থমসন মিডিয়া ফাউন্ডেশন, এমআরডিআই ও বৃটিশ হাই কমিশনের যৌথ উদ্যেগ – বাংলাদেশে দূর্নীতি দূরীকরণে সাংবাদিকতা পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যে কোন সমাজেই দূর্নীতি দমন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংবাদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে তথ্য উদঘাটন এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর ২০১২ সালের দূর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নেপাল ও সিরিয়ার মাঝখানে-১৪৪তম। ব্যক্তি ও সরকারি খাতে আর্থিক স্বচ্ছতা অর্জনের জন্য এ দেশকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে থমসন মিডিয়া ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশে এর উন্নয়ন সহযোগী এমআরডিআই ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশনের সহায়তায় ২০১২-২০১৩ ‘ইনকোয়ারার এওয়ার্ড’ প্রবর্তন করেছে। এই এওয়ার্ডের বিচারক মণ্ডলীতে ছিলেন দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, এপি বাংলাদেশ-এর ব্যুরো চিফ ফরিদ হোসেন, দ্য ডেইলি স্টার-এর ডেপুটি এডিটর শাহরিয়ার খান, প্রথম আলো’র বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন মাসুম এবং মাছরাঙ্গা টেলিভিশন-এর বিজনেস ডেস্কের ইনচার্জ মিরাজ আহমেদ চৌধুরী।
এ পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে দূর্নীতি দমন প্রয়াসে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে সরকারী অর্থ ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতা বিষয়ক উচ্চমান সম্পন্ন প্রতিবেদনকে উৎসাহিত করা এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে এসব বার্তা পৌঁছে দেয়া।
গণমাধ্যম এবং সরকারী অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বেসরকারী সংস্থা এমআরডিআই এর সহায়তায় থমসন মিডিয়া ফাউন্ডেশন গণমাধ্যমে এ বিষয়গুলোর প্রচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনজন বিজয়ীকে অভিনন্দন জানিয়ে বৃটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন বলেন, “সরকারী অর্থ ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে যাঁরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই এসব প্রতিবেদন পাঠক এবং দর্শকদের আগ্রহী করে তুলবে। বিজয়ী প্রতিবেদনগুলোতে চ্যালেঞ্জের মাত্রা ফুটে উঠেছে, একই সাথে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার উচুঁমানও প্রতিফলিত হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য এবং দূর্নীতিতে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে।”
এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “প্রতিযোগিতায় এত সংখ্যক রিপোর্টের অংশগ্রহন নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। তরুণ রিপোর্টারগণ যথেষ্ট উচুঁমানের প্রতিবেদন তৈরী করেছেন। আমি আশাবাদী, পেশাগত অঙ্গীকার, নৈতিকতা ও মান বজায় রেখে কাজ করলে এই পুরস্কার তাঁদের জন্য সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নূতন সুযোগ তৈরী করবে।”
এমআরডিআই-এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান এ উপলক্ষে বলেন, এই পুরস্কার সরকারী অর্থ ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা বিষয়টিকে সংবাদ শিরোনামে তুলে আনতে সহায়ক হবে। “আমি মনে করি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারী অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বেশী সংখ্যক অনুসন্ধানী  প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যাপারে গণমাধ্যমের সিদ্ধান্তগ্রহীতাদের আরো মনোযোগী হতে হবে। এই উদ্যোগ একটি বৃহত্তর প্রয়াসের কেবলমাত্র সূচনা।”
এ প্রসঙ্গেঁ মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, “এই উদ্যোগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সরকারী অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরীতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদকগণ সিএজি অফিসের রিপোর্ট ব্যবহার করেছেন, তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এটি অবশ্যই একটি শুভ সূচনা।”
এবারের প্রতিযোগিতায় চমৎকার কিছু প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। সংখ্যা বিশ্লেষণ, তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ এবং অডিট রিপোর্ট ব্যবহারের মাধ্যমে খবরের গভীরে প্রবেশ এবং উচুঁমানের গবেষণা প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা এবং গুণগত মান বৃদ্ধি করেছে।
এবারের ইনকোয়ারার এওয়ার্ড বিজয়ী প্রতিবেদনগুলো হচ্ছে:
সংবাদ পত্রে:
প্রথম বিজয়ী: স্বাস্থ্যখাতে দূর্নীতি বিষয়ক ধারাবাহিক রিপোর্ট। প্রতিবেদক- প্রথম আলো’র বিশেষ প্রতিনিধিদ্বয়- শিশির মোড়ল ও কামরুল হাসান।
দ্বিতীয় বিজয়ী: সরকারী ব্যাংকে বন্ধক বিষয়ক দুর্নীতির রিপোর্ট। প্রতিবেদক- মোঃ মিজানুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, যুগান্তর
টেলিভিশনে:
এই পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে অনিয়ম ও দূর্নীতি বিষয়ক ধারাবাহিক রিপোর্ট। প্রতিবেদক- মোহাম্মদ সৌরভ রহমান, স্টাফ করেসপনডেন্ট, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন
বিজয়ী তিনজনই পুরুশকার হিসাবে যুক্তরাজ্যে শিক্ষাসফরে যাবেন। সেখানে এক সপ্তাহ অবস্থান কালে তাঁরা দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া বিষয়ক রিপোর্টার, পার্লামেন্ট সদস্য, কূটনৈতিক ও যুক্তরাজ্যে প্রভাবশালী বাংলাদেশীদের সাথে বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন।