কীভাবে ডাক্তার দেখাবেন, কোন ডাক্তার দেখাবেন – না জানলে প্রতারিত হবেন

ফজলুল হক জাহিদ ॥ ডাক্তারের চেম্বার থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাড়ি এসেছেন, ঠিক তখনি মনে পড়ল ‘ওহো, সেই কথাটি তো বলা হলো না’ ‘এটাও বলা তো জরুরি ছিল’ ‘ওটা তো ঠিকমতো জেনে আসা হলো না’ চিকিৎসককে মোবাইল ফোনে পাওয়ার চেষ্টা, ও প্রান্ত থেকে ফোন ধরা হবে কি না – সেই অনিশ্চয়তা। চেম্বারের কাছাকাছি থাকলে হয়তো অস্বস্তি নিয়ে আবার চিকিৎসকের কক্ষে উকি দেওয়া- ‘স্যরি ডক্টর, আরেকটা কথা……….’।
আসুন জেনে নেই এই “ডাক্তার দেখানো” ব্যাপারটা কিভাবে ঠিকঠাক ভাবে করা যায়।

(১) সমস্যা জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিনঃ
মনে রাখবেন অনেক সময় ছোট সমস্যা পরবর্তীকালে জটিল আকার ধারন করে। আর ধরাটা খাবেন কিন্তু তখন, তাই – শরীরের কোথাও প্রচন্ড ব্যাথা, খুব বেশি জ্বর, অনবরত বমি বা পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট,গুরুতর দুর্ঘটনা, হাড় ভাঙ্গা, বোলতা-ভিমরুল বা সাপের দংশন, কুকুর-বিড়াল-ঘোড়া বা অন্য কোনো প্রানীর আঁচর-কামড়, কাশি বা কফের সঙ্গে রক্ত, মল-মূত্রে রক্ত, ঘন ঘন প্রস্রাব, শরীরের লালচে দানা, দৃষ্টি বা শ্রবনে সমস্যা – এসব উপসর্গ হঠাৎ দেখা দিলে হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে যান।

(২) উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোনঃ
ভাইরে দেশে এখন বিশেষজ্ঞের অভাব নাই, নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও অনেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেদের প্রচার করছেন। অনেকেই ধান্ধায় ব্যাস্ত। মনে রাখবেন- স্বীকৃত ডিগ্রি এবং প্রাক্টিস করার জন্য রেজিস্ট্রেশন না থাকলে, এই ভূয়া চিকিৎসকের নিকট গেলে মরনের টিকিট খুব সহজে পেয়ে যাবেন। জানুন আমাদের দেশে কোন চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন কোন কতৃপক্ষ দিয়ে থাকে
এলোপ্যাথিক — MBBS (রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কতৃপক্ষ ”বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল”)।

  •  দাতের ডাক্তার– BDS(রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কতৃপক্ষ ”বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল”)।
  •  হোমিও ডিপ্লোমা DHMS (রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কতৃপক্ষ ”বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড”)।
  •  হোমিও ব্যাচেলর BHMS (রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কতৃপক্ষ ”স্বাস্থ্য অধিদপ্তর”)।
  •  ইউনানী ডিপ্লোমা DUMS(রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কতৃপক্ষ ”বাংলাদেশ সিস্টেম অব ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক বোর্ড ”)।
  •  ইউনানী ব্যাচেলর BUMS (রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কতৃপক্ষ ” স্বাস্থ্য অধিদপ্তর”)।
  •  আয়ুর্বেদিক ডিপ্লোমা DAMS(রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কতৃপক্ষ “বাংলাদেশ সিস্টেম অব ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক বোর্ড”)।
  •  আয়ুর্বেদিক ব্যাচেলর BAMS (রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী কতৃপক্ষ ” স্বাস্থ্য অধিদপ্তর”)।

এ ছাড়া অন্য কোন কতৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশন প্রদানের ক্ষমতা রাখে না। বিদেশ থেকে যতগুলো বা যতবড় ডিগ্রি অর্জন করুক না কেনো, বাংলাদেশের প্রাক্টিস রেজিস্ট্রেশন লাগবেই।

(৩) সমস্যার তালিকা তৈরি করুনঃ
চিকিৎসকের কী কী বলতে চান সব লিখে ফেলুন, সংক্ষিপ্ত ও গুছানো।

(৪) পুরনো ব্যবস্থাপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নিন।

(৫) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের রোগ সম্পর্কে জেনে রাখুনঃ
মা-বাবা,ভাই-বোন,দাদা-দাদী,নানা-নানী,খালা-মামা,চাচা-ফুফুদের কেউ ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, মানসিক রোগাক্রান্ত ছিলেন কিনা, তা জেনে নিন।

(৬) শারীরিক পরীক্ষার জন্য প্রস্ততিঃ
শারীরিক পরীক্ষার জন্য প্রস্ততির জন্য ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। দ্রুত খোলা ও পরা যায় এমন পোশাক পরুন। হাফ হাতার জামা পরুন, তাতে রক্তচাপ মাপতে সুবিধা হয়। ডাক্তারের নিকট যাবার পুর্বে- পান, সিগারেট, বিড়ি খাবেন না।

(৭) সঙ্গী থাকুক কেউঃ
ঘনিষ্ঠ কাউকে সঙ্গে নিন, যার আপনার রোগ সম্পর্কে ধারনা আছে।

(৮) সত্য কথা বলুন নিঃসংকোচে, কিচ্ছু লুকাবেননা চিকিৎসকের নিকট। চিকিৎসক যা জানতে চায় সব বলুন, গোপন করলে সমস্যা কিন্তু আপনারই বাড়বে। চিকিৎসককে ”ইমপ্রেস” করার চেষ্ঠা করবেন না। আরেকটা ভুল অনেকেই করেন, সেটা হল উপসর্গ বাড়িয়ে বলা। হয়ত, চিকিৎসক বেশি গুরুত্ব দিবে এই আশায় অনেকে এটা করেন। কিন্তু এটা করলে চিকিৎসক বরং বিভ্রান্ত হতে পারেন।

(৯) চিকিৎসকের নিকট থেকে ভালো করে পরামর্শ, ওষুধ খাবার নিয়ম, জীবনাচরন, খাদ্যাভ্যাসগুলো বুঝে নিন।

(১০) আপনার নিজের রোগ সম্পর্কে জানুন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে সতর্কতা অবলম্বন করুন, কারন হাজারো তথ্যের ভিড়ে আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন।

আশাকরি ডাক্তার দেখাতে গিয়ে প্রতারিত হবেন না।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ … ভাল থাকুন সবসময়।