ফিরে দেখা মুক্তিযুদ্ধ – বরিশালের ৩৭ টি গনকবরের খবর নেয়না কেউ

বরিশাল সংবাদদাতা ॥ স্বাধীনতা যুদ্ধের পাকবাহিনীর বর্বর নির্যাতনে শহীদদের ৩৭ টি গনকবরের স্মৃতি রক্ষার্থে এখনো বরিশালের অনেক স্থানে নির্মিত হয়নি স্মৃতি স্তম্ভ। যে সব স্থানে স্মৃতি স্তম্ভ  নির্মিত হয়েছে তাও অযন্ত অবহেলায় পড়ে রয়েছে।

বরিশাল অঞ্চলের বধ্যভূমির সম্ভাব্য তালিকার মধ্যে রয়েছে বরিশাল সদরের পানি উন্নয়ন র্বোড সংলগ্ন কীর্তনখোলা তীরে সরকারীভাবে স্তম্ভ র্নিমিত বধ্যভূমি (চিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ১ থেকে দেড় হাজার লোক, তালতলী বধ্যভূমি বেসরকারীভাবে ফলক নির্মিত (চিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় অর্ধ শতাধিক। চরকাউয়া মোসলেম মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন খালের পাড় বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ৩০/৪০ জন। বরিশাল নগরীর ১ নং সিএন্ডবি পুল বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যার শিকার হয় ৮ থেকে ১০ জন।

গৌরনদীর বাটাজোর হরহর মৌজার মরার ভিটার বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ১৪০ থেকে ২০০ জন, গৌরনদী নদীর তীরে সহকারী পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ২ থেকে ৩ শতাধিক, গৌরনদী গয়নাঘাটা পুল বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ২ থেকে ৩ শতাধিক,গৌরনদী কলেজ সংলগ্ন ঘাট বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ৩ থেকে ৪ শতাধিক।

আগৈলঝাড়া কাটিরা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংলগ্ন বধ্যভূমি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্দ্যোগে ফলক নির্মিত (চিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় অর্ধশতাধিক,রাংতা বিল রাজিহার বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) হত্যা করা হয় ৫ শতাধিক। কেতনার বিল রাজিহার বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ৬ থেকে ৭ শতাধিক। রাজিহার ফ্রান্সিস হালদার বাড়ির বধ্যভূমি ব্যক্তিগতভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত (চিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ৮ জন। মতিহার গ্রাম বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ১৫ থেকে ২০ জন। দক্ষিন সিহিপাশা গ্রাম বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ২০ থেকে ৩০ জন।

বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী বধ্যভূমি ব্যক্তিগতভাবে ফলক নির্মিত (চিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় ৪ শতাধিক। বেবাজ বধ্যভূমি এখানে গনহত্যা করা হয় ২শতাধিক (অচিহ্নিত)। শ্যামপুর বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় ৩০ থেকে ৪০ জন (অচিহ্নিত)।

বানারীপাড়ার দক্ষিন গাভা নরের কাঠী বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ৭৫ থেকে ১ শত জন। গাভা বাজার বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ২৫ থেকে ৩০ জন। গাভা বিল্ব বাড়ি বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ৫ থেকে ৭ জন। গাভা পূর্ববেড় মহল বাওনের হাট বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ২৫ থেকে ৪০ জন। গাভা রাম চন্দ্রপুরের পূর্ববের মহল (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় অর্ধশতাধিক।

বাবুগঞ্জের ক্যাডেট কলেজ বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় অর্ধশতাধিক। উজিরপুর বড়াকোঠা দরগাবাড়ি বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় প্রায় ১ শতাধিক। উত্তর বড়াকোঠা মল্লিক বাড়ি বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ৮ থেকে ১০ জন। বড়াকোঠা মুক্তিযুদ্ধের মিলন কেন্দ্র সংলগ্ন বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) এখানে গনহত্যা করা হয় অর্ধশত। খাটিয়াল পাড়া বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ১৫ থেকে ২০ জন। বড়াকোঠা চন্দ্র কান্ত হালদার বাড়ি বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় ৫ থেকে ১০ জন। উজিরপুরের নারায়ন পুর বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গনহত্যা করা হয় প্রায় অর্ধশতাধিক।

মুলাদী পাতার চর গ্রাম বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় ৪০ থেকে ৫০ জন। মুলাদী নদীর দক্ষিন পাড় বেলতলা বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয়  ১০ থেকে ২০ জন। মেহেন্দিগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় ২ থেকে ৩ শতাধিক। পাতারহাট গার্লস্ স্কুল দক্ষিন পাড়ে খলিল মোল্লার বাসার বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় ১২ জন ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধাকে। পাতারহাট গার্লস্ স্কুল সংলগ্ন ব্রীজের গোড়ায় বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় ১ শতাধিক।

ঝালকাঠী জেলার নলছিটি সুগন্ধা নদীর তীরের বধ্যভূমি এখানে গনহত্যা করা হয় ১৩ জন। নলছিটি মানপাশা ঋষি পাড়া বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় অর্ধশত। স্বরূপকাঠি কুড়িয়ানা খালের বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় প্রায় ১ হাজার জনকে। কুড়িয়ানা জয়দেব হালদার বাড়ি বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় ৪ থেকে ৫ শতাধিক। পূর্বজলাবাড়ী খালপাড় বধ্যভূমিতে গনহত্যা করা হয় ১ থেকে ২ শতাধিক।

বরিশালের বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতিক বলেন জাতির প্রত্যাশা পুরনের চেয়ে গ্লানি বেশী। যে গ্লানি নিয়ে আজো আমরা লড়াই করি। কি বিচিত্র এ দেশ! যারা এদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, যারা এ দেশে স্বাধিনতা যুদ্ধে মা, বোনদের ধর্ষনের সাথে জড়িত ছিল, তারা বেঁচে গিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দেখাল আমাদের। আমরা বিজয়ের এমাসেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।

উল্লেখ্য, ঝালকাঠী জেলার নলছিটি, পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী ও কুড়িয়ানা ১৯৭১ সালে বরিশাল জেলার অন্তর্ভক্ত ছিল। ছারছিনা মাদ্রাসার তৎকালিন ছাত্র তাবিজ বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এ অঞ্চলের প্রতিটি ধর্ষন, হত্যাজজ্ঞ, বসত ভিটায় অগ্নি সংযোগের নায়কের ভূমিকায় ছিলেন। পাক বাহীনির প্রতিটি অপারেশন তার দেয়া ছক অনুযায়ী হয়েছে বলে প্রমান মিলেছে তদন্তে। পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধারা সাঈদীর ফাসির দাবী জানিয়ে আসছে।