গৌরনদী থেকে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা

মো: রফিকুল ইসলাম সবুজ ॥ কালের আবর্তে গৌরনদীর মত গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিশু-কিশোরদের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা। এখানকার শিশু-কিশোররা রূপকথার গল্পের মতো বিলুপ্ত প্রায় গ্রামীণ খেলাধূলার নাম শুনে আসছে। সরকারি বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, স্থানীয় ক্লাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অভিভাবদের অবহেলা, গ্রামীণ খেলোয়ারদের অবমূল্যায়ন এর কারণে হারাতে বসছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা। তাই গ্রাম বাংলার মানুষ যখন সময় পায় তখন নেশা দ্রব্য গ্রহণ না হয় ডিস কম্পিউটার, ফেইসবুক, টমান জেরী এবং ডড়ি মনের মতো বিদেশী সংস্কৃতি বেছে নেয়। তাই খেলাধূলার মত বিষয় পাঠ্য পুস্তুকে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা।

এযুগের শিশু-কিশোরদের কাছে মজার খেলা কাবাডি, মোরগের লড়াই, ষাড়ের লড়াই, হাড়ি ভাঙ্গা, লুকোচুড়ি এখন শুধু রূপকথার গল্প। বর্তমানে গৌরনদীতে ক্রিকেট, ফুটবল খেলার জনপ্রিয়তার নিচে চাপা পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এ খেলাধূলা। অথচ এক যুক পূর্বেও এ খেলার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ চুম্বি।

গ্রামীণ খেলাধূলার অতীত ও বর্তমান নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলাপকালে সরকারি গৌরনদী কলেজের ছাত্র মো: মারুফ হোসেন বলেন, সার্কাস, যাত্রাবালী, রামশাম, চোড়- পুলিশ, ডাকাত বাবু, রশি টানা তৈলাক্ত বাঁশে ওঠা, বালিশ যুদ্ধ, আইস বাইশ খেলার নাম শুনেছি কিন্তু খেলাধূলা গ্রামে না থাকার কারণে এই খেলার নিয়মকানুনও জানিনা। তাই বর্তমানে ফেইজবুক চ্যাটিং, মোবাইল কলিং, ভিডিও গেইমস, ডিস এন্টেনার মাধ্যমে ইংরেজি, চায়না, হিন্দির মত মুভি দেখে সময় কাটাই।

গৌরনদী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী তানহা বিনতে মুস্তাফিজ ও ফারজানা ইয়াসমিন মিম জানান গোল্লাছুট, দাড়িয়া বান্দা, এক্কাদোক্কা, ফুলটোক্কা, বউ ছি, সুই সুতা, সাত চারা, কুতকুত, রুটি তাওয়া, ছোয়া ছুই, দাড়িয়া বান্দা, বাইসকোপ, গানের কলি ইত্যাদি খেলার নাম দাদী-নানীদের কাছে শুনিছি। কিন্তু এখন এই সকল খেলাধূলা গ্রামগঞ্জে দেখা যায় না। তাই এর নিয়ম কানুন জানি না। পড়া লেখার পাশাপাশি সুযোগ পেলে স্টার জলসা, স্টার প্লাস, সংগীত বাংলা, জি-বাংলা, লাইফ ওকে দেখে সময় কাটাই। তাই গৌরনদী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, গ্রামের এ সকল ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা যদি প্রত্যেক স্কুলে ক্রিকেট ফুটবলের পাশাশাশি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষানো হয় এবং পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং ক্রীড়া শিক্ষকরা তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে তাহলে গ্রামীণ এই সকল ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা শিখে কিশোর-কিশোরীরা এর মজা উপভোগ করতে পারবে। তখন আর এ সকল খেলাধূলা কিশোর-কিশোরীদের কাছে রূপ কথার গল্পের মতো মনে হবে।