রোগ মুক্তির নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ রোগমুক্তির নামে এক ভ্যান চালক স্কুল ছাত্রের পুরুষাঙ্গ এসিডে ঝলসে দিয়েও ক্ষ্যান্ত হয়নি ভন্ড ফকির হাফেজ সরদার। কৌশলে ওই পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় লক্ষাধিক টাকা ও একটি গাভী। অপর একটি বাড়িতে চিকিৎসা করতে গিয়ে রাতের খাবারের সাথে চেতনা নাশক দ্রব্য খাইয়ে পরিবারের সবাইকে অচেতন করে সর্বস্ত্র লুট করে নেয়া হয়। আরেক স্কুল পড়–য়া ছাত্রকে চিকিৎসার নামে করা হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন। এহেন অসংখ্য অভিযোগের পর সোমবার রাতে কৌশলে ভুক্তভোগীরা ওই ভন্ড ফকিরকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বেজহার গ্রামে।

ভুক্তভোগী ভীমেরপাড় গ্রামের ভ্যান চালক ও মাহিলাড়া এ.এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র আজিজ কবিরাজ জানান, তার দিনমজুর পিতা তোতা মিয়া কবিরাজ একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। তার আরোগ্যর জন্য গত তিনমাস পূর্বে লোকমুখে খবর পেয়ে পাশ্ববর্তী নাঠৈ (গোবর্দ্ধন) গ্রামের মৃত হাসেম সরদারের পুত্র গ্রাম্য কবিরাজ (ফকির) হাফেজ সরদারের কাছে নেয়া হয়। কবিরাজ হাফেজ কৌশলে তোতা মিয়ার চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। আজিজ আরো অভিযোগ করেন, কবিরাজ হাফেজ সরদার কৌশলে তার বাড়িতে তাকে (আজিজকে) নিয়ে রাতে ঘুমের ঘোরে তার পুরুষাঙ্গে এ্যাসিড নিক্ষেপ করে ঝলসে দেয়। পরবর্তীতে আজিজের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ও মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে বিভিন্ন সময় নগদ ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এ টাকার জন্য আজিজের পরিবারকে ধারদেনা, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলন ও বাড়ির মূল্যবান গাছপালা বিক্রি করতে হয়েছে। এতেও আজিজের শারিরিক উন্নতী না হওয়ায় ভন্ড ফকির হাফেজের চাহিদা মোতাবেক ২৫ হাজার ৫’শ টাকা মূল্যের একটি গাভী ক্রয় করে দেয়া হয়। একইভাবে ভন্ড ফকির হাফেজ চিকিৎসার কথা বলে বাটাজোরের জয়শুরকাঠী গ্রামের মজিবর খলিফার পুত্র আল-আমিন খলিফার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা, মাহিলাড়া গ্রামের রহিম সরদারের পরিবারের সবাইকে রাতের খাবারের সাথে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে সর্বস্ত্র লুট করে নেয়। এছাড়াও তার (হাফেজের) বিরুদ্ধে এলাকায় বিস্তার অভিযোগ রয়েছে।

অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার রাত সাত টার দিকে বেজহার গ্রামের জনৈক আবুল হাসান ও রিঙ্কু কৌশলে ভন্ড ফকির হাফেজকে তাদের বাড়িতে চিকিৎসার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় ভুক্তভোগীরা ভন্ড ফকির হাফেজকে গণধোলাই দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর কাছে সোর্পদ করে। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান পিকলু ভন্ড ফকিরকে থানা পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন ভন্ড ফকির হাফেজ সরদার। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আবুল কালাম বলেন, ভূক্তভোগী আজিজ কবিরাজ বাদি হয়ে ভন্ড ফকির হাফেজ সরদারের বিরুদ্ধে ওইদিন রাতে থানায় মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ ভন্ড ফকিরের বাড়ি থেকে গাভীটি উদ্ধার করেছে।