দ্বিধাবিভক্ত গৌরনদীর বার্থী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা – ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। ৫/৬ জনের একটি শিক্ষক দল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। ফলে মারাতœক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার বার্থী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর অর্ধ বার্ষিকী ও দ্বাদশ শ্রেনীর নির্বাচনী পরীক্ষা গত ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা মৃনালিনী বিশ্বাস সম্প্রতি দ্বাদশ শ্রেনীর বাংলা ২য় পত্রের প্রশ্ন তার কাছে প্রাইভেট পড়–য়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর মাঝে ফাঁস করে দেন। এ ঘটনা জানতে পেরে কলেজ অধ্যক্ষ আবদুস ছালাম ও উপাধ্যক্ষ স্বপন পান্ডে অপর বাংলা শিক্ষককে দিয়ে  নতুন প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেন। ওই বিষয়ের পরীক্ষক হিসেবে পরীক্ষার খাতা দেখতে সংশ্লি¬ষ্ট অধ্যাপিকা অপারগতা প্রকাশ করেন। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজ অধ্যক্ষ কাজী আবদুস সালাম গত ১ ডিসেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অধ্যাপিকা মৃনালিনী বিশ্বাসকে কক্ষের পরিদর্শকের ডিউটি দেননি। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত অধ্যাপিকা মৃনালিনী কলেজ থেকে বেড়িয়ে কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য ও ২নং বার্থী ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা মোঃ শাহজাহান প্যাদার কাছে নালিশ করেন। ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ  নেতা শাহজাহান প্যাদা তাৎক্ষনিক কলেজে ঢুকে অধ্যক্ষ কাজী আবদুস সালামকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও নাজেহাল করেন। এর পর শুরু হয় কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত। ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান প্যাদা ও সহকারী অধ্যাপিকা মৃনালিনী বিশ্বাসসহ ৫/৬ জন শিক্ষক কলেজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের একাংশকে ক্ষেপিয়ে তোলেন।

কলেজের একাংশ শিক্ষার্থীরা জানায়, অধ্যক্ষের অবৈধ ভাবে নিয়োগ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও ২০০৬ সালে মন্ত্রণালয়ের অডিটের নামে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আদায়, ২০১০ সালে তফসিলী সম্প্রদায়ভুক্ত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রাপ্ত প্রতি জনের কাছ থেকে ৫০০ করে টাকা আদায় করে তা আত্মসাত করেছেন। গত সোমবার সকালে শিক্ষার্থীর একাংশ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ১৭টি অভিযোগ এনে এলাকায় লিফলেট বিতরণ করে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন বেগমান করার জন্য গত বৃহস্পতিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলা বিভাগের শিক্ষক মৃনালিনী বিশ্বাসকে আহ্বায়ক, শিক্ষক জাহ্ঙ্গাীর কবির, নিহার রঞ্জন বিশ্বাস, মিজানুর রহমান, সালমা আক্তার, শাহ্ মোঃ হানিফসহ ৬ শিক্ষককে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৫ ছাত্রকে সদস্য করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষক ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে কলেজ অধ্যক্ষ কাজী আবদুস ছালাম বলেন, কলেজের ৩৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫-৬ জন শিক্ষক সঠিক সময়ে কলেজে আসেন না এবং নিয়মিত ক্লাস নেন না। এ কারনে বিভিন্ন সময়ে তাদের ভৎসনা করলে তারা আমার উপর ক্ষুব্ধ হন। সহকারী অধ্যাপিকা মৃনালিনা বিশ্বাস প্রশ্ন পত্র ফাঁস করলে আমি তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করি। এ ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলাকারী ওই ৫-৬ জন শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী শিক্ষিকার সাথে একজোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছে।