে অবৈধভাবে চাকুরিচ্যুত করেন। ফলে মাদ্রাসাটিকে বর্তমানে সমোর্তবান মাদ্রাসার পরিবর্তে অনেকেই রফিক মাদ্রাসা বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

লেচুশাহ মাদ্রসা সূত্র জানায়, মাওঃ রফিকের শকুনি নজর লেচুশাহ মাদ্রাসায় পরার কারনে সেই মাদ্রাসাটিরও বেহাল দশা হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তার শ্যালকের স্ত্রী সহ ৩/৪জন আত্মীয়কে বিপুল অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। তাছাড়া মাদ্রাসাটির গুরুত্বপূর্ন পদ হাফেজখানার প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গীর্জা মহল্লা রোডের জামে কসাই মসজিদ থেকে চুরির অপরাধে চাকুরিচ্যুত হাফেজ আবুল কালাম আজাদকে।

সূত্র জানায়, এ যাবৎ দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মাওঃ রফিক প্রতি বছর বিভিন্ন নামে রেজিস্টেশন করা ছাড়াও ছাত্রীদেও নাম পরিবর্তন করে ভুয়া পরীক্ষার ব্যাবস্থা করে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ-লক্ষ টাকা। এসব মেয়েদের ভুয়া কাগজ-পত্র সত্যায়িতও করেন তিনি। রুকাইয়া আক্তার নামের মমতাজ মজিদুন্নেছা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর নাম পরিবর্তন কওে লাবনি আক্তার খুশি পরিচয়ে পরীক্ষা দেওয়ানোর ঘটনা ঘটিয়েছেন গত ২০১২সালে। এমন অসংখ্য মেয়েকে ভুয়া পরিচয়ে মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করানোর বিষয় সহ নানা দূর্নীতি ও অপকর্মগুলো জানাজানি ঘটলে মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন নেগাবান এর প্রতিবাদ করেন। কিন্তু অলৌকিক ক্ষমতায় নেগাবানকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেয় সুপার মাওঃ রফিক। ২০০৮সনের ফেব্রুয়ারি মাসে ফাইলপত্র সরানোর সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আ.ন.ম আহম্মদ আলী তাকে পুলিশেও সোপর্দ করেছিলেন। একাধিকবার মাদ্রসার এক শিক্ষার্থীর শ্লীতাহানীর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা (মামলা নং-১০৫/২০১২) সহ মানববন্ধন করেছে সোমের্তবান মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ঠরা। এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সোমের্তবান মহিলা মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর শ্লীতাহানির অভিযোগে মাওঃ রফিক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমানকে স্থানীয় জনতা পুলিশের সামনেই ধাওয়ার ঘটনা ঘটায়। সর্বশেষ এই বিতর্কিত সুপারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসাটির আয়া কহিনূর বেগমকে কু-প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ ওঠে। তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ১০অক্টোবর কহিনূর বেগমকে চাকুরিচ্যুত করা হলে বাধ্য হয়ে অসহায় কহিনূর বরিশাল সদর সিনিয়র সহকারি জজ মোঃ আল-আমিনের আদালতে গত ২৯নভেম্বও চাকুরি ফিরে পেতে মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় মাদ্রসাটির সুপার ও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান সহ ২৫জনকে আসামি করা হয়। এর আগে ২৮শে মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কহিনূর মামলা দায়ের করেছিলেন রফিকুল ইসলামের কু-প্রস্তাবের হাত থেকে রেহেই পেতে। লেচুশাহ মাদ্রসার প্রতিটি শিক্ষকরাই মাদ্রাসাটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির এহেন বিতর্কিত কর্মকান্ডের প্রতিবাদ ভেতরে ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে দীর্ঘদিন যাবৎ। তাদের প্রত্যেকেরই প্রশ্ন তবে কি এসব বিতর্কিত লোকদের আতœসাৎকৃত অর্থ লুফে নেয়ার জন্যই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহাবুবু যাদেও ইচ্ছেমাফিক কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রসা সুপার মাওঃ রফিকুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পরে জানান, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লেচুশাহ মাদ্রসা এবং সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সোমের্তবান মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। একই সময়ে কিভাবে দুইটি মাদ্রসার সুপারের দায়িত্ব পালন করেন এমন প্রশ্নে ইতস্তত হয়ে গিয়ে এর কোন সদুত্তর দিতে পারেনি মাওঃ রফিক।

এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাধারন সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান জানান, রফিক মাওলানাকে সাময়িক ভাবে দেখাশুনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারন আগের প্রিন্সিপাল বৃদ্ধ হওয়ার কারনে তিনি অবসর গ্রহন করেছেন। তার বিষয়ে ঝাড়– মিছিল সহ নানা অপকর্মেও বিষয়ে তিনি জানান, সেগুলো পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। অর্থ আতœসাতের বিষয়ে জানান, তিনি আতœসাতের সাথে সম্পৃক্ত নয়।