আগৈলঝাড়ায় মুর্তিমান আতংক এক ইউপি সদস্য – প্রতারণা করে পথে বসিয়েছে জনগনকে

আগৈলঝাড়া সংবাদদাতা ॥ আগৈলঝাড়ায় নিজ নির্বাচিত এলাকায় মূর্তিমান আতংক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ডব্লিউ তালুকদার নামের এক ইউপি সদস্য। দল বদল হলেও বদল হয়না তার অবৈধ ক্ষমতার। চাদাবাজি, অত্যাচার, নির্যাতন আর হয়রানিতে নাভিশ্বাস উঠেছে এলাকার জনগনের। বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এলাকার প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অসহায়দের সর্বশান্ত করেছে নিজে গড়েছন প্রাসাদোপম ভবন। একাধিক মামলার আসামী হয়েও ডব্লিউ তার সহযোগিদের নিয়ে বীর দর্পে চালিয়ে যাচ্ছে তার হেন অপকর্ম। মামলা হলেও বংশিয় প্রভাব ও একজন সংসদ সদস্যর নাম ভাঙ্গিয়ে চলার কারণে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা সাধারণ জনগন।

সরেজমিনে উপজেলার ১ নং রাজিহার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড চেঙ্গুটিয়া গ্রামে গিয়ে সাধারণ জনগনের সাথে কথা বললে তাদের ভোটে নির্বাচিত ওই ওয়ার্ডের মেম্বর তোতা মিয়ার ছেলে ডব্লিউ তালুকদার সম্পর্কে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন।

ওই গ্রামেরকালাই ঘরামির ছেলে খলিল ঘরামি জানান, তার বাবার বন্ধকী রাখা ৪২ শতক জমির টাকা ফেরত দেয়ার পরেও মেম্বর ডব্লিউকে অতিরিক্ত ৯০ হাজার টাকা সহ ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা দেয় তারা। তাছাড়া তাদের ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত যায়গার টাকা নিয়ে ডব্লিউ তাদের যায়গা না দিয়ে নিজের নামে যায়গা নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। পুনরায় ডব্লিউ খলিলকে যায়গা দেয়ার নাম করে দেড় লাখ টাকা দাবি করে আসছে। এঘটনায় খলিল মেম্বর ডব্লিউর বিরুদ্ধে আদালতে ৭ ধারার মামলাসহ দেওয়ানি মামলাও করেছে। টাকা ও যায়গা হারিয়ে তারা এখন পাগল প্রায়।

ওই গ্রামের বদু আকনের ছেলে মন্নান আকনের স্ত্রী রাহেলা বেগম জানান, তাদের ও ওয়াজেদ আলীর ছেলে বেল্লাল আকনের ওয়ারিশদের যায়গা ওয়ারিশদের টাকা দিয়ে তাদের নামে এনে দেয়ার কথা বলে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ডব্লিউ। তবে ওই যায়গা মন্নানদের নামে না করে তাদের টাকায় নিজের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করে ডব্লিউ। নিজেদের জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে তারা ওই টাকা মেম্বরকে দিয়েছিল বলে জানান।

