বরিশালে গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি স্কুলে স্কুলে বিক্রয় প্রতিনিধিরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে নুতন বছরের প্রথমদিন নুতন বই বিতরণের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বরিশালসহ বিভিন্ন উপজেলার বইয়ের লাইব্রেরীগুলোতে বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড বইযের ছড়াছড়ি দেখে দিশেহারা হয়ে পরেছে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারের অনুমোতি-অনুমোদন ছাড়াই ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের মানবন্টন এবং নোট-গাইডের বেপরোয়া বানিজ্যে মেতে উঠেছে অনুপম, জুপিটর, গ্যালাক্সী, পাঞ্জেরী ও লেকচার প্রকাশনী।

বিভিন্ন বইয়ের লাইব্রেরীগুলোতে এখন ওইসব প্রকাশনীর গাইড ও নোট বইয়ের ছড়াছড়ি। দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে শুরু করে নবম শ্রেণীর ওইসব নোট বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। শুধু বইয়ের দোকানেই নয় ওইসব প্রকাশনীর গাইড ও নোট বই বিক্রির জন্য বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা সরাসরি স্কুলে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গাইড ও নোট বই কেনার জন্য আকৃষ্ট করছে। গত ১০ জানুয়ারি গৌরনদী পৌর এলাকার দিয়াশুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, অনুপম প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি সুমন মাহমুদ (২৮) ও বিজয় (২৫) লাইব্রেরীতে বসে আছেন। শিক্ষকদের সবার টেবিলেই অনুপমসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর নোট বই। তারা নোট বই নাড়াচাড়া করছিলেন। তাৎক্ষনিক এ প্রতিনিধির সাথে ওইসব বিক্রয় প্রতিনিধিদের সাক্ষাত হলে তারা প্রথমে নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রাখেন। পরে তারা বলেন, বাজারেতো অনেক নোট বই এসেছে। সরকারতো সবই দেখছে কই সরকারতো বাঁধা দিচ্ছেনা। প্রধান শিক্ষিকা নিহার পারভিন জানান, আমরা কোন কিছু বলা বা জানার আগে অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েদের নোট বই কিনে দিয়েছেন। আমরা কাউকে নোট বই ক্রয় করতে বলিনি।

গৌরনদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বইয়ের লাইব্রেরীগুলোতে এখন ওইসব প্রকাশনীর নোট বইয়ের ছড়াছড়ি। দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে নবম শ্রেনীর ওইসব নোট বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। পাঞ্জেরী প্রকাশনীর তৃতীয় শ্রেনীর গাইড বইয়ের নাম হচ্ছে একের ভিতর এগারো। বইয়ের গায়ে লেখা আছে সৃজনশীল ধারায় যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের আলোকে রচিত। বইয়ের দ্বিতীয় পাতায় বলা হয়েছে, এনএপিই’র নির্দেশনা অনুয়াযী যোগ্যতা ভিত্তিক প্রশ্নপত্রসহ মডেল টেষ্ট ও উত্তর দেয়া আছে। এ বইটির বিক্রয় মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ২৭১ টাকা। অন্যান্য শ্রেনীর নোট বইয়ের দাম আরো বেশি।

গৌরনদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ চুন্নু ফকিরের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গাইড বই পড়লে শিশুরা মেইন বইয়ের দিকে নজর দিবেনা। তাদের গাইড বইয়ের প্রয়োজন নেই বলে তিনি জানান। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মাদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, নোট বই ক্রয়-বিক্রয় আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। শীঘ্রই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এ ব্যাপারে অভিযান চালানো হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে ইতোমধ্যে গাইড বই বিক্রির অপরাধে বরিশাল নগরীর তিনটি লাইব্রেরীতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে মোটা অংকের টাকা জরিমানা ও একটি লাইব্রেরীর গোডাউন সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।