মামলা দিয়ে শাহবাগ আন্দোলন ঠেকানো যাবে না!

সৈকত গুহ পিকলু ॥ মামলা দিয়ে একটি গোষ্ঠী কিংবা ব্যক্তিকে ঠেকানো যায়! কিন্তু মামলা দিয়ে কি শাহবাগ আন্দোলনকে ঠেকানো যাবে? ধরে নিলাম শাহবাগ আন্দোলনও ঠেকে যাবে, কিন্তু মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কিংবা বিচার কি ঠেকানো সম্ভব? যারা এখনও দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের কথা চিন্তা না করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছেন, তারা কি ভুল পথে নাকি সঠিক পথে হাঁটছেন তাহা পাঠকের বিবেকের কাছেই প্রশ্ন ছেড়ে দিলাম। মামলা দিয়ে শাহবাগ আন্দোলন ঠেকানো যাবে না!

আমাদের একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, ১৯৭১ সনে দেশের পক্ষে স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও আপামর জনগন সমর্থন দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছিলেম সবুজে রক্তে লাল বিজয় পতাকা। আর ২০১৩ সনে শাহবাগ আন্দোলনও ডাঃ ইমরান এইচ সরকারের সমন্ময়ে লাখো জনতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করে দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে তরুন প্রজন্মের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও একদিন সফল হবে। চলমান আন্দোলনকে ব্যাঘাত ঘটাতে ’৭১-এর ন্যায়  এবারও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে তাদের পক্ষের একটি শক্তি আন্দোলনকে ভিন্নভাবে দেশের কিছু মানুষের মাঝে অপপ্রচার করে চলছে। কখনওবা যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়া, কখনওবা ডাঃ ইমরান এইচ সরকারসহ ব্লগাররা ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অপবাদসহ ইমরানের পিতাকে রাজাকার বলে বেড়াচ্ছে। ধরে নিলাম, শুধু ইমরানের পিতা নয়. তার চৌদ্দগোষ্ঠী রাজাকার। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কখনও কেউ কোন অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেননি কেন। আসলে ইমরান সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করাই ওই অপপ্রচারকারীদের মূল লক্ষ নয়; তাদের লক্ষ্য হচ্ছে শাহবাগের আন্দোলন তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রমকে পিঁছিয়ে নেয়া। যার জন্য ওই চক্রটি দেশে একের পর এক গণহত্যাসহ জাতীয় পতাকা অবমাননা, শহীদ মিনার ভাংচুর, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হামলা, সংল্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর কিংবা মন্দিরে অগ্নিসংযোগসহ একেরপর এক হরতাল কর্মসূচী দিয়ে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে আসছে। শাহবাগ আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে সম্প্রতি নড়াইলে একটি মামলা দায়ের করা হয়। গত ২৫ মার্চ বরিশালে আরেকটি নালিশী মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওইসব মামলার বাদীদেরকে বলতে চাই, এসব মিথ্যে মামলা দিয়ে আন্দোলনকারী তরুন প্রজন্মের কন্ঠরোধ করা যাবে না। আপনাদের স্বপ্ন নিছক মিথ্যে স্বপ্ন হয়েই থাকবে। আর ডাঃ ইমরান এইচ সরকারসহ শাহবাগ তথা সারা বাংলাদেশের গণজারন মঞ্চের তরুন প্রজন্মদেরকে বলতে চাই; শত্র“ পক্ষের দায়ের করা মিথ্যে মামলায় তোমরা ভেঙ্গে পরোনা ভাই। বাংলার কোটি কোটি জনতা রয়েছে তোমাদের সাথে। বিদেশী বন্ধুরাও আন্দোলনের শুরু থেকে রয়েছে মোদের সাথে। ১৯৭১ সনে দেশের মধ্যে যেমন করে কুৎসা রটানো হয়েছিলো, ঠিক তেমনি আজো তরুন প্রজন্মের নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছে সেইদিনের ঘাতকদের বংশদুতরা। তথ্যানুসারে, একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরন মঞ্চের সমন্ময়ক ও অনলাইন ব্লগ এন্ড এক্টিভিটিস ফোরামোর আহবায়ক ডাঃ ইমরান এইচ সরকারসহ আট জনের বিরুদ্ধে বরিশাল আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করা হয়। ২৫ মার্চ বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন এ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ খান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে তিনি নালিশী মামলাটি দায়ের করেন। ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে আজ ২৭ মার্চ শুনানীর দিনধার্য করেছেন। অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, আরিফুর রহমান, অমি রহমান পিয়াল, ইব্রাহিম খলিল, বিপ্লব, কে.এম হাসান ও আরিফ জেবতিক। এখানে বলেরাখা ভালো, দেশ স্বাধীনের ৪২ বছরের মধ্যে শাহবাগ আন্দোলনের মত একটি আন্দোলন দেশে অনেক আগেই প্রয়োজন ছিলো। দীর্ঘদিন পরে হলেও সময়ের প্রয়োজনে তা গড়ে উঠেছে এ দেশের তরুন প্রজন্মের নেতৃত্বে। তারা শীতকে উপক্ষো করে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে একদফা এক দাবি নিয়ে ‘রাজাকারদের ফাঁসির দাবি’-তে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। আর সেই সময়ে তাদের আন্দোলনী কন্ঠরোধ করতে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যে মামলা ঠুঁকে দেয়া হচ্ছে। অপপ্রচার করা হচ্ছে তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে। ওইসব অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশ্যে তরুন প্রজন্মের পক্ষে শেষবারের মতো একটি অনুরোধ করছি, এখনো সময় আছে দেশকে ভালবাসুন, দেশের সার্বভৌমত্বকে ভালবাসুন, দেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করুন আর অসৎ সংগকে পরিহার করুন।

-লেখক: আহবায়ক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, গৌরনদী উপজেলা শাখা, বরিশাল।