ভেগাইর জন্ম না হলে আগৈলঝাড়ার জন্ম হতো না

ওমর আলী সানি, আগৈলঝাড়া ॥ ভেগাই হালদারের জন্ম না হলে আগৈলঝাড়ার জন্ম হতো না। সকল বৈরিতাকে জয় করে মানব মনের সুকুমার বৃত্তিসমূহকে কুসুমিত করার মহতি প্রয়াসে ৯৩ বছর পূর্বে ১৯১৯ সনের ২৬ জানুয়ারী এ জনপদে শিক্ষার পরশমনি ছোঁয়াতে যিনি ব্রতি হয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন, পুণ্যশ্লোক মহাত্মা ভেগাই হালদার। তাঁর অমর কীর্তি  আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী’র ৯৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারী, ২০১৩ শনিরবি ও রবিবার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে প্রতিযোগি বিজয়ীদের মাঝে পরুস্কার বিতরন করা হয়।

বিদ্যালয় সম্পর্কিত কিছু কথাঃ- পুণ্যশ্লোক মহাত্মা ভেগাই হালদারের স্মৃতি বিজড়িত কর্মক্ষেত্র আগৈলঝাড়া। পুণ্যভূমি বরিশাল জেলার অন্তঃপাতী উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলে অবস্থিত আগৈলঝাড়া একটি গ্রাম নয়, এটি প্রখ্যাত মানসী ফুল্লশ্রী গ্রামেদক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের কিছু অংশ মাত্র। যথার্থই কবির কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে“ পশ্চিমে ঘাঘর নদী পূর্বে ঘন্টেশ্বর, মাঝখানে ফুল্লশ্রী পন্ডিত নগর।”এ পবিত্র ভূমিতেই বাংলার সাহিত্যের মঙ্গল কাব্যের ধারক কবিবর বিজয়গুপ্ত জন্মগ্রহণ করেছিল এবং তার অমরকীর্তি পদ্মপুরাণ বা মনষামঙ্গল রচনা করেছিলেন। মানসী ফুল্লশ্রী সেই থেকে পন্ডিতনগর নামে আখ্যায়িত। এখানে ব্রাহ্মণ,বৈদ্য ও কায়স্থগণই ছিলেন অধিক্ংশ এবং তাঁরাই ছিল উচ্চ শিক্ষত।

মানসী ফুল্লশ্রী ও গৈলা গ্রামের পশ্চাৎভূমিতে চতুর্দিকে বহুদূর বিস্তৃত অনেক গ্রামের নিরন্তন কৃষকগণ ছিলেন প্রদীপের নিম্নভাগে অন্ধকারের মত। গৈলা-ফুল্লশ্রী-বাকালের প্রধানছিলেন জমিদার তালুকদারগণ। তাদেরই প্রজা ছিলেন সব কৃষক, জেলে, কামার, রাজকেরা। তাঁর প্রজা- ধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তরণের কোন প্রচেষ্টা কখনও  করেননি, বরং জাত-পাত আর বর্ণ বৈষম্যের শিকারে পরিণত করেছিলেন ঐসব নিম্নশ্রেণির সরলমতি মানুষদের। উল্লেখ্য, ফুল্লশ্রী গ্রামের ঐতিহ্য প্রভাবে দক্ষিণ পাশে অবস্থিত সুজনকাঠি গ্রামটিও ফুল্লশ্রী নামে পরিগণিত হ’ত। এসুন্দর বিশ্বে ভেদ-বৈষম্যের কদর্যতা দূরীকরণার্থে সেই ঐতিহাসিক ক্ষণে ঐ সুজনকাঠী ওরফে ফুল্লশ্রী গ্রামে ১২৬০ বঙ্গাব্দের ২১ আষাঢ় সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সাধু জগন্নাথের ঔরসে সাধ্বী শ্যামতারার কোল আলো করে আবির্ভূদ হ’ন মহাত্মা ভেগাই।

এ জনপদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সাম্প্রদায়িকতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে বিশ্বৈকতাবাদে উত্তোরণের জন্য ১৯১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি এক পুণ্যলগ্নে এতদাঞ্চলের অন্য দুই মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত এবং কৈলাশ চন্দ্র সেনসহ কতিপয় পুণ্যবানদের সৎ পরামর্শে  মহাত্মা ভেগাই হালদার প্রতিষ্ঠা করেন আগৈলঝাড়া এম.ই.স্কুল। মহাত্মা ভেগাই হালদার মহশয়ের প্রতিষ্ঠিত উল্লেখিত বিদ্যালয়ের সংস্কার সাধন করে অনুন্নত সম্প্রদায়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র স্বরূ গড়ে তুলতে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্র নাথ মন্ডল.এম.এল.এ.মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রয়াসে মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়টি ১৯৩৮ সালে উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। অতঃপর তৎকালনি বর্ণ বৈষম্যের ধারক ,সমাজপতিদের ষড়যন্ত্রে বিদ্যালয়টির বাতিল হওয়া মঞ্জুরী  সমস্যার ক্ষেত্রে  বিদ্যালয়ের  সম্পাদক, নমঃশূদ্রের অবিসংবাদিত নেতা এম.এল.এ. মহাপ্রাণ যোগেন্দ্র নাথের উদ্যোগে তৎকালনি বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মহামান্য এ.কে ফজলুল হক-এর বিশেষ সহযোগিতায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের  মাধ্যমে স্থায়ী মঞ্জুরী লাভ হয়। মহাত্মা ভেগাই হালদারের প্রতি এতদাঞ্চলের বঞ্চিত জনতার পরম শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ তাঁর লোকান্তরে অত্র বিদ্যালয়টির নামকরন করা হয়‘ আগৈরঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী’।

৯৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দু’দিন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে প্রতিযোগি বিজয়ী দের মাঝে পুরস্কার বিতরন ও  আলোচনা সভায় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অবনি ভূষনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল কালাম তালুকদার। বক্তব্য রাখেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন সরদার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সহকারী কমান্ডার আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, ড.নীলকান্ত ব্যাপারী, প্রেস ক্লাব সভাপতি সরদার হারুন রানা, সদস্য কে.এম আজাদ রহমান, বালিকা বিদ্যালয় অভিভাবক সদস্য এলিনা জাহিন, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যতিন্দ্র নাথ মিস্ত্রী সহ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশান নেতৃবৃন্দ।