মুলাদীতে মহিলা ভাইসচেয়ারম্যানের ক্ষমতার দাপট ॥ পিআইও’কে মারধর – চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা – প্রতিবাদ সভা

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের মুলাদী উপজেলায় টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের চালের তালিকা করাকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) মারধর করে একটি চোখ নষ্ট করে দিয়েছে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও তার স্বামী প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা সিরাজ মুন্সী। এ সময় পিআইও’র কার্যালয়ে ভাংচুর করা হয়। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য জনসম্মুখে নিজ কার্যালয় ভাংচুর করে গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল আদালতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন। অপরদিকে পিআইও আকতার হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদে উপজেলার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বুধবার কর্মবিরতী কর্মসূচী ও কালোব্যাজ ধারন করে হামলাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ওইদিন বিকেলে প্রতিবাদ সভা করেছেন। পিআইও’র ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকেলে।

হামলায় গুরুতর জখম প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আকতার হোসেন জানান, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও তার স্বামী উপজেলা আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজ মুন্সী মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে প্রথম দফায় তার কার্যালয়ে আসেন। এ সময় তারা টিআর প্রকল্পের তালিকার প্রসঙ্গ তুলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তিনি (পিআইও) তালিকার ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে বললে চেয়ারম্যানকেও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উল্লেখিতরা তাদের কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তার কার্যালয়ে এসে তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে তার (পিআইও’র) চোখের চশমা ভেঙ্গে যাওয়ায় চশমার গ্লাস চোখের মধ্যে ঢুকে যায়। এতে তার ডান চোখে গুরুতর জখম হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা তার কার্যালয় ভাংচুর করে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিআইও’কে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এসময় তিনি কক্ষ তছনছ অবস্থায় দেখতে পান। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও তার স্বামী সিরাজ মুন্সীর নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ৭/৮জনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে হামলাকারী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও তার স্বামী সিরাজ মুন্সী পুরো ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, আমরা পিআইও’র কার্যালয়ে যাইনি। বরং উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার খান ও তার লোকজনে আমার (ভাইস চেয়ারম্যানের) কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করেছে। এ অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার খান বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পিআইও’কে মারধরের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটিয়ে মঙ্গলবার রাতে জনসম্মুখে নিজ কার্যালয় ভাংচুর করে গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার খান, তার স্ত্রী লাইজু বেগম, শ্যালক মন্টু খান, রুহুল আমীন খান ও রব খানকে আসামি করা হয়েছে।

অপরদিকে পিআইও’র ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার উপজেলার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মবিরতী কর্মসূচী ও কালোব্যাজ ধারন করে বিকেলে প্রতিবাদ সভা করেছেন। উপজেলা পরিষদ চত্ববে অনুষ্ঠিত সভায় ইউএনও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কৃষি কর্মকর্তা খায়রুল মল্লিক, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র, প্রকৌশলী কবির হোসেন প্রমুখ।