তরুণ প্রজন্মের সুঅভ্যাস-বদঅভ্যাস

খালেদ আহমেদ

সপ্তাহে একটি সুঅভ্যাস
যান্ত্রিক এই শহরে শত ব্যস্ততার মাঝে অনেক সময় জীবনটাকে এলোমেলো মনে হয়। সব কাজের পরও নিজের মনের স্বস্তিটা ঠিকমতো মেলে না। তাই জীবনের স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন কিছু সুঅভ্যাসের। হ্যাঁ, প্রতি সপ্তাহে মাত্র একটি করে সুঅভ্যাস যোগ করুন আপনার জীবনযাত্রায়। এতে আপনি যেমন ভালো থাকবেন, তেমনি আপনার পরিবারের সবাই সুস্থ এবং সুখে থাকতে পারবে।
সুঅভ্যাস মানে এই প্রজন্মের অনেকেই মনে করতে পারেন হাজারো নিয়মের বেড়াজাল। যেমন- ঘুম থেকে ওঠার পর গরম পানি দিয়ে হাতমুখ ধোয়া, এক্সারসাইজ করা, হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল, গরম গরম সকালের নাশতা খাওয়া, সব সময় ঘড়ির কাঁটা মেনে চলা, রাতে ঘুমানোর আগে নানা নিয়ম মেনে চলা বা আরও অনেক কিছু। প্রতিদিনের জীবনে এ রকমভাবে চললে কি আর স্বাধীনতা থাকে? এত নিয়ম তো মেনে চলা সম্ভব না। আর সকাল থেকে রাত অবধি অভ্যাসের আবর্তে ঘোরার কথা ভাবলে কার না মেজাজ খারাপ হয়। এই বিপরীত মনোভাব হয়তো একসঙ্গে সব নিয়ম রপ্ত করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। জীবনের যত ভালো অভ্যাস সব যদি একসঙ্গে একদিনে আপনার প্রতিদিনের রুটিনে যোগ করতে যান, সফল তো হবেনই না, উল্টো বদ অভ্যাসের দিকে আকৃষ্ট হবেন। তাই প্রয়োজন নিয়ম পালনের কৌশল অর্থাৎ সুঅভ্যাস গড়ে তোলার কথা বলছি। সব থেকে সহজ উপায় হলো ধীরে ধীরে এগোতে হবে। প্রতি সপ্তাহে মাত্র একটি করে ভালো অভ্যাস আপনার জীবনযাপনে যোগ করুন। খুব ছোট সাধারণ অভ্যাস হলেও হেলাফেলা করবেন না। আর ঠিকমতো নিয়ম পালন করছেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এভাবে এক সময় দেখবেন নিজের অজান্তেই আপনি অনেকগুলো ভালো অভ্যাস রপ্ত করে ফেলেছেন। শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা, সুস্বাস’্য এবং আনন্দের সৌরভে ভরে উঠেছে আপনার পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক প্রেক্ষিত এবং আপনার নিজের মানসিক স্বাস্থ। চলুন সুঅভ্যাস গড়ে তোলার একটি তালিকা করে নিই। এরপর আপনার দায়িত্ব হবে সপ্তাহে শুধু একটি করে মেনে চলার অভ্যাস করা।

সপ্তাহ-১
হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল
সারা দিনের কাজের চাপ ও ক্লান্তির পর নিয়মিত হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করবেন। হালকা-কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে ক্লান্তি দূর হয় এবং চর্বিও কম জমে।

সপ্তাহ-২
হাত ধুয়ে খাবার খান
আপাতদৃষ্টিতে পরিষ্কার মনে হলেও খাবারের আগে অবশ্যই ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। হাত ধোয়ার সময় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির শিশুদের প্রথম থেকেই এই অভ্যাস করান। দেখবেন পেটের গোলমাল ও ইনফেকশনের হাত থেকে রেহাই পাবেন।

সপ্তাহ-৩
মিষ্টি, চকোলেট কম খাবেন
সবকিছুই খান। মিষ্টি, চকোলেট, মাখন, পছন্দের খাবার হলেও তা খাওয়া যাবে না, তা কিন্তু নয়। পরিমিত পরিমাণে খেলে সমস্যা নেই।

