গৌরনদীতে কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্পে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক সাড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ সরকারের গৃহীত কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্পে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক সাড়া জুগিয়েছে। ঘর থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রশাসন, আইন ও বিচার বিভাগ, ব্যবসা-শিল্প ও বানিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের শ্রমশক্তির পর এবারই সর্বপ্রথম বরিশালের গৌরনদীতে কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্পে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এসব নারী শ্রমিকেরা অর্থনীতিতে নিজেদের অবদান রাখায় নিজেদের গর্বিত মনে করছেন। এছাড়া নারীর এগিয়ে চলাকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মানবাধিকার কর্মীরা। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের হাতের ছোঁয়ায় ক্রমেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গ্রামীণ জনপদের দৃশ্য।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে গৌরনদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে কর্মসংস্থান কর্মসূচীর কাজ শুরু করা হয়। এসব ইউনিয়নে প্রকল্প অনুসারে ২ হাজার ৫৮ জন শ্রমিকের প্রত্যেককে দিনের মজুরি বাবদ ১৭৫ টাকা করে নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রত্যেক শ্রমিকেরা প্রতিদিন ৪৫ ঘনফুট মাটি কেটে থাকেন। সাতটি ইউনিয়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও শ্রমিকদের তালিকা ১৫ নবেম্বর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাছে জমা দেয়ার পর ২১ নবেম্বর উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ওই সাতটি ইউনিয়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও শ্রমিকদের তালিকা অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে গত ২৪ নবেম্বর থেকে প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করা হয়েছে। সেমতে গত ৬ জানুয়ারি মাহিলাড়া ইউনিয়নের ১নং প্রকল্প এলাকার খাল পূর্ণখনন সহ রাস্তা সংস্কার ও নির্মান কাজ পরিদর্শন করেছেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মোঃ আজাদুর রহমান মল্লিক। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, ওসি আবুল কালামসহ স্থানীয় গনমান্য ব্যক্তিবর্গরা। নেতৃবৃন্দরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। উপ-সচিব বলেন, মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ন্যায় দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা এভাবে কাজ করলে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার গড়তে আমাদের আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।

সরেজমিনে উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের ১নং প্রকল্প পশ্চিম বেজহার বড় বাড়ির খালের ওপর ব্রীজ থেকে ভীমেরপাড় আলাল হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত ১.৫০ কিলোমিটার খাল পূর্ণখনন। ২নং প্রকল্প আশোকাঠী ফিলিংশ ষ্টেশন থেকে বিল্বগ্রাম কালিয়া দমন গুহ’র বাড়ির উত্তর পাশ থেকে ওয়াজেদ আলী মেম্বরের বাড়ি হয়ে কাগজিপাড়া আরজ আলী সরদারের দোকান এবং জঙ্গলপট্টি সূর্য বাড়ির ব্রীজের দক্ষিণ পাড় থেকে দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত। ৩ নং প্রকল্প মাহিলাড়া জাহাঙ্গীর মাস্টারের বাড়ি থেকে বাদল মাস্টারের বাড়ি ও সেন্টু খন্দকারের বাড়ির সম্মুখ থেকে নুরু কবিরাজের বাড়ির সম্মুখের ইটের রাস্তা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত। ৪নং প্রকল্প পূর্ব বেজহার অমল মাস্টারের বাড়ি থেকে কালী মন্দির হয়ে সুভাষ ডাক্তারের বাড়ির উত্তর পাশের রাস্তা পর্যন্ত ১.৫০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মান। ৫নং প্রকল্প পূর্ব শরীফাবাদ হাজী ওয়াজেদ আলী শিকদারের বাড়ীর ব্রীজের উত্তর পাশ থেকে তেতুলতলা হয়ে সেন্টু সরকারের বাড়ি এবং বাঘার ভাষাই শিকদারের বাড়ি থেকে বাঘার দিঘী পর্যন্ত ২.৫০ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই ইউনিয়েনের ৫টি প্রকল্পে ২৬০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা রাস্তা নির্মান ও খাল খনন কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ২ নং প্রকল্পে ৭৫ জন নারী-পুরুষ শ্রমিকেরা সমান তালে কাজ করছেন। এখানকার শ্রমিক সর্দার মোজাম্মেল সরদার, শ্রমিক হাচান সরদার, কহিনুর বেগম, বিলকিস বেগম, টুটুল খান, উজ্জ্বল দে, সাধনা দে, আলীম সরদার, তাহের আলী সরদার, শহিদুল সরদারসহ একাধিক শ্রমিকেরা জানান, সরকারের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর এ পদক্ষেপের কারনে তারা ৪০ দিনের জন্য হলেও কর্মসংস্থান খুঁজে পেয়েছেন।

স্থানীয় গৃহিনী বিউটি বেগম, হানিফ সন্নামাত, সৈয়দ আলী হাওলাদার, আজিজুল হকসহ অনেকেই জানান, তাদের চলাচলের জন্য দীর্ঘদিন থেকে কালিয়া দমন গুহ’র বাড়ির উত্তর পাশ থেকে ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলীর বাড়ি পর্যন্ত সড়কটি অনুপযোগী ছিলো। ৪০ দিনের কর্মসূচীর মাধ্যমে এ কাজটি সঠিক ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তারা বর্তমান সরকারের এ কর্মসূচীকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইভাবে সূর্যবাড়ির ব্রিজের দক্ষিন পাড় থেকে জঙ্গলপট্টি দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত জনগুরুতপূর্ণ রাস্তার মেরামত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। সূত্রমতে, স্ব-স্ব এলাকার ইউপি সদস্যদের এসব কাজের জন্য সিপিসি নিয়োগ করা হলেও মূলত পুরো কাজের কঠোর ভাবে তদারকি করছেন মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ও সরকারি একজন করে ট্যাক অফিসার। চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, প্রকল্প গুলোর আওতাধীন কাঁচা রাস্তা পুর্ননির্মাণ ও মেরামত, খাল পুর্ননির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি এবার নারীদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তার ইউনিয়নের প্রকল্প এলাকার কাজ সঠিক ভাবে সমাপ্ত করাই তার কাছে এখন চ্যালেঞ্জ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, মাঠপর্যায় ঘুরে দেখা গেছে, এ সমস্ত কর্মসূচী এলাকার দারিদ্র বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বেকার পরিবারের নারী ও পুরুষেরা অল্প সময়ের জন্য হলেও খুঁজে পেয়েছে কর্মসংস্থান। সাথে সাথে গ্রামীণ জনপদেও এর সুফল বইতে শুরু করেছে। সরকারের কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্পের মাধ্যমে কাঁচা রাস্তা পুর্ননির্মাণ ও মেরামত, সেচকাজের জন্য জনগুরুতপূর্ণ খাল খননের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্প ছাড়াও সরকারের অন্যান্য কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলা ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ কর্মসূচী ইত্যাদি।