বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আগাম বোরো চাষ শুরু কোমর বেঁধে কৃষকেরা মাঠে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষি নির্ভর বরিশাল কৃষি অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় গত এক সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে আগাম বোরো চাষ। একদিকে আমন ধান কাটার ব্যস্ত সময় অন্যদিকে নিঁচু জমিতে আগাম ইরি-বোরো চাষাবাদ নিয়ে কৃষক পরিবারের সদস্যরা এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের পর আগাম ইরি-বোরো চাষে কৃষকেরা এখন কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জ, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকার ইরি ব্লকের নিঁচু জমিতে গত এক সপ্তাহ থেকে আগাম ইরি-বোরো চারা রোপনের কাজ শুরু হয়েছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, চাহিদা মোতাবেক সার পাওয়ায় এ বছর ইরিবরিশাল কৃষি অঞ্চলে আগাম বোরো চাষ শুরু কোমর বেঁধে কৃষকেরা মাঠে-বোরো চাষে চাষীরা অধিকহারে ঝুঁকে পরেছে। ইরি-বোরোর পুরো মৌসুমে সার ও সেচকাজের জন্য সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে চলতি মৌসুমেও বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।

বরিশাল কৃষি অঞ্চলের বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার সিরাজুল করিম জানান, বরিশাল কৃষি অঞ্চলের আওতাধীন বরিশালে ৬১ হাজার ৩৬৯ হেক্টর, পিরোজপুরে ১৯ হাজার ১৩৪, ঝালকাঠীতে ৮ হাজার ৪৯৭, ভোলায় ৫৫ হাজার ৫২৭, পটুয়াখালীতে ৩ হাজার ৫৭৫, বরগুনায় ৬১৭, রাজবাড়িতে ১৮ হাজার ৫২৪, ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ২২৫, গোপালগঞ্জে ৭২ হাজার ৬৩৬, মাদারীপুরে ৪০ হাজার ৯৬৪ ও শরীয়তপুরে ৩১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ইরি-বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের সর্বমোট ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫০৩ হেক্টর জমিতে ইরি, হাইব্রীড ও স্থানীয় জাতের বোরো চারা রোপন করা হলে ও আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এতে ১ কোটি ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ১১১ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার মন্ডল জানান, গৌরনদী উপজেলায় মোট ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এরমধ্যে আগাম ইরি-বোরো চাষের জন্য ৩ হাজার ২’শ হেক্টর জমি নির্ধারন করা হয়। এ লক্ষমাত্রা পূরন হলে ৩৭ হাজার ২’শ মেঃ টন ধান উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যে কৃষকরা আগাম ইরি-বোরো চাষ শুরু করেছেন। তবে এ বছর ইরি-বোরো চাষের এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, গতবছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও এখানকার অধিকাংশ কৃষকেরা গুটি ইউরিয়া সারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছে।

গৌরনদীর গেরাকুল গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন ঘরামী, হেলাল মিয়া, সাহানুর বেপারী, আশোকাঠী গ্রামের হানিফ সরদার, মান্নান বেপারী, হরিসেনা গ্রামের আব্দুল লতিফ, হানিফ বেপারী, কাসেমাবাদ গ্রামের কাওসার হোসেন, রব সরদার, মাহিলাড়া গ্রামের হেলাল সরদার, রবিন দাস, কটকস্থল গ্রামের সালাউদ্দিন হাওলাদার, গোরক্ষডোবা গ্রামের কবির উদ্দিন মাঝিসহ একাধিক কৃষকেরা জানান, চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের পর পরই তারা তাদের নিঁচু জমিতে আগাম ইরি-বোরো চাষ শুরু করেছেন। তারা আরো জানান, জমি প্রস্তুতের সময় যে পরিমান টিএসপি, ডিএপি, এমওপি ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় তা চাহিদা মোতাবেক ডিলারদের কাছে পাওয়ায় এখনো তাদের কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। এছাড়াও তারা জমিতে গত বছরের ন্যায় এবারও গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করছেন। কৃষকেরা ইরি-বোরো মৌসুমের মুখ্যম সময় সঠিক ভাবে সার, ঔষধ ও সেচকাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।