চায়ের দোকান, যাত্রী ছাউনীসহ অলিগলিতে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ প্যাথলজিক্যাল সেন্টার প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেবা নয় বানিজ্যিক ভিত্তিতে চায়ের দোকান, যাত্রী ছাউনী, ঔষধের দোকানসহ অলিগলিতে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো যত্রতত্র ভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে ১০ টি প্যাথলজিক্যাল সেন্টার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রীয়তার কারণে বরিশালের উত্তর জনপদের জনগুরুতপূর্ণ ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের সম্মুখের ওইসব প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা। এসব অবৈধ প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই চলছে। রমরমা অবৈধ বানিজ্যের এসব প্যাথলজির মালিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পরীক্ষার (টেষ্ট) নামে রোগীদের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। টেষ্ট না করেই রির্পোট প্রদানের অভিযোগও রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। তবে এ ধরনের অনৈতিক বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিশেষ অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, নাম সর্বস্ব অধিকাংশ প্যাথলজিতে নেই কোন টেকনিশিয়ান বা প্যাথলজিষ্ট। এমনকি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য নেই প্রয়োজনীয় মেশিনপত্র ও রি-এজেন্ট। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টদেরকে নিয়মিত মাসোহারা প্রদান করার কারনেই ওইসব অবৈধ প্যাথলজির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা কেউ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের সম্মুখে বাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ১০টি প্যাথলজি সেন্টার। এগুলো হচ্ছে, আঁখি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, শাপলা প্যাথলজিক্যাল সেন্টার, পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, আশোকাঠী ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, নিরাময় ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, মা-মনি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, আশা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, আমেনা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, বনানী আদর্শ প্যাথলজি ও সোনার বাংলা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এখানে একটি চায়ের দোকানের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে আশা নামের একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। পাশেই অপর একটি ঔষধের দোকানের মধ্যে রয়েছে আমেনা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। একইভাবে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশ্ববর্তী আশোকাঠী বাসষ্ট্যান্ডের একটি পরিত্যক্ত যাত্রী ছাউনীর মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে সোনার বাংলা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এছাড়াও অলিগলির মধ্যে কাঁচা টিনের ঘরে আরো তিনটি প্যাথলজি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। সম্পূর্ন নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে ওঠা ওইসব প্যাথলজিতে রোগীদের জন্য মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। অধিকাংশ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিকরাই হচ্ছেন সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মী। এখানে প্যাথলজি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।

স্থানীয়রা জানান, এসব প্যাথলজি ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন হাসপাতালে কর্মরত অধিকাংশ চিকিৎসকসহ কয়েকজন কর্মচারীরা। রোগী পাঠানোর জন্য তাদেরকে ৫০ থেকে ৬০% কমিশন প্রদান করা হয়। অনেক চিকিৎসককে আগে ভাগেই টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে হাসপাতালের আধুনিক এক্সরে মেশিন, ইসিজি মেশিন ও প্যাথলজি সেন্টার থাকা সত্বেও কমিশনের আশায় ওইসব অসাধু চিকিৎসকেরা বিভিন্ন টেষ্টের জন্য রোগীদের বাহিরে পাঠিয়ে থাকেন। দিনের শেষে মোটা অংকের কমিশন নিয়ে তারা বাসায় ফেরেন। সূত্রে আরো জানা গেছে, গৌরনদী হাসপাতালের রেডিও গ্রাফার পরিমল চন্দ্র মৃধা দীর্ঘদিন যাবত আশোকাঠী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সাথে যৌথ ব্যবসা করে আসছেন। তাই হাসপাতালে আসা বিভিন্ন রোগীদের তিনি কৌশলে টেষ্টের জন্য নিজের প্যাথলজিতে নিয়ে যান এবং নিজেই এক্সরে করেন। যে কারনে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি প্রায় ১৫/১৬ মাস ধরে বিনষ্ট হয়ে পরে রয়েছে। নুতন এক্স-রে মেশিনটি আসার মাত্র ৭/৮ মাসের মধ্যেই নষ্ট হয়েছে। এর আগেও কোরিয়া থেকে আনা একটি আধুনিক এক্স-রে মেশিনও একইভাবে বিনষ্ট হয়। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, রেডিও গ্রাফার পরিমল গৌরনদী হাসপাতালে দীর্ঘ আট বছর যাবত একনাগারে চাকুরি করছেন। এক্স-রে মেশিন বিকল থাকায় দীর্ঘদিন যাবত তিনি কাজ না করেই বেতন ভাতা উত্তোলন করে নিচ্ছেন। যে কারনে তিনি ইচ্ছা করেই নিজের ব্যবসা ঠিক রাখার জন্য এক্স-রে মেশিনটি বিকল করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাকে অন্যত্র বদলী করা না হলে এ অবস্থার উন্নতী হবেনা বলেও সূত্রটি জানিয়েছেন।

গৌরনদী পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর এস.এম ফিরোজ রহমানের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্যাথলজি ব্যবসার কারনে গৌরনদী হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। প্যাথলজির লোকজন প্রতিদিন টেষ্টের রোগীদের নিয়ে টানাটানি শুরু করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হাসপাতাল থাকে তাদের দখলে। এনিয়ে নিজেদের মধ্যেও অসংখ্যবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জনের কাছেও বহুবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন সুফল না হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তদন্তে এসে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে মোটা অংকের টাকা পেয়ে চলে যান। তাই তিনি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অবৈধ প্যাথলজির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুনীল চন্দ্র দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে সমস্ত প্যাথলজির লাইসেন্স নেই এবং টেকনোলজিষ্ট নেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যেসব চিকিৎসক ও কর্মচারীরা ওইসব অবৈধ ব্যবসার সাথে যুক্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

চায়ের দোকান, যাত্রী ছাউনীসহ অলিগলিতে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ প্যাথলজিক্যাল সেন্টার প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা