বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে বিষাদের ছায়া

এম.মিরাজ হোসাইন, বরিশাল ॥ বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে এখন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে কৃষকদের বুকে বাজছে ঘাম ঝরিয়ে ফলানো ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার বেদনা। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। যে দরে হাট-বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষক হতাশ। চড়া দামে বীজ, সার ও কীটনাশক কিনে ফলানো ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় তারা। মেহেন্দিগঞ্জের আজিমপুর গ্রামের কৃষক মাহাবুব আলম খোকন জানান, তার প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এই হিসেবে প্রতি মণ ধান ৬৪০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলে আসল টাকাটা ঘরে উঠতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকায়। ফলে তাদের প্রতি মণ ধানে গচ্চা দিতে হচ্ছে ১শ’ থেকে দেড়শ’ টাকা। সব মিলিয়ে কৃষক তাদের ফলানো ফসলের ন্যায্য মূল্য পেতে সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্র জানায় চলতি বছর বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় আমন চাষাবাদের জন্য ৭ লাখ ৮২ হাজার ৭ শত ৫৯ হেক্টর জমির লক্ষমাত্রা নির্ধার করা হয়েছিল। আর ফলনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ৩৩ মেট্রিকটন । তবে কৃষক এই লক্ষমাত্রার চেয়ে ২৮ হাজার ৮ শত ১৪ হেক্টর বেশি জমিতে আমন আবাদ করেছে । এবার ৭ লাখ ৮২ হাজার ৭ শত ৫৯ হেক্টর জমির লক্ষমাত্রার বিপরিতে কৃষক চাষাবাদ করেছে ৮ লাখ ১১ হাজার ৫ শত ৭৩ হেক্টর জমিতে । যার উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবী করলেন বরিশাল কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার সিরাজুল করিম।  কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলা হচ্ছে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী ও শরিয়তপুর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মৌসুমেও কৃষক তার কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়নি। ফলে অনেক কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এবারও যদি ন্যায্যমূল্য না পাওয়া যায়, তাহলে তারা ধান চাষে পুরোপুরি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এদিকে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, নানা অজুহাতে তাদের কাছ থেকে ধান কেনা হয় না। যদি সরকার তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনত, তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও তারা ন্যায্যমূল্য পেতেন। এ বিষয়ে বরিশাল কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার সিরাজুল করিম বলেন, আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ প্রদান ও সহযোগীতা করার কারনেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলে বরাবরের ন্যায় এবারো বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পেলেই তাদেও হতাশা কেটে যাবে।