বরিশালে ৫টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ – ৭টি বাস ভাংচুর – পুলিশের লাঠিচার্জে ৩০ জন আহত – আটক ২

৭টি বাস ভাংচুর করা হয়েছে। ভাংচুরকালে বিএনপির পিকেটারদের হামলায় ৭ জন শ্রমিকসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছে। এছাড়াও বিএনপির আইনজীবী সমিতির বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিল পন্ড করে দিয়েছে। এতে ২০জন আইনজীবীসহ আহত হয়েছেন ৩০ জন নেতা-কর্মী। এছাড়া মহাসড়কে বিভিন্নস্থানে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করছে বিএনপির কর্মীরা। বরিশাল-ঢাকার পুরো মহাসড়কে ছিলো সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের মটরসাইকেল ও পুলিশের পিকআপ মহরা। নগরীসহ উপজেলার গুরুতপূর্ণস্থানে ভোর থেকেই ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দিনভর মাঝে মধ্যে কয়েকটি যাত্রীবাহি বাস চলাচল করলেও দুরপাল্লার বাস চলাচল ছিলো বন্ধ।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সোয়া ১১ টায় জেলা বিএনপি’র যুগ্ন আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি আবুল হোসেন খানের নেতৃত্বে নগরীর পোর্ট রোড এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটির ওপর পুলিশ লার্ঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। লাঠিচার্জে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। এসময় আশ্রাফ আলী (৪২) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আত্মরক্ষার্থে পাশ্ববর্তী নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে। সেখান থেকে পাড়ে উঠিয়ে তাকে লাঠিপেটা করে আটক করা হয়। পরবর্তীতে আহত আশ্রাফ আলীকে পুলিশ পাহারায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া নগরীর পলাশপুর এলাকায় নুরুল আলম জিম্ফু নামের এক বিএনপি কর্মীকে আটক করে কাউনিয়া থানা পুলিশ। দুপুর ১ টায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আদালত চত্বর থেকে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি ডিসি অফিস চত্বরে পৌছলে পুলিশ ওই মিছিলেও লাঠিচার্জ করে ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে এডভোকেট আনোয়ারা বেগম, এডভোকেট সুফিয়া বেগম, এডভোকেট শহিদ হোসেন, এডভোকেট আলী হায়দার বাবুল, এডভোকেট বাদশা, এডভোকেট সেতুসহ ২০ জন আইনজীবী আহত হন। পরে জেলা প্রশাসক সংলগ্ন শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আইনজীবী সমিতির সম্মুখে আইনজীবীরা এক প্রতিবাদ সভা করেন।


এডভোকেট আলী হায়দার বাবুল জানান, প্রতিবাদ সভায় তাদের ওপর হামলাকারী পুলিশের কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করা হয়। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলে তারা জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার ভোরে নগরীর সদর রোড, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর, হাসপাতাল রোড, কাশীপুর, আমতলার মোড়, সাগরদী, রূপাতলী, সিএন্ডবি রোড, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের ইচলাদী, বাটাজোড়, মাহিলাড়া, গৌরনদী, টরকী এবং ভুরঘাটায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং নগরীর মরকখোলা, বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের রূপাতলী পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা ও বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুরের আটিপাড়ায় গাছ ফেলে সড়কে ব্যরিকেড সৃষ্টি করে বিএনপির পিকেটাররা।


খবর পেয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এসবস্থান থেকে দ্রুত ব্যারিকেড অপসারন করেন। সকালে নগরীর হাসপাতাল রোডে ১টি মাহেন্দ্র আলফা, কাশীপুরে অটো রিক্সায়, পলাশপুরে ২টি রিক্সায় অগ্নিসংযোগ, সাগরদী ব্রীজে ২টি লোকাল বাস, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুরের আটিপাড়ায় ৪টি লোকাল বাস, বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের গুঠিয়ায় ১টি লোকাল বাস এবং ইচালাদীতে ঢাকাগামী সৌদিয়া পরিবহন ভাংচুর করে পিকেটাররা। এসময় পিকেটারদের হামলায় বাস ড্রাইভার আলতাফ, মোফাজ্জেল মৃধা, ফারুক হোসেন, সুপারভাইজার নান্টু সরদার ও মোঃ মামুনসহ ৭ জন পরিবহন শ্রমিক ও বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল। তিনি আরো বলেন, সকালে নথুল্ল­াবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্ল­া রুটের বেশ কয়েকটি বাস ছেড়ে গেলেও ভাংচুরের খবর পেয়ে মাঝ পথ থেকে তারা টার্মিনালে ফিরে এসেছে। বরিশাল থেকে দিনের বেলা অভ্যন্তরীন রুটের কিছু লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও তুলনামূলক যাত্রী ছিলো কম।

হরতালের কারনে বি.এম কলেজসহ নগরী ও জেলার অন্যান্য সরকারী-বেসরকারী কলেজের পরীক্ষা আগে ভাগেই স্থগিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী এলেও ক্লাস হয়নি। স্কুল-মাদ্রাসার অবস্থাও ছিলো প্রায় একই রকম। নগরী ও নগরীর বাইরে এসব পিকেটিংয়ের খবরে প্রধান প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র সদর রোড, বাজার রোড, চকবাজারের ব্যবসায়ীরা সকাল থেকেই দোকান পাঠ বন্ধ রাখে। তবে কোন কোন স্থানে আওয়ামীলীগ নেতারা ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে বাধ্য করেছেন বলে জানা যায়। এদিকে হরতালে নগরীসহ উপজেলা পর্যায়ে বিশৃংখলা ও নৈরাজ্য মোকাবেলায় মাঠে ছিলো আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।