গৌরনদী হাইস্কুল এন্ড কলেজ আধুনিক ভবন গড়ে উঠলেও পরীক্ষায় পাশের হার কমেছে

মোঃ জামাল উদ্দিন, গৌরনদী ॥ আধুনিক ভবন গড়ে উঠলেও গৌরনদী হাইস্কুল এন্ড কলেজের পড়াশোনার মান দিন দিন কমছে। জেএসসি,এসএসসি ও এইচ এসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিক থেকে গৌরনদীর অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো সাফল্য অর্জন করলেও এখানে বিপর্যায় দেখা দিয়েছে। এ কারনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম উৎকন্ঠা।

জানাগেছে, চলতি এইচএসসির টেষ্ট পরীক্ষায় উক্ত কলেজ থেকে সর্বমোট ৩২৫ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে। এরমধ্যে মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থী সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়, বাকী ২৫৫ জন ফেল করে। তার পরেও কলেজ গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২ বিষয়ে অকৃতকার্যসহ মোট ২৪১ জন শিক্ষার্থীকে ফরম পূরনের সুযোগ দেয়। বাকি ৮৪ জন শিক্ষার্থীরা ৩ থেকে ৬ বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় তাদের ফরম পূরনের সুযোগ দেয়নি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে গত ২৭ ডিশেম্বর দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে গৌরনদী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ওইসব শিক্ষার্থীরা। তারা গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। কয়েক জন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানান, কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ক্লাসে পাঠদান না করে প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার নিয়ে ব্যাস্ত। তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে তারা ইচ্ছা করে ছাত্রীদেরকে ফেল করায়।

জানাগেছে, গত বছর অত্র কলেজ থেকে ২০১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলেও ১০০ জন শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছে। এ জন্য বরিশাল বোর্ড থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করা হয়েছিল। এ কারনে আগামী এইচ এসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারী ২৪১ জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ও শংকিত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফলাফলে যদি আগের বছরের ন্যায় বিপর্যয় ঘটে তাহলে কলেজটির এমপিও বাতিল হতে পারে বলেও শংকিত সবাই। এ কারনে টেষ্ট পরীক্ষায় ফেল করা ৮৪ জন ছাত্রীকে কোন ক্রমেই পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ  দেবেনা কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিভাবক ও স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট খারাপ হওয়ার জন্য শিক্ষকদের দায়ী করেন। ফলাফল খারাপ হওয়ার কারনে সচেতন বাপ-মা তাদের মেয়েদের এখানে পড়াতে চাননা। যারা ভর্তি করান তাদের কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে পরবর্তি সময়ে তাদের সন্তানদের অন্যত্র ভর্তি করতে বাধ্য হন।

স্থানীয়দের অভিযোগ,রাজনৈতিক বিবেচনায় অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের অবৈধ কোচিং বানিজ্য, ক্লাশে পাঠদানে ফাঁকি দেয়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে গৌরনদী হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। তাই পাশের পরিবর্তে ফেলের হার বাড়ছে, সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। ১৯৬৫ সালে গৌরনদী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি উপজেলা সদরের প্রান কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি হচ্ছে গৌরনদীর প্রথম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এলাকার একমাত্র প্রথম নারী শিক্ষার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। তাই গৌরনদী বালিকা বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে কলেজে উন্নীত করা হয়। টিনের ঘর ভেঙ্গে এখানে তৈরী হয়েছে ৩ টি সুরোম্য দ্বিতল ভবন, একটি বিঞ্জান ভবন ও একটি একাডেমিক ভবন। কলেজ বাউন্ডারীর উত্তর পাশে দ্বিতল ভবনটি তৈরীর পর থেকেই পরিত্যাক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন যাবত পড়ে আছে।

জানাগেছে, ৫/৬ বছর আগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যায়ে ওই ভবনটি তৈরী করা হয়েছে। আনসার ভিডিপি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও শিক্ষানুরাগী জিএম হারুন মৃধা জানান, কলেজ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এখানে স্বজনপ্রীতি, অনৈতিক লেনদেন ও রাজনৈতিক বিবেচনায় অধিকাংশ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যাদের পাঠদানের যোগ্যতা নেই। কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক দলের নেতা। তাই এটাকে রাজনৈতিক পাঠশালা বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মোঃ হারুন অর রশিদ নামক একজন অভিভাবক জানান, কলেজ কমিটি ও শিক্ষকদের গাফলতির কারনে ফলাফল খারাপ হচ্ছে। তবে গৌরনদী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মীর আব্দুল আহসান রেজাল্ট বিপর্যায়ের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দায়ী করেণ। তিনি জানান, অধিকাংশ অভিভাবক অসচেতন । তারা বাড়ীতে মেয়েদের পড়ার জন্য চাপ দেননা। এমনকি কলেজে আসার জন্য চিঠি দেয়া হলেও তারা আসেননা।