নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগুরুদের ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছু নেই। তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের পাশাপাশি সামাজিক ও সেবামূলক কাজ কর্মে নিজেদের সর্বদা ব্যস্ত রাখেন। কোমার্ঘ, দারিদ্র, বাধ্যতা এ তিনটি ব্রত নিয়ে তারা সাদামাটা জীবন যাপন করে থাকেন। এক কথায় তারা ত্যাগ করেন-ভোগ করেন না।
বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের কয়েকটি ধর্মপল্ল¬ী ঘুরে সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের ক্যাথলিক, ব্যাপ্টিষ্ট, অক্সফোর্ট, এজি চার্চসহ বিভিন্ন গোত্রের এ অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস। এদের পালক পুরোহিতদের দৈনন্দিন জীবন চলে বড় কষ্টে চ্যালেঞ্জ নিয়ে। অথচ পুরোহিতরা খ্রীষ্টযাগ (প্রধান প্রার্থনা) ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে সমাজের উন্নয়ন ও উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। ধর্মীয় প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সৎপথে আনায়ন ও নৈতিকতাবোধ জাগিয়ে তোলার আহবানসহ বিবাহ দেয়া, রোগীদের জন্য প্রার্থনা ও আর্শিবাদ, পরিবার কল্যান, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন, গণশিক্ষা, নারী শিক্ষা, যৌতুক রোধ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরির্চযা, এইডস প্রতিরোধ, ধুমপান রোধ, বৃক্ষরোপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পালক পুরোহিতগণ অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন।
গৌরনদী ক্যাথলিক চার্চের পালক পুরোহিত রেভাঃ ফাদার লাজারুজ কানু গোমেজ জানান, খ্রীষ্টান ধর্মের বিশ্বাস মতে তিনি শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতী ও খ্রীষ্টধর্মের সর্বস্তরের জনগনকে ধর্ম শিক্ষাদান ও সমাজের দায়িত্ব যেমন, সমাজের সমস্যাবলী সমাধানের পদক্ষেপ, রোগী সেবা ও সাহায্য করে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের ক্যাথলিক গোত্রের সকল ও অক্সফোর্ড গোত্রের কিছু পুরোহিতরা সন্ন্যাস (চিরকুমার) জীবন যাপন করছেন। ব্যক্তিগত ভাবে তারা কিছুই পান না। তাদের জীবন যাপনের যাবতীয় ব্যয়ভার চার্চ বহন করে থাকেন। তারমতে, বিশপের হুকুম বাধ্যতামূলক ভাবে পালন করতে হবে। তার আওতাধীন দেশের ৪৭টি খ্রীষ্টান পল্ল¬ীর অসংখ্য উপকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিসপ্তাহে ওইসব পল্ল¬ী ও উপকেন্দ্রে খ্রীষ্টযাক করা হয়। তারা চাকরি নয়, সেবা করে যাচ্ছেন বলেও উল্লে¬খ করেন। সূত্র মতে, বরিশাল আঞ্চলিক ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের তত্বাবধানে বিস্তৃত এলাকায় পূর্ণ অভিষিক্ত ১০ জন পালক, ১৯ জন সহকারী পালক, ১২ জন স্বেচ্ছাসেবী বিশেষ পরিচালক ও ৪১ জন সহপালকদের মাধ্যমে ৪৪টি চার্চে প্রভুর ভোজ, অবগাহন, বিবাহ, শিশু ও স্বর্গসহ বিভিন্ন পালকীয় পরিচর্যার কাজ পরিচালিত করা হয়।
শীতের শুভ্র-সুন্দর হিমেল নির্মল হাওয়ায় শান্তি বরষে; বাংলা মায়ের খ্রীষ্ট্র সন্তানদের হৃদয় মন্দিরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ফিরে এসেছে মহামিলনের আনন্দ উৎসব পূন্যময় বড়দিন। যিশু খ্রীষ্টের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এবারও ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে গৌরনদী ক্যাথলিক চার্চে প্রাক বড়দিন ও পূন্যময় বড়দিনের আনন্দ প্রতীক শুভ বড়দিনের কেক কাটার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বড়দিন উপলক্ষ্যে গৌরনদী ক্যাথলিক চার্চের গীর্জা প্রাঙ্গন সাজানো হয়েছে বর্ণিল অপরুপ সাজে। বড়দিনকে ঘিরে বরিশালের খ্রীষ্টান নারী-পুরুষসহ সকল বয়সের মানুষের মাঝে আনন্দ ও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার বিভিন্ন গীর্জায় ও বাড়িতে বড়দিনের আনন্দ উৎসব।