বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন, কিন্তু জিয়াই যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি ও তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন

সুহাস বড়ুয়া, বস্টন : আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রাখতে প্রবাসীদের  প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা নিপীড়িত মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তাদের কল্যাণে কাজ করেছে। গত ৩০ বছর যেসব দল দেশ শাসন করেছে, তারা জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করেছে এবং জনগণকে তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সম্পূর্ণ হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। ৪২তম বিজয় দিবস উপলক্ষে  গত ১৬ই ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
 
তাঁরা বলেন, বিরোধী দল এবং এক শ্রেণীর লোক আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা লাগামহীন মিথ্যাচার এবং দেশে-বিদেশে এ দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। তাদের হাতে রয়েছে অর্থ ও মিডিয়া। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এই চক্রান্তের অংশ হিসাবেই রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালানো হয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরুণ বিশ্বজিৎকে নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয়, গার্মেন্টস কারখানায় আগুন দেয়া হয় এবং পদ্মা সেতুর ব্যাপারে ঘুষের অভিযোগ তোলা হয়। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত করার লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে যে চক্রান্ত চলছে ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিরোধের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শক্তির প্রতি আহ্বান জানান।, “সরকারকে দুর্নীতিবাজ বানানোর জন্য চাপ আর কৌশল আছে। দুদক যেখানে স্বাধীনভাবে কাজ করছে, সেখানে একটি বিদেশি সংস্থা দুদকের ওপর চাপ দিচ্ছে। যেন সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো যায়।” তিনি বলেন, বিএনপি নেতারাও প্রতিদিনই সরকার উৎখাতের হুমকি দিচ্ছেন। তারাও ভেবেছেন, যদি সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করা যায়, তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা যাবে।প্রবাসে বিভিন্ন শাখা সংগঠনের  বিষয়ে আলোচনায়  বক্তারা বলেন নেতা এবং কর্মী  নির্বাচনের আগে দরকার তাদের রাজনৈতিক ব্যাক গ্রাউন্ড জেনে নেওয়া, অনুপ্রবেশ কারীদের  দিয়ে সংগঠন ধ্বংস করা যাবেনা” যার প্রমান বস্টনে ও লক্ষ্য করা যায়।
 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের জনগনের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও ত্যাগ  বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে  ত্বরান্বিত করেছিল এজন্য  ভারতের কাছে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ।  
বক্তারা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো জনগণের সাংবিধানিক ও ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেনি। বরং আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার রক্ষা এবং তাদের ক্ষমতায়নে কাজ করেছে। তাঁরা বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘জামাত-বিএনপির দুর্বৃত্তদের বিচারে  আওয়ামী লীগ  মন্থর গতিতে আগাচ্ছে । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার বিষয়ে তার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে বক্তারা  বলেন, যুদ্ধাপরাধের কলংক থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।  বাঙ্গালী জনগণ রাতারাতি তাদের স্বাধীনতা লাভ করেনি। কষ্টে অর্জিত এই স্বাধীনতার সুফল দেশের জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করার মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা লাভের সংগ্রামের সূচনা থেকেই একটি স্বার্থন্বেষী মহল আমাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে হতাশ ছিল। এই গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের সকল আশা-আকাঙ্খা মুছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের কালো রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
 
স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু জিয়াই যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি ও তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন সেক্টরে পুনর্বাসিত করেছিলেন। জাতির জনক স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু এবং প্রায় ১১ হাজার রাজাকারকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দান ছাড়াও অনেকের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন। তিনি  বলেন, ১৯৭১ সালে ঘৃণ্য অপরাধকারীরা ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর একই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সাহস করেছিল। কারণ, তাদেরকে মানবতার বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের দায় থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।  জনগণ এখন শান্তিতে বসবাস করছে। তাদের এখন খাদ্য এবং বেঁচে থাকার মতো   অর্থ রয়েছে। জনগণকে সচ্ছন্দে বসবাস করার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে সরকার নিত্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছে।
 
বক্তারা  বলেন, জনজীবনে শান্তি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে বিএনপি-জামাত জোট অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাঁরা  বলেন,”জনগণ শান্তিতে বসবাস করলে তারা অস্বস্তি বোধ করে।তাঁরা  বলেন, ” দেশের মানুষ শান্তিতে আছেন, কিন্তু শান্তিতে নেই অশান্তি বেগম।দেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন, তখন খালেদা জিয়া অশান্তিতে থাকেন।” বক্তারা  বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ”তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে খালেদা জিয়ার ছেলেদের উত্তম-মধ্যম দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। বেগম জিয়াকে বের করে দিতে চেয়েছিলো।  খলেদা জিয়ার  দুর্নীতির তথ্য তো রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ না হয় ধীরে চলছে। কিন্তু যাদের আশা করেন , সেই ”তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তারা কি ধীরে চলবেন?  আপনি যাদের আনতে চান, যাদের কথা শুনছেন তারা তো আপনাকে আগে ধরবেন। হাওয়া ভবনের দুর্নীতির রেকর্ড তাদের কাছে রয়ে গেছে।”
 
আওয়ামী লীগ সভাপতি ওসমান গনির  সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে, সিনিয়র  আওয়ামী নেতা ও মুক্তি যোদ্ধা এ,কে এম ওয়াহিদী, ড: বামুন দশ বসু, ড: কৃষান লাল চক্রবর্তী,  শহিদুল ইসলাম প্রিন্স,  মিজানুর রহমান সাবু , সফিদা বসু , বিশ্বজিত সাহা, ড:আশীষ দেব, মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধ মোস্তাক তালুকদার, আনোয়ারুল কবীর রুমী,  শহিদুল ইসলাম রনি, অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ মামুন। বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রীতিভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসুচী সমাপ্ত হয়।