সপ্তাহ-৪
লবণযুক্ত খাবারের পর পানি পান করুন
পরোটা আলুভাজিই হোক কিংবা বার্গার, লবণযুক্ত খাবার খেয়ে পানি পান করবেন। এই ধরনের খাবারে সাধারণত ফ্যাট এবং লবণে ভরপুর থাকে, যা ব্লাডপ্রেশার এবং হার্টের পক্ষে ক্ষতিকারক। এসব খাবার খাওয়ার পর পানি পান করলে ক্ষতির আশঙ্কা কিছুটা কমবে।

সপ্তাহ-৫
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন
বেশি করে পানি পানের কথা সব সময়ই বলা হয়। আর আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বেশি পানি পান করার প্রবণতাও থাকে। কিন্তু মনে রাখবেন প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান না করাই ভালো।

সপ্তাহ-৬
রাতের খাবার একসঙ্গে খান
যতই কাজ থাক রাতের খাবারের সময় পরিবারের সবাই একত্র হোন। খাবার খেতে খেতে একসঙ্গে গল্পগুজব করুন, সকলের খোঁজখবর নিন।

সপ্তাহ-৭
অন্যের কথা শোনার চেষ্টা করুন
বাসায় এবং কর্মক্ষেত্রে যেখানেই হোক না কেন সব সময়ই নিজেই শুধু বলবেন না। পাশাপাশি অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন। এতে একে অপরের সাথে বোঝাপড়া ও সমঝোতা ঠিক থাকবে।

সপ্তাহ-৮
পরিবারের সবার সঙ্গে শেয়ার করুন
যেকোনো বিষয় পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে শেয়ার করলে সিদ্ধান্তে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

সপ্তাহ-৯
হাঁটার অভ্যাস করুন
নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। এতে আপনার স্বাস্থ যেমন ভালো থাকবে, তেমনি কাজেও প্রফুল্লতা আসবে। সম্ভব হলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোরবেলা পার্কে গিয়ে হাঁটুন।

সপ্তাহ-১০
নিজের সঙ্গে কথা বলুন
অনেকে ভাবতে পারেন নিজের সাথে আবার কেউ কথা বলে না কি। নিজের সঙ্গে কথা বলা মানে প্রকৃতি নিয়ে ভাবুন। নিজের কাজ নিয়ে ভাবুন। সারা দিন যা যা কাজ করলেন, রাতের বেলা ঘুমানোর আগে নিজেই সেগুলোর মূল্যায়ন করুন।

সপ্তাহ-১১
সামাজিক কাজে অংশ নিন
সাধ্যমতো দুস্থ মানুষকে সাহায্য করুন। ব্লাড ডোনেট করা কিংবা বাড়ির কাজের লোককে সম্ভব হলে পড়তে শেখান। এতে আপনাকে দেখে আপনার সন্তানও ছোট থেকে অন্যের জন্য ভাবতে শিখবে এবং সাহায্য করার মানসিকতা তৈরি হবে।

সপ্তাহ-১২
খাওয়ার মেনুতে অবশ্যই স্যুপ বা সালাদ রখুন। প্রথমে স্যুপ বা সালাদ খেলে খিদে কিছুটা কমবে, ফলে ক্যালরি ঠিক থাকবে। তা ছাড়া স্বাস্থের জন্য স্যুপ ও সালাদ খুবই উপকারী।

সপ্তাহ-১৩
নিজের কাজ নিজে করুন
বাড়িতে কাজের লোক থাকলে ফরমাশ করা অভ্যাস হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সচেতন থাকুন। যতটা সম্ভব নিজের কাজ নিজে করুন। এর ফলে নিজে যেমন কর্মক্ষম থাকবেন, তেমনি শিশুরাও ছোট থেকে সুঅভ্যাসে গড়ে উঠবে।

সপ্তাহ-১৪
বই পড়ার অভ্যাস করুন। এতে সময় কাটার পাশাপাশি মন ভালো থাকবে এবং জানার পরিধিও বাড়বে। বই পড়ার অভ্যাস একদম না থাকলে প্রথম দিকে হালকা যেকোনো বই, ম্যাগাজিন পড়ার চেষ্টা করুন।

