এখন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ কারনেই নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পরেছে চারদলীয় জোটের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ও বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার মেয়র নুরুল ইসলাম নুর আলম হাওলাদারের ওপর। সাধারন খেটে খাওয়া দিনমজুরদের মতে, পৌর মেয়র নুরুল ইসলাম পৌরবাসীর নানাসমস্যা লাঘব করতে না পারলেও নিজের আখের গুছিয়ে নিতে তিনি মোটেও ভুল করেননি। বিগত ২০০৪ সালের ১০ মে পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রাতারাতি তিনি (নুর আলম) বিলাস বহুল বাড়িসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। দলীয় মন্ত্রীদের ন্যায় শখের বশত পুষছেন দুটি বিদেশী কুকুর। যার পেছনে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে সহস্রাধিক টাকা। এ নিয়ে পৌরবাসী দীর্ঘদিন থেকে কানাঘুষা করলেও এখন প্রকাশ্যেই মুখ খুলতে শুরু করেছে। আগামি ১৩ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি (মেয়র নুর আলম) পূর্ণরায় আনারস প্রতীক নিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। মেয়রের বিলাসবহুল বাড়ি ও বিদেশী কুকুর পালনের বিষয়টি সহজেই মেতে নিতে পারছেন না পৌরসভার সাধারন ভোটাররা। এ নিয়ে নির্বাচনের শুরু থেকে অদ্যবর্ধি বিরূপ প্রভাব পরেছে তার নির্বাচনী কর্মকান্ডে। এমনকি দলের তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরাও এখন তাকে এড়িয়ে চলছেন।
পৌর এলাকার দিয়াশুর গ্রামের রিকসা চালক সুলতান হাওলাদার (৫০) ক্ষোভের সাথে বলেন, “কি কমু ভাই, মোরা ভাত খাইতে পারিনা, হুনছি মেয়র সাইবে সাত লাখ টাকা দিয়া দুইডা বিদেশী কুত্তা (কুকুর) কেনছে। হেই কুত্তায় নাকি মাংস ছাড়া অন্য কিছু খায়না। পেরতেকদিন (প্রতিদিন) ওই কুত্তা দুইডার পিছে নাহি হাজার টাহার মাংস লাগে। মোরাতো ভাই মাংস চোহেই দেহিনা।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর মেয়রের জন্মস্থান কসবা গ্রামের এক দিনমজুর বলেন, “কয়েকদিন আগে এট্টা কুত্তা মইরা গ্যাছে। ইলেকশন শুরু হওয়ার পর মানুষ বাড়িতে আসা যাওয়া করছে। তাই মানুষ দ্যাখলে কুত্তাডা খালি ঘেউ ঘেউ করে। হেইয়ার লাই¹া রাইতে কুত্তাডা বাড়ি থেইক্কা হরাইয়া কোন ন্যাতারে জানি দিয়া আইছে।
বর্তমানে ওই কুকুরটি পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি লাল মিয়া সরদারের কাসেমাবাদের বাড়িতে রাখা হয়েছে। কাসেমাবাদ গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, লুছি নামের বিদেশী কুকুরটিকে প্রতিদিন সকালে দুই হালি করে ডিম ও দুপুরে তিন কেজি ও রাতে দুই কেজি করে মাংস খাওয়ানো হচ্ছে।
সূত্রমতে, সুবিধাভোগী পৌর মেয়র নুরে আলম হাওলাদার আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টি থেকে দলছুট হয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। আর বিএনপিতে যোগদান করেই তিনি লাভবান হয়েছেন বেশী। আওয়ামীলীগ থেকে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করার পর তিনি চাঁদশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সুবিধাভোগী এ নেতা জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগদানের পর পরই ওইদলের বহুত্যাগী নেতাদের ডিঙ্গিয়ে তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পরবর্তীতে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এরপরই শুরু হয় তার ভাগ্যের চাকা ঘোরানো পালা। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পুরনো কাঠের ঘরটি ভেঙ্গে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করেন দ্বিতল ভবনের বিলাশ বহুল অট্টালিকা। এযেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডার বহির্ভূত ভাবে তিনি (মেয়র) নিজে, কখনো কখনো আত্মীয়-স্বজন দ্বারা বা কোন উন্নয়ন কাজ না করেই পৌর তহবিল থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পৌরসভার ব্যবহৃত গাড়ীর জ্বালানী ও মেরামত খাতে ভূঁয়া বিলের মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ আত্মসাত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতেও রয়েছে পুকুর চুরির অভিযোগ। বিভিন্ন সময়ে আসা সরকারী অডিট টিমের কাছে এসব অনিয়ম ধরা পরলেও অজ্ঞাত কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিগত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে জ্বালানী