তুমি ছিলে, তুমি রবে, তুমি থাকবে!

গৌরনদী ডটকম ডেস্ক  ॥ জীবন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শেষ বিকেলে সবাইকে ভাবতে হয় তার অতীত জীবনের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে। কেন সে এসেছেন এ পৃথিবীতে। আর কতটাই বা সফল হয়েছে তার এই আগমনের উদ্দেশ্য? যুগে যুগে অনেক মনিষীরা এসেছেন আলোকিত করতে এ ধারিত্রিকে। তেমনি এক জাগ্রত বিবেকের মানুষ ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বি.কম স্যার। তিনি হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক হলেও তার বিচক্ষণ ছিলো সব শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তকের ওপর। তিনি ছিলেন সকল বিষয়ের ওপর পারদর্শী। তিনি নিজেকে নিবেদিত করেছেন মানুষের মাঝের মনুষ্যত্বকে বিকশিত করার কাজে। যারা তাঁর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছেন তারাই কেবল অনুধাবন করতে পেরেছেন মোশারফ হোসেন খান ওরফে বি.কম স্যার কতটা উচুঁ মানের শিক্ষক ছিলেন। তার আদর্শে তাঁরই পদস্পর্শে জেগে উঠেছে বরিশালের গৌরনদীর মাটি। শিক্ষার আলোয় বিকশিত হয়েছে গৌরনদীর প্রতিটি প্রত্যন্ত গ্রাম। তাইতো ১৯৬৪ সনে বরিশালের গৌরনদী সদর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করার পর সে সময় স্যারকে গৌরনদী কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান মোল্লা নিয়ে গিয়েছিলেন কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের ক্লাস নেয়ার জন্য। গৌরনদীর সবার প্রিয় মোশারফ হোসেন খান ওরফে বি.কম স্যার সবাইকে কাঁদিয়ে গত ৯ জানুয়ারি রাতে ইহলোক ত্যাগ করেন। সর্বশ্রদ্ধেয় এ মহামানুষটির স্মরণে তাই আজ বলতেই হচ্ছে-“তুমি ছিলে, তুমি রবে, তুমি থাকবে-সবার মনের মাঝে চিরদিন”। তার এ মৃত্যুর সংবাদে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে রয়েছে মোশারফ হোসেন খান ওরফে বি.কম স্যারের স্থান।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলীম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন মোশারফ হোসেন খান। তিনি বি.কম পাশ করার পর চাকুরীর সুবাদে ১৯৬৪ সনের জুলাই মাসে গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন তিনি। শিক্ষার উৎকর্ষ সাধন ও প্রসারে তিনি ছিলেন এক নিবেদিত প্রাণ। দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে ২০০১ সনের ১৩ জানুয়ারি তিনি (মোশারফ হোসেন খান) গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকেই অবসরগ্রহন করেন। তার পরেও স্কুলের ব্যবস্থাপনায় ২০০৬ সন পর্যন্ত তিনি চাকুরিতে বহাল থাকেন। স্যারের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীরা আজ দেশের বিভিন্ন দপ্তরে সচিব থেকে বিভিন্ন রাজনৈতি দলের শীর্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিদেশের স্বনামধন্য অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষাকতার ৪২ বছরে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে তিনি করেছেন পিতৃস্নেহে লালন-পালন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে অভিভাবকহীন অনেক ছাত্র-ছাত্রীর তিনি হয়েছেন অভিভাবক। হতাশার অন্ধকারে তিনি সর্বদা তাদের যুগিয়েছেন আশার আলো। নিজের কামনা-বাসনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে জীবন জ্ঞান সাধনায় ব্যাপৃত এই মহান পুরুষ জীবন সায়াহ্নে এসে পাননি কিছুই। তিনি ছিলেন জাতি-ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে। এই আলোকিত মানুষটির মহাপ্রস্থানঘটে গত ৯ জানুয়ারি রাতে। বরিশাল নগরীর কলেজ রোডের মেয়ের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সবাইকে ছেড়ে শ্রদ্ধেয় মোশারফ হোসেন খান ওরফে বি.কম স্যার (৭২) চলে যান অজানার দেশে। ১০ জানুয়ারি সকালে মরহুমের লাশ তার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে উজিরপুর উপজেলার ধামুড়া গ্রামের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়। শ্রদ্ধেয় বি.কম স্যারের দু’পুত্রের মধ্যে বড় পুত্র মোঃ মোকলেচুর রহমান খান বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ছোট পুত্র সাব্বির হোসেন খান মার্ষ্টাস পাশ করেছেন। চার কন্যারা সবাই গ্রাজুয়েট। এই মহান শিক্ষাগুরুর কর্মের নিষ্ঠা ও আদর্শ জাগ্রত হয়ে থাকবে আগামী প্রজন্মের মাঝে।