বরিশাল বিআরটিএর নতুন লাইন্সেস বাবদ অর্ধ কোটি টাকা ঘুষ!

উম্মে রুম্মান, বরিশাল  ॥ আলেফা – মাহেন্দ্র নামের ঘাতক  যানবাহন বন্ধের জন্য বরিশাল নগরবাসী বাস মালিক সমিতি ও বরিশাল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দেয়ার পরও বরিশালের বিআরটিএ’র আঞ্চলিক কমিটি ১৫ জানুয়ারী আরো দু’শ নতুন আলফা- মাহেন্দ্র , পিয়াজা, এপিও এবং জেএস নামের অবৈধ যানবাহনের নতুন লাইন্সে দিয়েছে। এ লাইন্সেস প্রদান বাবদ অর্ধ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানাগেছে। এক পরিবহন শ্রমিক নেতা আলফা মাহেন্দ্র গাড়ির নতুন লাইন্সেস বাবদ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনিই বিআরটিএ’র আঞ্চলিক কমিটির সাথে ঘুষ লেনদেনের মধ্যস্বত্ব ভোগী হিসাবে কাজ করছেন বলে সংশি¬ষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ঐ নেতাই প্রতিটি অবৈধ যানবাহন মেট্টোপলিটন এলাকায় চলাচলের জন্য দৈনিক দু’শ টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এরমধ্যে একশ টাকা তার সংগঠনের জন্য আর  একশ টাকা পুলিশের জন্য তোলা হয়। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যন্ত এ টাকার অংশ পেয়ে থাকেন। সার্জেন্টদের হাত ঘুরে এ টাকা শীর্ষ মহলে পৌছায় আলফা-মাহেন্দ্র চলাচলে কোথাও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে না। সর্বশেষ ১৫ জানুয়ারী যে অর্ধকোটি টাকার লেনদেন হয়েছে তার বিনিময় ঐ দিনই  পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় নতুন দু’শ যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। আলফা-মাহেন্দ্র দ্রুত গতিতে নগর চষে বেড়ানোর কারনে দূঘর্টনা বেড়ে যাওয়ায় নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আন্দোলন শুরু করতেই নতুন এ লাইন্সে প্রদান করায় সকল সচেতন মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বরিশাল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে নতুন এ লাইন্সে প্রদানের খবরে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে আগামী রবিবার আলফা-মাহেন্দ্র বন্ধের দাবীতে মানবন্ধন কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়েছে। প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক লিটন বাশার জানান-শুধু মানববন্ধন নয় আলফা মাহেন্দ্র বন্ধের দাবীতে প্রয়োজনে বিআরটিএ এবং পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী গ্রহন করা হবে। একই দাবীতে গতকাল রাতে মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দীনের নেতৃত্বে নগরীতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।

বরিশাল বাস মালিক সমিতি গতকাল জরুরী সভা করে নতুন লাইন্সে দেয়া যানবাহন রাস্তায় নামার সাথে সাথে অনির্দিষ্ট কালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেন আলম জানিয়েছে সড়ক দূঘর্টনা উদ্বেগজনক বৃদ্ধি পেলেও সে দিকে পুলিশ প্রশাসনের নজর নেই তারা শুধু একের পর অবৈধ যান-বাহন নামিয়ে মানুষ মারবে তা বরিশালবাসী হতে দেবে না। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান- অবৈধ আলফা-মাহেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন কেবল একটি মিছিল দিয়ে শুরু করেছি। এর শেষ কোথায় তা এ যানবাহন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বলতে পারবো না। যে কোন মূল্যে আলফা-মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ করা হবে বলে তিনি হুশিয়ারী উচ্চারন করেন।  

২০১১ সালের ১৯ মে বিশ্ব মা দিবসে ঘাতক আলফা-মাহেন্দ্র কেড়ে নিয়েছিল সদর রোডের মোহনা জেনারেল স্টোর্সের স্বত্ত্বাধিকারী অমল সাহার মা অনিতা সাহার জীবন। সেই বিশ্ব মা দিবসে মা হারানোর মধ্য দিয়ে ঘাতক যানবাহনটির যে খুনের যাত্রা শুরু হয়েছে তার সর্বশেষ ফুটবল টিমের মত ১১নম্বর ব্যক্তি হিসাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন গণমাধ্যম কর্মী দৈনিক আজকের পরিবর্তনের রোকন।

সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন নগরীতে আলফা-মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন দু’ বছর আগে। কিন্ত তিনিই পুলিশের ঘুষ বানিজ্য ও বিআরটিএ’র অসাধু কর্মকর্তা এবং ঘাতক আলফা – মাহেন্দ্র মালিক-শ্রমিকদের কাছে হেরে গেছেন। আজ পর্যন্ত বন্ধ হওয়া তো দূরের কথা শওকত হোসেন হিরন মেয়র থাকা অবস্থায়ই  তার নগরীতেই নতুন করে ঘাতক যানবাহন চলাচলের দু’শ লাইন্সেস প্রদান করা হলো ৫০ লাখ টাকার বিনিময়। অধিকাংশ আলফা-মাহেন্দ্র’র মালিক পুলিশ, সাংবাদিক সহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা হওয়ার কারনে বাস মালিক সমিতি সহ নানান শ্রেনী পেশার মানুষ আন্দোলন করেও কোন প্রতিকার পায়নি। দু’ বছরের ব্যবধানে ১১ টি তাজা প্রান ঝরে গেলেও কালো টাকার কাছে চাপা পরে যাচ্ছে স্বজন হারাদের কান্নার শব্দ। পুলিশ, সাংবাদিক ও প্রভাবশালীদের সম্বনয় গড়ে উঠা আলফা-মাহেন্দ্র সিন্ডিকেট কারো তোয়াক্কা করছে না। ইতিপূর্বে আলফা-মাহেন্দ্র দূঘর্টনায় কেউ মারা গেলে পুলিশ কিছুটা তৎপর হয়ে অভিযান চালাতো। কিন্ত রোকনের মৃত্যুর পর পুলিশ ছিল একেবারেই চুপচাপ। সিটি মেয়রের নির্দেশ এবং বাস মালিক সমিতি ও সাংবাদিকদের আল্টিমেটাম তারা আমলে নেয়নি। বরং পরদিন নগর চষে বেড়ানো এবং ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সরেজমিন চিত্র প্রকাশিত হয়। নগরীর সর্বত্রই আলফা-মাহেন্দ্র দেখা গেছে পিপিলিকার মত সারিবদ্ধ ভাবে। শত শত আলফা-মাহেন্দ্র নগরীর প্রানকেন্দ্র সদর রোড সহ অলিগলি দাবড়ে বেড়াচ্ছে । সার্জেন্টদের চোখের উপর দিয়েই চলছে এ মরনঘাতি যান-বাহন।  অবৈধ এ সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা তো দূরের কথা উল্টো  এ ঘাতক যানবাহন মালিক – শ্রমিকদের আরো উৎসাহিত করতে নতুন করে  দু’শ নতুন লাইন্সেস দেয়া হয়েছে বলে নগরীর সচেতন মানুষ মনে করছেন।