ইমামরা ক্ষেপিয়ে তুলছেন মুসুল্লীদের!

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অবমাননা করার অভিযোগ তুলে এবার বরিশালের জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি ক্যাডাররা নয়া কৌশল অবলম্বন করে মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে তারা বরিশালের অধিকাংশ মসজিদের তাদের দলের প্রশিক্ষিত ইমামদের মাধ্যমে মুসুল্লীদের ক্ষেপিয়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত তিনদিন ধরে এখানে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ কর্মসূচীসহ শিবির ক্যাডারদের রক্তক্ষয়ী তান্ডবলীলা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বানচাল করার লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও জামায়াত ও শিবিরের প্রশিক্ষিত কর্মীরা কৌশল অবলম্বন করে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অবমাননা করার অভিযোগ এনে অতিগোপনে বিভিন্ন মসজিদে উস্কানিমূলক লিফলেট সরবরাহ করেছে। তাদের অনুসারি ও দলের সক্রিয় কর্মী মসজিদের ইমামদের ম্যানেজ করার ফলে গত ২২ ফেব্র“য়ারি (শুক্রবার) পুর্বপরিকল্পিত ভাবে জুম্মার নামাজের খুৎবার সময় ওইসব মসজিদের ইমামরা শাহবাগ আন্দোলনের সমালোচনা করে নামাজ শেষে মুসুল্লীদের মিছিলে নামার আহবান করেন। এসময় ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও মসজিদকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার না করার দাবি জানিয়ে ইমামের দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি করেন নগরীর বটতলা জামে মসজিদে মুসুল্ল¬ীরা। এ নিয়ে ওই মসজিদের ইমামের সাথে মুসুল্লীদের তুমুল বাকবিতন্ডাও হয়। শেষপর্যন্ত ওই মসজিদ থেকে মুসুল্ল¬ীরা মিছিল বের না করলেও নগরীর অন্যান্য অধিকাংশ মসজিদের মুসুল্ল¬ীরা জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় কর্মী ইমামদের উস্কানীমূলক কথার ওপর বিশ্বাস করে মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা নগরীর প্রাণকেন্দ্র অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সম্মুখে তৈরী করা একাত্তর মঞ্চ দখল করে সমাবেশও করে। সূত্রে আরো জানা গেছে, উস্কানিমূলক এসব লিফলেট বিতরনকালে গত ২০ ফেব্র“য়ারি বরিশালের বিভিন্ন এলাকা থেকে জনতা পাঁচজন জামায়াত-শিবিরের কর্মীকে আটকের পর গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। আটককৃতরা হলো-শেবাচিম কলেজের ছাত্র আমিনুল ইসলাম শাহিন, বাকেরগঞ্জ উপজেলার মাদরাসা ছাত্র ফজলুল করিম, আবুল হোসেন, মোহাম্মদ হোসেন ও সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজ মসজিদের ইমাম হাফেজ মোঃ আলতাফ হোসেন। একইদিন গৌরনদীর মাহিলাড়া বাজারে স্থানীয় কওমী মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল আজিজ মৃধার নেতৃত্বে ঝটিকা জঙ্গি মিছিল বের করা হয়। একই দাবিতে ২৩ ফেব্র“য়ারি বরিশাল নগরীর ফজলুল হক এ্যাভিনিউতে ওলামা মাশায়েখদের ব্যানারে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা জঙ্গি মিছিল নিয়ে টাউন হল চত্বরে নির্মান করা একাত্তর মঞ্চ ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশ তাদের বাঁধা দিলে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলসহ ২৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ২০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ওইসময় জামায়াত-শিবিরের রক্তক্ষয়ী তান্ডব লীলায় সদর রোড রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।

এ ব্যাপারে কওমী মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের জেলা শাখার সেক্রেটারী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব বলেন, আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির নামে ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করা হলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, গত ২৩ ফেব্র“য়ারি আমরা কোনো ধরনের বাঁধা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছি। সমাবেশের পর পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো তৌহিদী জনতা জড়িত নেই। একটি বিশেষ মহল পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীন দেশের মাটিতে আর যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের যেমন ঠাঁই দেয়া যাবে না। তেমনি জামায়াত-শিবিরকে নির্মুল করতে হলে তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধসহ সকল প্রতিষ্ঠান বর্জন করতে হবে। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের শেষ মরন কামড় থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সকল শান্তি প্রিয় জনতাকে সজাগ থেকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তাদের জঙ্গি কর্মকান্ডকে প্রতিহত করতে হবে বলেও তারা মনে করছেন।