নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট, বাম রাজনীতির পুরোধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্মল সেনের ৮২ তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে (গত বছরের ৩ আগস্ট) দু’নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, দেশকে ওয়ান ইলেভেনের দিকে ঠেলে দিবেন না। তিনি আরো বলেছিলেন, দেশের মানুষ শান্তি চায়, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দু’দলের মধ্যে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে দু’নেত্রীকে এক টেবিলে বসার জন্য প্রবীণ সাংবাদিক নির্মল সেন আহবান করেছিলেন।
নিমর্ল সেন ১৯৩০ সনের ৩ আগষ্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত ও মাতার নাম লাবন্য প্রভা সেন গুপ্ত। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন পঞ্চম। নির্মল সেনের পিতা সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত কোটালীপাড়ার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশনের গণিত শিক্ষক ছিলেন। এর আগে সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত ঢাকার ইষ্ট বেঙ্গল ইনষ্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন। দেশ বিভক্তির পরে নির্মল সেনের পিতা মাতা অন্য ভাই বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুন্ঠ ভালবাসার কারনে তিনি (নির্মল সেন) দেশেই থেকে যান। নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠী জেলায় তার পিসির বাড়িতে। তিনি ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠী বিএম একাডেমী থেকে ১৯৪৪ সনে ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। পিসির বাড়িতে যাওয়ার আগে নির্মল সেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জিটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণীতে এক বছর লেখা পড়া করেছেন। এছাড়া তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও মাষ্টার্স পাস করেন। নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় “ভারত ছাড়ো” আন্দোলনের মাধ্যমে স্কুল জীবন থেকে। কলেজ জীবনে তিনি অনুশিলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন তিনি শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি গণতান্ত্রীক বিপ্লবী পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে। ১৯৬৯ সনে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্যে দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। তারপর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রযেছে। তার লেখা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ, মানুষ সমাজ রাষ্ট্র, বার্লিন থেকে মষ্কো, মা জন্মভূমি, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, আমার জবানবন্ধী হচ্ছে উল্লেখযোগ্য। নির্মল সেনের জীবনের শেষ ইচ্ছে ছিলো তার বাড়িতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার। তার শেষ ইচ্ছে আর পূরন হয়নি।