সপ্তাহ-১৫
গান শুনুন
পছন্দমতো গান শোনা অভ্যাস করুন। সকালে কাজ সারতে সারতে গান শুনতে পারেন কিংবা রাতে ঘুমানোর সময়ও গান শুনতে পারেন। আপনার সময় ও সুবিধার ওপর নির্ভর করবে কখন গান শুনবেন। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে দেখবেন মন ভালো রাখতে এর জুড়ি নেই।

সপ্তাহ-১৬
বাগান করুন
নিজের হাতে গাছ লাগানোর আনন্দই আলাদা। বাগান করার জায়গা না থাকলে ব্যালকনি বা ছাদে টবেই পছন্দের ফুল কিংবা পাতাবাহার গাছ লাগান। নিজেই বাগানের পরিচর্যা করুন এবং আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে সন্তানকে সঙ্গে রাখুন।

সপ্তাহ-১৭
মেডিকেল রেকর্ডস সঙ্গে রাখুন
ইমার্জেন্সিতে খুব প্রয়োজন মেডিকেল রেকর্ডস। আপনার ব্লাড গ্রুপ, প্রেশার, ড্রাগ অ্যালার্জি যদি থাকে তার উল্লেখ এবং অন্যান্য জরুরি তথ্য কাগজে লিখে মানিব্যাগ, গাড়িতে, অফিসে ও বাসায় রাখুন। রেকর্ড নিয়মিত আপডেট করুন।

সপ্তাহ-১৮
হাসতে শিখুন
হাসলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। সেই সাথে আর্টারি সবল থাকে, অ্যাবডমিনাল পেশি সুঠাম হয়। তাই বাড়ির সকলে মিলে মজার ছবি দেখুন এবং জোক শুনে প্রাণ খুলে হাসুন।

সপ্তাহ-১৯
মেডিটেশন করুন
মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশনের বিকল্প নেই। তাই দিনে সম্ভব হলে তিনবার মেডিটেশন করুন। তা করতে না পারলে দিনে অন্তত একবার মেডিটেশন করবেন। মেডিটেশন মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক প্রশান্তি আনে।

সপ্তাহ-২০
বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন
প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার জন্য বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দেবেন না। ফেলে আসা দিনের সঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ রাখাটাও একটা অভ্যাসের ব্যাপার। কোনো একটা ছুটির দিনে পুরনো বন্ধুদের সাথে গেট টুগেদার করুন। দেখবেন অনেক ভালো লাগবে।

প্রজন্মের বদ অভ্যাস

কথায় কথায় মিথ্যা বলা
পুলক তার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় নিজের পরিবারের সম্পর্কে বলছে, বন্ধুরাও তার পরিবারের গুণগান শুনে অভিভূত। অনেকেই ভাবছে, এত বিশাল অভিজাত পরিবারের ছেলে তাদের বন্ধু। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুলকের অধিকাংশ কথাই অনেকটা বাড়িয়ে বলা। আমাদের অনেকেরই এই রকম অভ্যাস থাকে বাড়িয়ে কথা বলা বা কথায় কথায় মিথ্যা বলা। তা সামাজিকভাবে বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অনেক বেশি পাপজনিত কাজ।
কথায় কথায় মিথ্যা বলা মুনাফেকি কাজ। হাদিসে মিথ্যাকে মুনাফেকি আমল বলা হয়েছে। সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে। মিথ্যার আশ্রয়ে সাময়িক লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু সূর্যের আলো যেমন গোপন থাকে না, তেমনি শেষ পর্যন্ত মিথ্যাও গোপন থাকে না। একদিন না একদিন প্রকাশ পেয়েই যায়। তখন লোকের সম্মুখে আগের তুলনায় আরও অধিক অপদস্ত হতে হয়। মানুষের কাছে নিজের সম্মান বলতে আর কিছুই থাকে না। সবাই তাকে মিথ্যাবাদী মনে করে। দৈনন্দিন জীবনের চলার পথে আমরা হরহামেশাই মিথ্যা বলি। এটা একটি বড় বদঅভ্যাস।
ইচ্ছাকৃত এবং অবহেলাপূর্বক ওয়াদা খেলাপ করা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা, অনেকটা কাপুরুষোচিত কাজ। যে তাকে বিশ্বাস করে তার সঙ্গে ওয়াদা খেলাপ করা বিশ্বাস ঘাতকতার নামান্তর। এই অভ্যাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য শোভনীয় নয়। সামাজিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায় অনেক দাতা খামাখা ওয়াদা করেন অথচ দেয়ার নিয়ত থাকে না। এরূপ করা ঠিক নয়। এরূপ লোকদের নিকট দান বা চাঁদা গ্রহণের জন্য যাওয়াই ঠিক নয়। আর গেলেও তাদের কাছ থেকে ওয়াদা নেয়া সমীচীন নয়। কারণ অনর্থক লোকটি ওয়াদা খেলাপির গোনায় গোনাহগার হয়। হ্যাঁ গ্রহণযোগ্য কারণে ওয়াদা খেলাপ করলে ভিন্ন কথা। সেখানে ক্ষমার অবকাশ আছে।
কথায় কথায় তর্ক-বিতর্ক করা, এক দুই কথায় ঝগড়া-কলহের সূচনা করা এবং অশ্লীল ও অশালীন কথাবার্তা অত্যন্ত খারাপ স্বভাব। প্রকৃতপক্ষে এরূপ স্বভাব মুনাফেকের হতে পারে, মুমিনের হতে পারে না। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার, ক্ষমা, উদারতা, খারাপ কথার উত্তরে চুপ থাকা অথবা উত্তমভাবে উত্তর দেয়া।