ব্যয় খাতে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার জালিয়াতির বিষয়টি অডিট টিমের কাছে ধরা পরে। ওইসময় যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তারা পৌর মেয়রের কাছে ফাইলপত্র দেখতে চাইলে ভয়ে তিনি (মেয়র) অসুস্থ্য হয়ে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসার নামে আত্মগোপন করেন। ওইসময় তার (মেয়রের) এক ভাই সরকারী আমলা থাকার বদৌলতে ওই যাত্রায় তিনি রেহাই পান। খবর নিয়ে জানা গেছে, গাড়ীর জ্বালানী ও মেরামত খাতে ভূয়াবিল ভাউচার করে তিনি (মেয়র) প্রতিমাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকা করে গত ৬ বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। এছাড়াও পৌরসভার টাকায় ক্রয়কৃত বালু দিয়ে মেয়র নিজেই বালুর রমরমা বানিজ্য করে কামিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা।
সূত্রমতে, পৌর মার্কেট করার জন্য একটি মজাপুকুর ভরাটের জন্য ৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার বালু ক্রয় করা হলেও সেখানে খরচ দেখানো হয়েছে ২২ লাখ টাকা। মেয়র সাথে আতাত করে সেই বালু দিয়েই পৌর এলাকার বাদামতলা গ্রামের রাস্তার কাজে ব্যবহার করেন ৪ নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ ফরিদ মিয়া। ওইসময় পৌর মেয়রের এসব অপকর্মের বাঁধা দিতে গিয়ে তার (মেয়রের) লোকজনের হাতে লাঞ্চিত হয়েছিলেন পৌর প্যানেল মেয়র ও পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহ আলম ফকির। জানা গেছে, উল্লেখিত সড়কের মাটির কাজে এক লক্ষ টাকা ব্যয় করা হলেও মাটির বিল বাবদ ৯ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। পৌরসভার বিদ্যুৎ সেক্টরেও বহু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পৌর মেয়র বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীর সাথে আতাত করে বিধি বর্হিভূত ভাবে ৫০ হাজার টাকার প্রকল্প করে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। সূত্র অনুযায়ী, পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকার প্রকল্প করার কোন বিধান নেই।
পৌর এলাকার জনগুরুতপূর্ণ সড়কে বাতি না থাকলেও পৌরবাসীর ট্যাক্সের টাকায় মেয়র তার নিজের বাড়ির রাস্তাসহ মেয়ে জামাতার বাড়ির রাস্তায় বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে এলাকায় হয়েছেন বহুল আলোচিত। এছাড়াও বিদ্যুতের খুঁটি, তার ও বাল্ব লাগানো বাবদ একাধিকবার ভূয়া বিল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, পৌর মেয়র নুরুল ইসলাম কখনো মেয়ে জামাতা, কখনো বা ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে অতিগোপনে টেন্ডারের কাজ ভাগবাটোয়ারা করে দিয়েছেন। মেয়ে জামাতা জুবেরী খান কোকোর মের্সাস নিকো এন্টারপ্রাইজ লাইসেন্সের অনুকুলে টেন্ডার পূণঃবিজ্ঞপ্তি নং-০১/২০০৭-২০০৮-এর ২৫ প্যাকেজের মধ্যে ৩টি প্যাকেজের কাজ এবং অপর একটি লাইসেন্সের মাধ্যমে আরো ৩টিসহ মোট ৬টি কাজের ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ কসবা গো-হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের ইজারার নামে মেয়র কর্তৃক প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি পৌরবাসী জানলেও প্রতিবাদের ব্যাপারে সবাই ছিলো অসহায়। অভিযোগ রয়েছে, গত সিডরে কসবা গো-হাটের উপরে পরা প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ঢেউ টিন মেয়র তার নিজবাড়িতে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি টেন্ডার বর্হিভূত ভাবে কসবা গো-হাটের রাস্তা ও টলঘর সংস্কারের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টেন্ডার কাজ ভাগাভাগি ও কমিশন আদায়ের মাধ্যমে মেয়র নুরুল ইসলাম লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছেন। একদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অন্যদিকে পৌর মেয়র পদে অধিষ্ট থাকায় তার বিরুদ্ধে কেহ কথা বলতেও সাহস পায়নি।
উল্লেখিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়র নুরুল ইসলাম ওরফে নুর আলম হাওলাদার বলেন, কুকুর পোষাতো অন্যায় কিছু নয়। আমি আমার নিরাপত্তার জন্য কুকুর পালন করেছি। তাছাড়া একটি মহল আমাকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য নানামূখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, আমার সময়ে যতটা উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তাহা অন্য সময়ে হয়নি।