বরিশাল বিভাগে ফার্মাসিস্ট,লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী’র ছড়াছড়ি ॥ প্রচলিত আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই

শুভব্রত দত্ত, বরিশাল ॥ বরিশাল নগরীসহ বিভাগ জুড়ে হাজার হাজার ওষুধের দোকান থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফার্মাসিস্ট ছাড়াই চালানো হচ্ছে এসব ফার্মিসীগুলো। পাশাপাশি ড্রাগ-লাইসেন্স ছাড়াও ওষুধের দোকান রয়েছে কয়েক শত। প্রচলিত আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরকে ব্যুরো আঙ্গুল দেখিয়ে ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ফার্মেসীগুলোতে গোপনে এবং ওপোনে দেধাড়ছে বিক্রি হচ্ছে নেশা জাতীয় ওষুধ। এরমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ,সিরিঞ্চ,জি-মরফিন ও প্যথেড্রিন। দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে একাধিকবার তাদেরকে গ্রেফতার করতে র‌্যাব ও থানা পুলিশ সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ও ড্রাগ প্রশাসন এসব অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রন ও ড্রাগ লাইন্সেস বাতিল করতে পুরোপুরি ব্যর্থ বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে অনৈতিক চুক্তির কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে অর্ধশিক্ষিত ও ওষুধ সম্পর্কে অজ্ঞ বিক্রেতারা ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি কখনও কখনও ইচ্ছেমত ওষুধ দেয়ায় অনেকেই ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও অধিকাংশ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম পেঁচিয়ে লেখার কারণেও সঠিক ওষুধ নির্ণয়ে ভুল করছে তারা।

ড্রাগ প্রশাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, বিভাগে মোট প্রায় ৬ হাজার ২শত ৫৩টি বৈধ্যভাবে ড্রাগ লাইন্সেস নিয়ে ওষুধ ব্যবসার সাথে জরিত রয়েছে। এরমধ্যে বরিশালে ২২ শত ২৮টি,ভোলায় ৬০০টি, ঝালকাঠিতে ৩৯০টি, পটুয়াখালীতে ৯৫৫টি, বরগুনায় ৭১০টি ও পিরোজপুরে ১ হাজার ৩শত ৭০টি লাইন্সেস রয়েছে। আর নগরী রয়েছে ৭ শতাধিক লাইসেন্স। সূত্র আরও জানায়, বিভাগের ৬ জেলায় এসব ওষুধের দোকান নিয়ন্ত্রন করার জন্য বিভাগটিকে ৩টি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে।

বরিশাল,ভোলা ও ঝালকাঠি নিয়ে বরিশাল জোন,পটুয়াখালী ও বরগুনা নিয়ে পটুয়াখালী জোন এবং পিরোজপুর জেলা নিয়ে পিরোজপুর জোন করা হয়। একজন ড্রাগ সুপারের অধীনে এসব জোনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অফিস। বরিশাল নগরীসহ জেলার ৯ উপজেলা এবং পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও প্রধান প্রধান বন্দর এলাকায় রয়েছে অসংখ্য ওষুধের দোকান।

ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির মতে, সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজারের ওপরে ফার্মেসী রয়েছে বরিশাল বিভাগে। এরমধ্যে প্রায় পাঁচশতাধিক দোকান চালানো হয় ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া। যাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ব্যবসায়ী সমিতির।

কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম জানান, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি বরিশাল শাখার আওতায় রয়েছে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরগুনা। বিভিন্ন ফার্মেসীতে সার্বক্ষণিক ফার্মাসিস্ট না থাকার বিষয়টি সত্য বলে মন্তব্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মূলত ফার্মাসিস্ট সঙ্কট রয়েছে। ফলে অনেক ফার্মেসীর মালিক নিজেই প্রশিক্ষণ নিয়ে ফার্মাসিস্ট হয়েছেন। তবে তাদের অনেকেই সার্বক্ষণিক দোকানে থাকেন না।

সমিতির সম্পাদক কেএমশাহ আলম আনসারী জানান, মূলত ওষুধ ব্যবসায়ে মুনাফার বিষয়টি হিসাব করে দোকানে সার্বক্ষণিক ফার্মাসিস্ট রাখাও সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি না করার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, জনস্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখিত বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। প্রয়োজন সর্বসাধারনে মাঝে সচেতনতা মূলক প্রচার প্রচারনা। তাছাড়া বাদ্ধতামুলক  ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রদান করে ব্যবসা করা এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি না করা।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বরিশাল বিভাগের সহকারী পরিচালক এটিএম জাহিদ হোসেন জানান, লাইসেন্সবিহীন দোকান নেই বললেই চলে। গ্রাম অঞ্চলে কোন রকম ওষুধের নাম পোড়তে পাড়ে এমন হাতুরে চিকিৎসক রয়েছে। কোনো ধরনের অনৈতিক চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করলেন ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক জাহিদ হোসেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। পাশাপাশি এ বিভাগে ওষুধ প্রশাসনের ৩টি জোন থাকলেও কোনো অফিসেই নেই ড্রাগ সুপার। অন্যান্য পদগুলির অধিকাংশ রয়েছে শূন্য।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শহিদুল ইসলাম বলেন, কাগজ কলমে নয় বাস্তবে প্রতিটি ওষুধের দোকানে সার্বক্ষণিক ফার্মাসিস্ট থাকা এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। তার সাথে দরকার ওষুধ ক্রয়কারীকে সাবধানতা অবলম্বর করে ওষুধ ক্রয় করা।