বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ওয়ান-ইলেভেন মঞ্চের দক্ষিণাঞ্চল বিএনপির তিন কুশীলব এখনো ‘খলনায়ক’ হিসেবে দলের বাইরেই রয়ে গেছেন। অনেক চেষ্টা করেও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মন গলাতে পারেননি তাঁরা। একদিকে কেন্দ্রের অনাগ্রহ, অন্যদিকে তৃর্ণমূল নেতা-কর্মীদের ‘না’ সূচক সম্মতিতে তাঁদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যেন থামছেই না। এর আগে কিছু সংস্কারপন্থী নেতা ক্ষমার আওতায় এলেও দক্ষিণাঞ্চলের তিন প্রভাবশালী নেতা বরিশাল-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন, বরিশাল-১ আসনের জহির উদ্দিন স্বপন এবং তৎকালীন বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠির সংসদ সদস্য হুইপ সৈয়দ শহীদুল হক জামাল এখনো দল থেকে বাহিরেই রয়ে গেছেন। এমনকি তারা দল ত্যাগ করে অন্য কোন দলে নাম লেখাচ্ছেন না। ওয়ান-ইলেভেনের সময় জিয়া পরিবার নিয়ে কঠোর সমালোচনা করায় কেন্দ্রীয় নেতারা কোনোভাবেই তাঁদের ক্ষমা করবে না বলে জানিয়েছে বিএনপির একটি সূত্র।
একই অবস্থা জহির উদ্দিন স্বপন এবং সৈয়দ শহীদুল হক জামালের নিজ নির্বাচনী এলাকায়ও। সৈয়দ শহীদুল হক জামাল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্তের পর আর এলাকায় ফেরেননি। এমনকি নিজ নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা কেউ তাঁদের মেনে নিচ্ছেন না। প্রভাবশালী এ নেতারা ইদানীংকালে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছেন।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্প্রতি তাঁদের ক্ষমা না করার বিষয়ে সাফ জানিয়ে দিলে দলে ফেরার বিষয়ে তাঁদের শেষ প্রদীপটিও নিভে যায়। আন্দোলন-সংগ্রামকে সামনে রেখে তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন দলে ফেরার।
তিন নেতার দলে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে হিজলা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল আলম রাজু বলেন, তাঁদের তৃর্ণমূলের নেতা-কর্মীরা কোনোভাবেই ক্ষমা করবেন না।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম লাবু বলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বিশ্বাসঘাতক কখনো ক্ষমা পায় না। সাধারণ নেতা-কর্মীরা কোনো বিশ্বাসঘাতককে কখনোই মেনে নেবেন না। দলের চেয়ারপারসন তাঁকে ক্ষমা করলেও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাঁকে কোনো দিনই মেনে নেবেন না।
গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া বিএনপিতে অনেক গ্রুপ-উপগ্রুপ থাকলেও কোনো গ্রুপই জহির উদ্দিন স্বপনকে মেনে নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল-১ আসন থেকে পরাজিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান বলেন, দল স্বপনকে অনেক দিয়েছে। প্রতিদানে জহির উদ্দিন স্বপন জিয়া পরিবারকে দিয়েছেন দুর্নাম। তিনি দলে ফিরতে চাইলেও গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় তাঁর স্থান হবে না।
এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘শহীদ জিয়ার জাতীয়তাবাদী দল করি। এখনো দলের সঙ্গেই আছি। কিন্তু নির্বাচনী এলাকায় রাজনীতির নামে বিএনপিতে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। তাই স্থানীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে আছি। ম্যাডাম যখন চাইবেন, তখন রাজনীতির মাঠে আমাকে দেখতে পাবেন।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি সেলিমা রহমান বলেন, জিয়া পরিবারকে নিয়ে যাঁরা কঠিন মন্তব্য করেছেন, তাঁদের চেয়ারপারসন ক্ষমা করবেন না। যাঁদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা দলীয় কর্মকাণ্ডের অংশ নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতা চেয়ারপারসনের সঙ্গে বরিশালের এ তিন নেতার বিষয়ে আলাপ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।