কাজ ফেলে রাখা
কিছু মানুষ আছে যাদের কাজ ফেলে রাখার একটা অভ্যাস আছে। অর্থাৎ তাদের কাজের গতিতে আছে ঢিলেঢালা ভাব। হাতে তো সময় আছে- এটা ভেবেই কাজ ফেলে রাখা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের স্বভাব এক ধরনের উদ্বেগ থেকে তৈরি হয়। কোন কাজ কীভাবে শুরু করতে হবে, কীভাবে শেষ করতে হবে, এর সম্পর্কে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সব সময় মনের ভেতর এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করতে থাকার দরুন, ক্রমশ কাজ পেছাতে থাকে, যা এক পর্যায়ে অনেক সময় এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করে। তারা একসময় মনে করতে থাকেন যে, তাদের কর্মদক্ষতার অভাব আছে। কোনো কাজ তারা সঠিকভাবে করতে সক্ষম নন। যার জন্য তৈরি হয় একধরনের অপরাধবোধ।
সময়ের কাজ সময়ে শেষ না করার দরুন, সামাজিকভাবেও এরা অপদস্ত হতে থাকেন, তাড়াহুড়ার মধ্যে তাদের কাজে প্রচুর ভুলও হতে থাকে। আর বেশির ভাগ সময়েই করেন কাজের সময়সীমা লঙ্ঘন। আর এর জন্য দায়ী দুটি জিনিস। এক. যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপমুক্ত থাকতে ভালোবাসেন। দুই. যারা সব সময়ই একটু বেশি চিন্তিত থাকেন। তাই প্রথমেই প্রয়োজন আচার-ব্যবহারের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য আনার। প্রতিটি কারণেই খুব বেশি টেনশন করলে যে কাজটি করবেন বা করছেন তার মান দেখা যাবে অনেকাংশেই কমে যায়। আবার ঠিক তেমনই সব কাজেই যদি ঢিলেঢালা ভাব বজায় রাখেন তো দেখা যাবে তা কাজের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করে না।

এমন সময় যা করবেন
কোনো একটি বিশেষ কাজ করার জন্য নিজেকে তৈরি করুন। আপনার হাতের কাজগুলোকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন। হাতে যে কাজটি নেবেন তা শেষ না করা পর্যন্ত উঠবেন না। কাজের ফাঁকে হালকা বিরতি নিয়ে অথবা কোনো গান শুনতে শুনতেও কাজ করতে পারেন। বড় বড় কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। এতে কাজগুলো শেষও হবে তাড়াতাড়ি। কাজে একঘেয়েমি লাগলে ছোট একটি বিরতি নিয়ে নিন। একঘেয়েমি ভাবটা কেটে যাবে। যে কাজটি আপনার পছন্দ নয় অথবা যে কাজটি আপনার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে, সেটা আগেভাগেই সেরে ফেলুন। দেখবেন পরের কাজগুলো করতে কোনো বিরক্তি আসবে না।