গত চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই বিএনপির ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক পদকে ব্যবহার করে ডব্লিউ তালুকদার এলাকার লোকজনকে অত্যাচার করে উপজেলার সর্বত্র মুর্তিমান আতংক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। ওই সময় সংখ্যালঘু ও আওয়ামী নেতা কর্মীদের কাছ থেকে চাদা আদায় ও অত্যাচার ছিল তার নিত্য দিনের ঘটনা। তার চাদাবাজি ও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি তার নিজ বাড়ি ও বংশের লোকজনও। গত তত্বাবধায়ক সময় পুলিশের ভয়ে এলাকা ছাড়ে ডব্লিউ। আশ্রয় নেয় ঢাকায়। আশ্রয়ের সুযোগে একই গ্রামের ঢাকায় অবস্থানকারী বারেক ঘরামির সাথে একত্রে ঢাকার রায়ের বাজারে বাড়ি কেনার কথা বলে সাড়ে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই ডব্লিউ। এনিয়ে এলাকার জামাল হাওলাদার ও সত্তার দফাদার শালিস মিমাংশা করে দিলেও  ওই টাকা আজও ফেরত পায়নি তারা। যায়গাজমি ঠিক করা, ওয়ারিশদের যায়গা এনে দেয়ার কথা বলে এলাকার ভাষাই সরদার, সিরাজ মিয়া সহ কমপক্ষে ১০ জনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এলাকার মেম্বর ডব্লিউ তালুকদার। টাকা ফেরত চাইলে তাদের মারধর করে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানিসহ মেরে ফেরার হমকি দেয়ার অভিযোগ করেন তারা। এঘটনায়  ভাসাই সরদার ও সিরাজ মিয়া ডব্লিউর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছে। যায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে চাদা দাবি, অস্ত্রের মুখে মারধর, টাকা ছিনতাই, হত্যার পর গুম সহ বিভিন্ন অভিযোগে ডব্লিউ, তার ভাই ইমরুলসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গত ৯ ডিসেম্বর আগৈলঝাড়া থানায় ওই গ্রামের আহম্মেদ আলী হাওলাদার একটি মামলা করেছেন। যার নং-৪। ওই মামলার খবর শুনেই ডব্লিউ আত্মগোপন করে। আওয়ামী দলীয় নেতা কর্মীদের বিরোধিতা সত্বেও বর্তমান বরিশাল-১ আসনের এমপি এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসের বাশাইল স্কুলের নির্বাচনি জনসভায় তার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করে ডব্লিউ। তবে গত ১৯ নভেম্বর বরিশালে বিএনপি চেয়ার পার্সন খালেদা জিয়ার জনসভায় ব্যানার সহ এলাকার লোকজন নিয়ে বরিশালে যায় দল মৌসুমি দলের নেতা ডব্লিউ। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। করেছেন রাজিহার ইউনিয়নে সদস্য পদে ইউপি নির্বাচন। বংশিয় জন প্রতিনিধির ¯েœহধন্যতার নাম ভাঙ্গিয়ে, নিজ বংশিয় প্রভাবখাটিয়ে অর্থ ব্যয় করে নির্বাচিত হয়েছেন ডব্লিউ। নির্বাচনের পর শপথ না হলেও সপ্তাহ না ঘুরতেই দরিদ্রদের জন্য ইউনয়ন পরিষদ থেকে ঘর দেয়া হবে বলে এলাকার রাজ্জাক হওলাদারের ছেলে রুমান হাওলাদার, রাজ্যেশ্বর মন্ডলের স্ত্রী সোনেকা মন্ডল, সুকুমার চৌকিদারের স্ত্রী কামনা চৌকিদার, যোগেশ গাইনের স্ত্রী সবিতা গাইন, রাইচরণ মন্ডলের ছেলে বিশ্বনাথ মন্ডলসহ এলাকার কমপক্ষে ৫০ জনের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আদায় করেছে ডব্লিউ। কিন্তু আজও তারা ঘর পায়নি। কারণ, সরকারীভাবে এমন কোন প্রকল্পই ইউনিয়ন পরিষদ এ পর্যন্ত পায়নি বলে যানাগেছে। বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে তার কাছে ডব্লিউর ব্যাপারে অনেকেই লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছেন। বিষয়গুলো নিয়ে পরিষদে বসে আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে ডব্লিউ আত্মগোপনে থাকায় বসা হচ্ছে না। মামলা একটি প্রশাসনিক ব্যাপার, তাই এটা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এব্যাপারে ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ডব্লিউ তালুকদার ফোনে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে জনগনের টাকা নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা জানিয়ে বলেন, যেসকল মহিলা টাকার বিনিময়ে ঘর দেয়া অভিযোগ করেছে তারা চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার ও স্থানীয় নুরু তালুকদারের ঘরের কাজের মহিলা। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, যদি তার এলাকার কোন সাধারণ লোক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন আর তা প্রমানিত হয় তবে তিনি গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় জুতার মালা পড়ে হাটবেন।