বরিশাল অঞ্চলে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পাড় করছে মসলা জাতীয় শস্যের আবাদে

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশাল বিভাগের  ছয়জেলায় মসলা জাতীয় শস্যের আবাদ এগিয়ে চলছে। দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোর চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছে মসলা আবাদে। এসব মসলার মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া ও কালজিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, চলতি রবি মৌসুমের মসলা জাতীয় শস্যের চাষবাদ করেন কৃষকরা। চলতি বছরে এ অঞ্চলে মসলা আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪শ’ ৭৬ হেক্টর। বিপরীতে গতকাল বুধবার পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩শ’ ৮৪ হেক্টর। প্রতিদিনই আবাদ কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌসুমের এখনো একমাস বাকি থাকতেই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি আবাদ চলে আসায় পরবর্তী সময়ে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে সূত্র জানায়।

সুত্র আরো জানায়, এসব মসলার মধ্যে পেয়াজের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৫৫ হাজার ৯শ’ ১৮ হেক্টর, বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৬৫ হেক্টর। রসুনের ১৩ হাজার ১শ’ ৪১ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৩শ’ ৯১ হেক্টর। ৩৫ হেক্টর আদার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ১৩ হেক্টর। হলুদের লক্ষ্যমাত্রা ২শ’ ৭২ হেক্টর, বিপরীতে আবাদ এখন পর্যন্ত ৪৬ হেক্টর।

অন্যদিকে মরিচের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৫৯ হাজার ৭শ’ ২ হেক্টর, আর আবাদ ৪৮ হাজার ৪৩ হেক্টর হয়েছে। ধনিয়ার ১৪ হাজার ৪শ’ ৮ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৫ হাজার ১শ’ ৬২ হেক্টর আবাদ হয়েছে। কালোজিরার কোন লক্ষ্যমাত্রা দয়া না থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪শ’ ২৩ হেক্টর ও মেথি ২শ’ ৪৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

প্রান্তিক কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, গত বছর মসলার দাম ভালো পাওয়ায় এবার তারা অধিক আকারে মসলা চাষে ঝুঁকছে। তাছাড়া মসলা জাতীয় শস্য অতি অল্প সময়ে উৎপাদন করা যায়।

বরিশাল সদর উপজেলার মসলা চাষি মো: নুরনবী হাওলাদার জানান, তিনি তার ২ একর জমিতে পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ করেছেন। মৌসুমের শেষ সময়ে তাই তিনি এখন পেয়াজ-রসুনের পরিচর্যায় ব্যস্ত। তিনি আরও জানান, এবার পেঁয়াজের দাম ভালো থাকায় অনেকেই পেঁয়াজ চাষে আকৃষ্ট হচ্ছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, বিগত দিনে কৃষকরা মসলা আবাদে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও সাম্প্রতিক সময় এর দাম ঠিক থাকায় মসলার কদর বেড়েছে এ অঞ্চলে। মৌসুমের বাকি সময়ে আবাদ আরো বাড়বে বলে তিনি জানান।

বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিষেশজ্ঞ রমেন বড়াই জানান, এবার পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও ধনিয়ার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। মূলত: সময় স্বল্পতা ও কম পরিশ্রমের জন্য চাষিরা মসলা আবাদে ঝুঁকছে। তাছাড়া মসলার ফলনে জমিতে খুব একটা পরিশ্রম করতে হয় না। তিনি জানান, চলতি রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ফরিদপুর জেলায়। এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।

উজিরপুর উপজেলার কৃষক পরেস বড়–য়া, ধিরেন নাগ, আফছার আলিম ও মানিক জানান, তারা সবাই এবার পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। সাধারণত পুরো মৌসুম জুড়েই মসলা জাতীয় শস্য পর্যায়ক্রমে রোপণ করা হয়। সে হিসেবে আবাদ আরো বাড়বে। দাম ভালো থাকায় অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে তারা লাভবান হবেন বলে জানান তারা।

এব্যপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চল শাখার উপ-পরিচালক মো: নাজমুল করিম বলেন, যথাযথ সময়ে মসলা চাষিদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে। আবাহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবছর দক্ষিনাঞ্চলে মসলার বাম্পার ফলন হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভৌগোলিক কারণে দক্ষিণাঞ্চলে রবি ফসল দেরিতে উৎপাদন হয়। তাই শেষ সময় এ অঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মসলা আমদানি করা হয় বলে উপ-পরিচালক জানান।