বানারীপাড়ায় বালু উত্তোলনের কারনে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে তীব্ররূপ

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া ॥ বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদী থেকে অনিয়মান্ত্রিকভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে নদীর ভাঙন তীব্ররূপ ধারণ করেছে। অনিয়মান্ত্রিকভাবে প্রতিদিন কয়েক হাজার ঘনফুট বালু উঠানো হলেও এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। সন্ধ্যা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলনের কারনে ইতিমধ্যে বানারীপাড়ার বিস্তীর্ণ জনপদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত ভাঙনের কারনে নদী তার গতিপ্রকৃতি হারিয়ে ফেলেছে।

জানাগেছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বালু মহালের একসনা লিজ দেয়া হয়। লিজ দেওয়ার পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী,ভূমি মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির নেতৃত্বে  বালু মহালের সার্ভে রির্পোট তৈরী করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে বেছে বেছে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলিত স্থানগুলো বালুমহালের আওতায় আনা হল। অভিযোগ রয়েছে আর্থিক লেনদেনের কারনে সরেজমিনে না এসেই বালুমহালের সার্ভে রির্পোট তৈরী করা হয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছে এখানকার বালু উত্তোলনকারীরা। লিজ দেয়া হোক কিংবা না হোক সারা বছর রাত-দিন তারা সন্ধ্যা নদী থেকে ৫/৬ টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অনিয়মান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলন করে থাকেন। ফলে ইতিমধ্যে উপজেলার জম্বদ্বীপ, ব্রাক্ষ্মনকাঠি, কাজলাহার,ইলুহার,বাইশারী, বৌশেরহাট,দক্ষিন নাজিরপুর, উত্তর নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, কালিরবাজার, মসজিদবাড়ি, জিরারকাঠি, বাংলাবাজার, উত্তরকুল ও চাউলাকাঠি সহ বিভিন্ন এলাকার বসতবাড়ি,শত শত একর ফসলি জমি,রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট,হাট-বাজার, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একমাত্র সম্বল ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে শত শত পরিবার নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই বেছে নিয়েছেন যাযাবর জীবন। অভিজ্ঞমহলের মতে শুধুমাত্র বালু উত্তোলনে কারনে নদীভাঙন ভয়াবহরূপ ধারণ করেছে।বালু মহাল লিজ দিয়ে সরকার যে রাজ্স্ব আয় করে থাকেন তার চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ হাজার গুন বেশী।

অপরদিকে মানুষকে নিঃস্ব করে বালু উত্তোলনকারীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।নদী ভাঙনে নিঃস্ব ও রিক্তদের দৃষ্টিতে তারা বালুদস্যু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এদিকে নদী ভাঙন রোধে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থাণীয় সাংসদ আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম মনি গতবছর ভূমি মন্ত্রনালয়ে বালুমহাল লিজ না দেওয়ার জন্য ডিও লেটার দিয়েছিলেন। পরে ভূমি মন্ত্রনালয় বিষয়টি সরেজমিন তদন্তের জন্য  বরিশাল জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়।কিছুদিন কালক্ষেপন করে সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি’র ডিও লেটারকে উপেক্ষা করে ঠিকই বালুমহাল লিজ দেয়া হয়। ওই সময় লিজ দিতে বিলম্ব হলেও বালু উত্তোলন একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি।সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করা হয়।চলতি বছর সন্ধ্যা নদীর সবচেয়ে ভাঙনপ্রবন চারটি স্পটে লিজ দেয়ার কারনে ভাঙনের ভয়াবহতা বেড়েছে। ফলে ওই সব এলাকার মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা এর প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেননা।সম্প্রতি স্থাণীয় সাংসদ আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম মনি ব্রাক্ষ্মনকাঠি গ্রামে নদীর ভাঙন পরিদর্শনে গেলে বালু উত্তোলনকে নদী ভাঙনের অন্যতম কারন হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী এ ব্যপারে তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসময় সাংসদ মনি আক্ষেপ করে নদী ভাঙনরোধে বালুমহাল লিজ বন্ধে তার ডিও লেটার উপেক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তবে আবারও তিনি বালু উত্তোলন বন্ধ ও নদী ভাঙন রোধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।

সদ্য যোগদানকারী বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল আলম সম্প্রতি তার বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করার কথা উল্লেখ করে বালু উত্তোলনকারীরা নিয়মনীতি মানেননা এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে আগামীতে বালু মহাল লিজ দেয়ার পূর্বে এসব বিষয় ও নদী ভাঙনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনপ্রতিনিধি এবং নদী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান।

বানারীপাড়ায় বালু উত্তোলনের কারনে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে তীব্ররূপ