বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে – গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশের নিস্কৃয়তার কারনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। হাইওয়ে থানা পুলিশ অপরাধ দমনের পরিবর্তে নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছেন সড়কে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের সাথে।

স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলের জেরধরে গত ২৬ নবেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে হাইওয়ে থানার সম্মুখে বসে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত ও কমপক্ষে ১৪জন গুরুতর আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলাকারীরা ওই সময় হাইওয়ে থানার সম্মুখ দিয়ে ধারালো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছোটাছুটি করলেও গৌরনদী হাইওয়ে থানায় একজন সহকারী পুলিশ সুপার, একজন ইন্সপেক্টর, একজন এস.আই, একজন এএসআই, দু’জন হাবিলদার, একজন নায়েক ও ২০ জন কনষ্টবল তখন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। এ ঘটনায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গত ১৮ নবেম্বর দুপুরে হাইওয়ে থানার সম্মুখের একটি সেলুনের দোকানের পিছনে একটি শক্তিশালী বোমা বিষ্ফোরিত হয়। ্ওইদিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সড়ক পথে বরিশাল যাচ্ছিলেন। বোমার বিকট শব্দে আতংকিত হয়ে পড়েছিলো পথচারী ও বাসষ্ট্যান্ডের ব্যবসায়ীরা। গত ৯ ডিসেম্বর ভোর চারটার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর বার্থী, খাঞ্জাপুর ও ভুরঘাটা নামকস্থানের মহাসড়কের গাছ কেটে ও টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটাররা মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে এবং কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর করে। ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে হাইওয়ে থানা থেকে মাত্র কয়েক’শ গজ দুরত্বে বাসষ্ট্যান্ড মসজিদের দক্ষিণ পাশে গাছ ফেলে একটি চালবাহী ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে কতিপয় দুস্কৃতকারীরা। তারা ড্রাইভারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। সড়কের গাছ কাটা, অবরোধ সৃষ্টি ও চালবাহী ট্রাকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গৌরনদী থানা পুলিশ বাদি হয়ে পৃথক ভাবে দুটি মামলা দায়ের করেন। গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড সুপার মার্কেটের মা ও মনি জুয়েলার্সের মালিক সোহেল গোমস্তা গত ১৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মটরসাইকেলযোগে নিজ বাড়ি পতিহারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্মুখে পৌঁছলে একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-ছ- ১৪-৭০৫৪) দিয়ে মহাসড়ক ব্যারিকেট দিয়ে ব্যবসায়ী সোহেলের পথরোধ করা হয়। ভূয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপহরনের উদ্দেশ্যে সোহেলের হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মাইক্রেবাসে তোলার জন্য টানা হেচরা শুরু করা হয়। এ সময় অপহরনকারীরা সোহেলের ব্যবহৃত মটরসাইকেলটিও মাইক্রোবাসে তোলার সময় সোহেল ডাকচিৎকার শুরু করলে অপহরনকারীরা তাকে মারধর করে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা ধাওয়া করে মাইক্রোবাস সহ ড্রাইভারকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। গত ২০ দিনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী এলাকায় পরপর কয়েকটি আইন শৃংখলা বিরোধী কর্মকান্ড সংঘটিত হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে এলাকার লোকজনদের ক্ষোভ বেড়েই চলেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গৌরনদীতে একটি পূর্ণাঙ্গ হাইওয়ে থানা থাকা সত্বেও পুলিশের নিস্কৃয়তার কারনে মহাসড়কে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ মহাসড়ক পাহাড়া দেয়ার পরিবর্তে অবৈধ যানবাহনের চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। মহাসড়কে ভটভটি, নসিমন, করিমন, ভাড়ার মটরসাইকেল ও টলি চলাচলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্বেও মাসিক নির্দৃষ্ট হারে  মাসোহারার বিনিময়ে পুলিশ অবৈধ যানবাহন চলাচলে বাঁধা না দিয়ে অবৈধ কাজে সহায়তা করছেন। এ কারনে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে জান-মালের। গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর বাটাজোর নামকস্থানে একটি নছিমনের ধাক্কায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইলিয়াছ কবিরের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার। পুলিশ কর্মকর্তাও এতে গুরুতর আহত হন। গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ নসিমন ড্রাইভার অহিদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার গাড়ীর ক্ষতিপুরন বাবদ ৯ হাজার টাকা আদায় করে তাকে নসিমনসহ ছেড়ে দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন টেম্পু, ভটভটি, নছিমন ও টলি চালকেরা জানান, তাদের প্রত্যেকের  কাছ থেকে প্রতি মাসে হাইওয়ে থানা পুলিশ ৩’শ টাকা করে আদায় করছে। মাস শেষে পুলিশের ক্যাশিয়ার আলাউদ্দিন এসে টাকা নিয়ে যায়। এ ছাড়া পুলিশ মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে চেক পোষ্ট বসিয়ে যানবাহন চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গৌরনদী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ ইকবাল হেসেন চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মহাসড়কে সংঘটিত দুর্ঘটনার বাইরে আমাদের কোন কিছুই দেখার কোন একতিয়ার নেই।