বরিশালে গণপরিবহনে ভাড়া সন্ত্রাস

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে বরিশালের গণ পরিবহনে ভাড়া সন্ত্রাস মাত্রাঅতিক্তি বেড়েছে। বরিশালের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এবং অভ্যন্তরীন রুটের বাস, মিনিবাসে অতিরিক্ত ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহানগরীতে চলাচলকারী মাহেন্দ্র, টেম্পু এমনকি সিটি সার্ভিসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বরিশাল থেকে সড়ক পথে বিভিন্ন রুটের পরিবহন এবং নৌ রুটের নৌযানের যাত্রী ভাড়াও বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কোন ঘোষনা ছাড়াই অহেতুক গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। যাত্রীরা জানান, কোন তদারকি না থাকায় গণ পরিবহনে সবসময় বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। তার উপর জা¡লানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে হুট করে ওই বাড়তি ভাড়ার উপরেই আবার ইচ্ছামত ভাড়া বাড়িয়ে আদায় করছে।

সম্প্রতি নগরীর নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখাগেছে, বরিশাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার  গন্তেব্যে যাত্রীপ্রতি আট থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে। বাস কাউন্টার থেকে জানাগেছে, বরিশাল থেকে পটুয়াখালী ৭৫টাকা, আমতলী ১৫০, কলাপাড়া ১৮০, কুয়াকাটা ২৩০, কাঠালতলী ৭৫ টাকা, ঝালকাঠী ৩৫ টাকা, পিরোজপুর ১০০ টাকা, নিয়ামতি ৮০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি ভাড়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে পটুয়াখালী জেলার এস.কে রঞ্জন নামের এক যাত্রী বলেন, কয়েকদিন আগেও বরিশাল থেকে পটুয়াখালী ৬৫ টাকা ভাড়া নিয়েছে। এখন ৭৫ টাকা নিচ্ছে। কাউন্টারে কোন ভাড়ার তালিকও নেই যে প্রতিবাদ করবো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাউন্টার ম্যানেজার জানান, ভাড়ার তালিকা কেন্দ্র থেকে এখনও নির্ধারন না হলেও তেল বেশি দামে কিনতে হয়। তাই বাস মলিকদের নির্দেশেই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে রুপাতলীর বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিন বলেন, বাড়তি ভাড়া আদায়ের কোন নির্দেশ আমরা দেইনি। যদি বেশি ভাড়া নেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরিশাল জেলার অভ্যন্তরীন রুটগুলোতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিানাল নথুল্লাবাদের বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখাযায়, বরিশাল থেকে বানারীপাড়া ৩৪ টাকা, স্বরুপকাঠি ৪৭ টাকা, ভ’রাঘাটা ৭২ টাকা, পয়সারহাট ৮৪ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া বরিশাল থেকে বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, আগৌলঝাড়া, উজিরপুরসহ বিভিন্ন রুটে বাড়তি ভাড়ার কথা জানান যাত্রীরা। এনামূল হক নামের কাউন্টারের পাশে ফল বিক্রেতা জানান, ভাড়া বারানোর কারনে কউন্টারের লোকদের সাথে যাত্রীদের প্রায়ই কথাকাটাকাটি এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। বরিশাল জেলা বাস-মালিক সমিতির সড়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে সংগঠনের সবাই আলোচনা করে প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকার ভাড়া নির্ধারন করলে সে অনুযাই আবার বাড়ানো বা কমানো হবে।

এদিকে সড়ক পথে পরিবহনে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তেব্যে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি আদায় করার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। জানাগেছে, বরিশাল থেকে ঢাকার গাবতলীতে চাকলাদার পরিবহনে ৩০ টাকা বেড়ে ৩৮০ টাকা, সুরভীতে ৫০ টাকা বেড়ে ৪৫০ টাকা, সাকুরায় ৪৫০ টাকা এবং শীততাপনিয়ন্ত্রিত ৬৬০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। বরিশাল থেকে চট্রগ্রামে হানিফ পরিবহনে ৫০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকা, পদ্মা পরিবহনে রাজশাহী পর্যন্ত ৫৫০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে চাকলাদার পরিবহন, হানিফসহ কয়েকটি কাউন্টারের লোক ভাড়া বৃদ্ধির কথা স্বীকার করলেও অধিকাংশ কাউন্টার থেকে অস্বীকার করা হয়।

অণ্যদিকে নৌ পথে বরিশাল থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বরিশাল থেকে ঢাকায় তৃতীয় শ্রেনী (ডেকরে ভাড়া) ৩০০ করা হয়েছে। এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর ভাড়াও বড়ানো হয়েছে। ভোলায় প্রতি যাত্রী ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, পাতারহাট-মেহেন্দিগঞ্জ ৭০ টাকাসহ বিভিন্ন রুটে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রীবাহী লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ভাড়া বাড়ানোর সীদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আদায় করা হচ্ছেনা। তবে দুই একদিনের মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা বসবো।

এদিকে একই সঙ্গে বেড়েছে নগরীতে চলাচলকারী মাহেন্দ্র, টেম্পুর যাত্রীভাড়া। যাত্রীপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে। বাদ যায়নি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নিয়ন্ত্রত সিটি সার্ভিসের ভাড়া। নাসির উদ্দিন নামের এক যাত্রী জানান, সিটি সার্ভিস চলাচলের প্রথম দিকে রূপাতলী-নথুল্লাবাদ আবার নথুল্লাবাদ কিংবা রূপাতলী থেকে লঞ্চঘাট পাঁচ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও বর্তমানে ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল আলম বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জানানেই। ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে অবশ্যই সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শীঘ্রই এব্যাপারে বাস-মালিক সমিতিসহ সব সংগঠনের নেতৃবৃদ্ধের সাথে আলোচনা করা হবে।