‘শীতে তো লড়তে-চরতে পারি না’

বরিশাল সংবাদদাতা ॥ ‘ও বাবা, শীতে তো লড়তে-চরতে পারি না। এই শত্য প্রবাহ আর শীতে মনে হয় মইরা যামু। এইবার একছের শীত,শীতে থাহা দায়।’ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নগরীর রসুলপুর বস্তি এলাকার এক মৎস্য শিকারি বৃদ্ধ মো: ফকির মাঝি (৭০)।

ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া, সূর্যের দেখা নেই। দিন ও রাতের ফারাক বোঝা দায়। আগুন জ্বালিয়ে একটু উত্তাপ নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চোখে পড়ে সর্বত্র। আজ শনিবার সরেজমিনে নগরীর রসুলপুর বস্তিতে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশু ও বয়স্কদের হরেক রকমরে রোগ এবং সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

প্রচণ্ড শীতে বরিশাল বিভাগের একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (শেবাচিম) বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও পঞ্চশ বছরের অধিক বয়স্ক মানুষ। বেশি খারাপ অবস্থা রয়েছে শিশুরা। বিগত এক সপ্তাহে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তশিশুদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নগরীর শেবাচিম হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জ্বর-সর্দি-কাশি,রোটা-ভাইরাজ ও ঠান্ডাজনিত কারণে অসুস্থ শিশুদের ভর্তি করা হচ্ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডটিতে কোনো শয্যা খালি নেই।

শিশু ওয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক সেবিকা জানান, যে পরিমাণ শিশু এই ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে,সে পরিমাণ অক্সিজেন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। মাত্র ২৫ শতাংশ রোগীর জন্য অক্সিজেন বরাদ্দ রয়েছে। অনেক সময় একজনের নাক থেকে অক্সিজেন পাইপ খুলে অন্য শিশুকে দিতে হয়।

অক্সিজেনের সমস্যা সম্পর্কে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচালক অনিল দত্ত বলেন, শীতের দিন শিশু ও বয়স্ক অনেক রোগীরই শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ে। একক ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে অক্সিজেন সমস্যা হলেও সার্বিক দিক থেকে হাসপাতালে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানান, বরিশালসহ দেশের সর্বত্র বিগত ৫০ থেকে ৫৫ বছরের ইতিহাসে এত শৈত্য-প্রবাহ ও ঠান্ডা পড়েনি। তবে সপ্তাহ ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে বরিশালে। মাঝে শীতের প্রকোপ দুই দিন কম ছিল। গত মঙ্গলবার জেলায় ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা  হয়েছে।