মুক্তিযোদ্ধা সুরাত আলীর জীবন যুদ্ধ শেষ হয়নি

ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরাত আলী খলিফা। অস্ত্র হাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বিজয় হয়েছিল দেশের মুক্তিকামী মানুষের। এটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আজো সুরাত আলীর জীবন যুদ্ধ শেষ হয়নি। জীবন যুদ্ধে তিনি হয়েছেন পরাজিত। অভাব তাকে জেঁকে বসেছে। পরিবারের ৯ সদস্যকে নিয়ে বেঁচে মুক্তিযোদ্ধা সুরাত আলীর জীবন যুদ্ধ শেষ হয়নিথাকা তার জীবনে এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে ৭১ বছর বয়সেও তাকে রিকসার প্যাডেল চেঁপে জিবীকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পূর্ব বেজহার গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরাত আলী জানান, জন্মের এক মাস পরেই তার বাবা মারা যায়। অভাবের সংসারের ঘানি টানতে পার্শ্ববর্তী বাড়ির একজনের সহায়তায় ঢাকায় গিয়ে সুরাত আলী রিকসার প্যাডেল চাঁপা শুরু করেন। ঢাকায় তখন পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়। সেই সময় ঢাকার ষ্টেডিয়াম সংলগ্নস্থানে সুরাত আলী পাক হানাদারদের রোষানলে পড়েন। ভাগ্যক্রমে সে যাত্রায় প্রানে বেঁচে যান। কয়েকদিন পর পাক হানাদারদের এলোপাথারি গুলিতে ঢাকায় তার আশ্রয়দাতা মোহাম্মদ আলী প্রাণ হারায়। এতে সে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। দেশ মাতৃকার টানে স্ত্রী পরিবার পরিজনের কথা না ভেবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ভারত থেকে মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। মুক্তিযোদ্ধার ৯নং সেক্টরের গ্র“প কমান্ডার নিজাম উদ্দিন আকনের অধীনে তিনি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে আনেন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলাকালীন সময় সুরাত আলী গুরু দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এলএমজি আগ্নেয়াস্ত্র চালাতেন বলে ওইসময় তার নাম দেয়া হয়েছিল এলএমজি সুরাত। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তাকে সবাই এলএমজি সুরাত নামেই চেনেন।

সুরাত আলী আক্ষেপ করে বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু জীবন যুদ্ধে আজো পরিবারের কাছে আমি একজন পরাজিত সৈনিক। অভাবের সংসারে সেই কাক ডাকা ভোরে রিকসা নিয়ে বের হয়ে দুপুরে বাড়িতে ফেরেন। আবার বিকেলে বের হয়ে রাত পর্যন্ত রিকসার প্যাডেল ঘুরিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই কোন এক মতে চলছে সুরাত আলীর অভাবের সংসার।

তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করেছেন : মনিষ চন্দ্র বিশ্বাস