কসাই কাদেরের রায়ে ফেসবুকেও অসন্তোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কসাই কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায়ের পর আদালত থেকে সে (কাদের মোল্লা) বেরিয়ে যাবার সময় দু’আঙ্গুলের ‘ভি’ চিহ্নের ছবি দিয়ে হাজ্বী মোহাম্মদ সেলিম নামের একজন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন-রায়ের পর কাদির খানকির পুতের এই প্রতিক্রিয়া দেইখা আমি লজ্জিত…আমার আর কিছুই বলার নাই…মা চাই আমার পুর্ব পুরুষের কাছে, মা করো মা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, মা করো মুক্তিযুদ্ধের ৩০ ল শহীদ ও অগনিত ধর্ষিতা মা-বোন।

মুন্না নামের একজন লিখেছেন-আমি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে কাদের মোল্লার মামলায় ট্রাইব্যুনাল যে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে এটাতে খুশি হতে পারলাম না। ৪’শ মানুষকে হত্যার অভিযোগ প্রমানিত, ধর্ষনের অভিযোগ প্রমানিত, গণহত্যার অভিযোগ প্রমানিত, তার পরেও এ লঘূদন্ড। তাহলে আর কতো মানুষকে হত্যা করলে এ রায় মৃত্যুদন্ড হতো..? এটা কিসের আভাস, সরকার কি জামায়াতের সাথে কোন আতাত করছে, যদি করে থাকে তাহলে জাতী তা মানবে না। জাতী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চায়, এ কাজে কেউ বিঘœ ঘটালে জাতী তাদের কোনদিনই মা করবে না..? চমৎকার শব্দগাঁথুনির এ মন্তব্যে লাইক পড়েছে অসংখ্য। নিজেদের মন্তব্যে সবাই একবাক্যে এ রায় মেনে নিতে পারছেন না বলে স্বীকার করেছেন।

মনীষ চন্দ্র বিশ্বাস নামের একজন কমেন্টস বক্সে লিখেছেন-এ শাস্তি দেবার জন্য এতো নাটকের কি দরকার ছিলো? সরকার পরিবর্তন হলে ওতো (কাদের মোল্লা) ঠিকই ছাড়া পাইয়া যাইবো। কষ্ট মুন্না নামের একজন তার কষ্টের কথা এভাবেই লিখেছেন-নাটকীয় এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, বীরঙ্গনা আর শহীদদের অপমান করা হয়েছে। ইমরান সরদার নামের একজন লিখেছেন-আমি লজ্জিত, আমি ুদ্ধ, আমি হতাশ। আমি এ রায় মানিনা। সব রাজাকারের ফাঁসি চাই! তিনি অন্যান্যদের কাছে আবেদন রেখে লিখেছেন, আপনি যদি আমার কথায় একমত থাকেন, পুরো লেখাটি কপি করে আপনার নিজ প্রোফাইল থেকে পোস্ট করুন। পুরো ফেইসবুক জুড়ে ছড়িয়ে যাক আমাদের অতৃপ্ত হৃদয়ের চাওয়া! প্রদীপ সাহা নামের একজন লিখেছেন- আশা ভেঙ্গেছে সত্য। কিন্তু মন ভাঙ্গেনি। কিংবা কমেনি ৭১-এর ঘাতক দালালদের প্রতি এতটুকু ঘৃণা। একজন বাংলাদেশী এত তুচ্ছ কোনও বস্তু নয় যে এতো সহজে হেরে যাবে… যুদ্ধে প্রতিপরে সাময়িক বিজয় হতেই পারে। কিন্তু তারমানে এটা নয় যে আমরা হার মেনে নিবো। কনো কনো কনোই না…সরকার যদি রাজাকারদের বেকসুর খালাস দেয়, তাও না।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৭১-র মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায়ের পর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এভাবেই ােভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ-যুবকেরা এ রায় কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। প্রতিবাদ স্বরূপ নমনীয় এ বিচারকে নাটক আখ্যা দিয়ে নিজেদের ফেসবুক দেয়াল ভরে তুলেছেন। এভাবেই অনেকেরই মনের কষ্ট লিখে প্রকাশ করা হয়েছে ফেসবুকে।

অপরদিকে বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু ফোনের মাধ্যমে এ প্রতিনিধির কাছে বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে মারাত্মক রক্তরণ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন। প্রত্যাশা করেছিলেন, একাত্তরে আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম হানি করা, হত্যা ও গণহত্যার সাথে সম্পৃক্ত কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদেরও ফাঁসির রায় হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এ রায় মুক্তিযোদ্ধাদের হতাশ করেছে। অবিলম্বে এ রায় পুনঃবিবেচনা করে ফাঁসির রায় দেয়ার জন্যও তিনি দাবি করেন।