গৌরনদীতে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ

মোঃ আসাদুজ্জামান রিপন, গৌরনদী ॥ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ারম্যান-মেম্বারদের যোগসাজশে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা লুট পাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূিচ প্রকল্পের শ্রমিকদের ভূয়া নামের তালিকা জমা দিয়ে, কোন কোন প্রকল্পে নির্ধারিত তালিকার অর্ধেকেরও কম, আবার কোন কোন প্রকল্পে নির্ধারিত তালিকার এক তৃতীয়াংশ ও নামমাত্র শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে অনিয়ম ও কারচুপির মাধ্যমে এ লুট পাট চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানাগেছে, উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পের জন্য ৩৬০ জন শ্রমিক, বার্থী ইউনিয়নে ৫ টি প্রকল্পের জন্য ৩৩৫ জন শ্রমিক, চাঁদশী ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পের জন্য ১৬০ জন শ্রমিক, মাহিলাড়া ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পের জন্য ২৬০ জন শ্রমিক, বাটাজোর ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পের জন্য ৩০৫ জন শ্রমিক, নলচিড়া ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পের জন্য ৩২০ জন শ্রমিক, শরিকল ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্পের জন্য ৩১৮ জন শ্রমিকের তালিকা তৈরি করে সংশ্লি­­ষ্ট ইউনিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সিপিসিরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের কাছে জমা দেন। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৩২টি প্রকল্পের আওতায় অতি দরিদ্র ২ হাজার ৫৮ জন শ্রমিককে কাজ দেয়ার জন্য শ্রমিকদের নামের তালিকা ও ইউনিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি জমা দেয়ার জন্য  অক্টোবর  মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্দেশ দেন ইউএনও। সরকারি প্রজ্ঞাপনে ১ অক্টোবর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা উল্লে­খ রয়েছে। প্রত্যেক শ্রমিককে দিনের মজুরি বাবদ ১৭৫ টাকা করে দেয়ার কথা রয়েছে। একজন শ্রমিক প্রতিদিন রাস্তা মেরামতের জন্য ৪৫ ঘনফুট মাটি কাটবে বলে ওই প্রকল্পের আদেশে বলা হয়েছে। ৭টি ইউনিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও শ্রমিকদের তালিকা ১৫ নভেম্বর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাছে জমা দেন। ২১ নভেম্বর উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ওই ৭টি ইউনিয়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও শ্রমিকদের তালিকা অনুমোদন দেয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন বাস্তবায়ন কমিটিকে ২৪ নভেম্বর থেকে প্রকল্প গুলোর কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। গত দুই সপ্তাহে প্রকল্পের অধিকাংশ এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ারম্যান- মেম্বাররা  প্রকল্প গুলোর আওতাধীন কাঁচা রাস্তা পুর্ননির্মাণ ও মেরামত, খাল পুর্ননির্মাণ কোনটি ২/৩ দিন পর শুরু করেন, আবার কোন প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই করেননি। আবার কোন কোন প্রকল্পের সিপিসিদের বিরুদ্ধে সপ্তাহে ২/১ দিন কাজ বন্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে প্রকল্প গুলোর অধিকাংশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনিয়ম ও কারচুপির মাধ্যমে প্রকল্প গুলোর কাজ চলছে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৪ টি প্রকল্পে রোববার (১৬ ডিসেম্বর) কোন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে পশ্চিম সমরসিংহ ছত্তার মোল্ল­­ার বাড়ির কাছ থেকে সরকারি হালট পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মান প্রতিদিন ১১০ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা প্রকল্পে উল্লে­খ থাকলেও এ প্রকল্পের কাজ করাছেন ৩৫ জন শ্রমিক। আশোকাঠি পেট্রোল পাম্প সড়কের বিল্বগ্রামের কালিয়া দমন গুহের বাড়ির উত্তর পাশ হতে ওয়াজেদ আলী মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত ও সূর্যবাড়ির ব্রিজের দক্ষিন পাড় হতে জঙ্গলপট্টি দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৭৫ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা উল্লে­­খ রয়েছে। বিল্বগ্রামের কালিয়া দমন গুহের বাড়ির উত্তর পাশ হতে ওয়াজেদ আলী মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্পে ৭৫ জন শ্রমিকের স্থলে গৌরঙ্গ দাস, মাসুম ফকির, টুটুল খান, শহিদুল সরদারসহ ৫ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। স্থানীয় হানিফ সন্নামাতম সৈয়দ আলী হাওলাদার, আজিজুল হক জানান, সূর্যবাড়ির ব্রিজের দক্ষিন পাড় হতে জঙ্গলপট্টি দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। কটকস্থল সিএন্ডবি হতে মফিজদ্দিন বেপারীর বাড়ি হয়ে চৌধুরী বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৬০ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা প্রকল্পে উল্লে­খ রয়েছে। মঙ্গলবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কোন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। সেখানে আংশিক কাজ করার আলামত রয়েছে। নলচিড়া হাতেম সরদারের বাড়ির সামনে হতে কান্ডপাশা শাহী মসজিদ হয়ে বজলু মৃধার বাড়ির সামন দিয়ে নলচিড়া বাজারের পশ্চিম পাশের ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৪০ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা রয়েছে।এ প্রকল্পে বুধবার কাজল রানি,জব্বার বেপারি, রশিদ খানসহ ৬ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির একাধিক সিপিসি জানান, বিল পাস করার জন্য ইউএনও ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসকে শতকরা ১০ টাকা হারে এবং সংশ্লি­­­ষ্ট প্রকল্পের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসারকে শতকরা ৫ টাকা হারেসহ উপজেলা প্রশাসনকে শতকরা ২৫ টাকা অগ্রিম কমিশন দিতে হয়। যোগসাজশে শতকরা ১০ টাকা হারে অফিস খরচ বাবদ কমিশন নেয়ার কথা অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কমিশন নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্পের অনুকুলে ২৫ দিনের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সময় বৃদ্ধি করা না হলে বাকি টাকা ফেরত যাবে।

গৌরনদীতে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