সবজান্তা ভাব
আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ আছেন যারা নিজেদের সবজান্তা মনে করেন। তারা মনে করেন আমি সব জানি। তাদের ভাবটা এমন যেন তাদের থেকে বেশি কেউ জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ মানুষ আর হতেই পারে না। আর সব থেকে অসুবিধা হয় যখন এই সব মানুষের সঙ্গে এক সাথে কাজ করতে হয়। কারণ আপনি যে কাজটাই করুন না কেন এই ধরনের সবজান্তা মানুষের কাছে সেই কাজের কোনো মূল্যই থাকে না। আপনার কোনো কাজের প্রশংসা আপনি এই ধরনের মানুষের কাছ থেকে পাবেন না। বেশির ভাগ সময়ই তাদের হাবভাবটা এমন যে আপনার থেকে তারা সেই বিশেষ কাজটি আরও ভালোভাবে করতে পারতেন। কারণ আপনার থেকে সেই বিষয়ে তার জ্ঞান অনেক বেশি। এক অদ্ভুত রকমের আত্মতুষ্টিতে ভোগেন এই ধরনের মানুষ। আর এই কারণেই নিজেদের এই সবজান্তা ভাবকে সবার সামনে জাহির করতেও তারা খুবই ভালোবাসেন। তাদের প্রত্যাশা থাকে সবাই তাদের সব কথায় তাল মিলিয়ে চলুক। আর অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তাদের মধ্যে একটা ডমিনেটিং ভাব দেখা যায়। এই সবজান্তা ভাবের কারণে কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কিংবা বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় নাও থাকতে পারে। তাই প্রয়োজন এই সবজান্তা ভাবটাকে দূর করা।

যা করতে হবে
এই সবজান্তা হাবভাবটা একদিনে তৈরি হয় না। প্রত্যেক মানুষই অন্য আরেকজনের থেকে আলাদা। তাদের বেড়ে ওঠা অথবা কাজের পরিবেশও আলাদা। তাই স্বভাবের দিক থেকেও প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই থেকে যায় বিস্তার ব্যবধান। আর এই ব্যবধান থাকার জন্যই সবজান্তা মানুষের মধ্যে অনেক দিন ধরে আস্তে আস্তে এক ধরনের সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। অবশ্য একদিনেই হুট করে এই সবজান্তা ভাব থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব নয়। প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হলো নিজের ধৈর্য বাড়াতে হবে। আর এ জন্য মেডিটেশন খুবই উপকারী। তবে এই সবকিছুর সঙ্গে অন্যের কথাও মন দিয়ে শোনার অভ্যাস করতে হবে। কারণ অন্যের কথা মন দিয়ে শুনলে নিজের বক্তব্য আপনি আরও স্পষ্টভাবে বোঝাতে পারবেন।

বই ফেরত না দেয়া
সবই অবাক হয়ে ভাবতে পারেন বই পড়া বদঅভ্যাস কীভাবে হয়? এটি তো খুবই ভালো একটি অভ্যাস। সবাই আরও এনকারেজ করে বই পড়ার জন্য। এটি মোটেও খারাপ অভ্যাস নয়। বই পড়ার মতো ভালো অভ্যাস আর হতে পারে না। যাদের বই পড়ার নেশা তারা কোনো বই পেলে উল্টে দেখবেন-এ মনটা কখনো হয় না। নিজের বই হোক অথবা বন্ধুবান্ধবদের। এমন তো প্রায়ই হয়ে থাকে, কোনো বন্ধুর বাসায় গিয়ে একটা বই খুব ভালো লাগল, বইটা হয়তো আপনার পড়ার ইচ্ছা ছিল, কিনবেন ভেবেও কোনো কারণে কেনা হয়ে ওঠেনি। আর তাই হাতের কাছে পেয়ে বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিলেন বইটা। খুবই ভালো কথা। এর মধ্যে আর অন্যায়ের কী আছে। কিন্তু এর পরেই দেখা দেয় সমস্যা। ভুলে বই ফেরত দেয়ার কথা বলছি না। এমন অনেকেই আছেন যারা বন্ধুদের কাছে থেকে বই নিয়ে ফেরত দেন না। আর এর কারণ হিসেবে অনেকে বলে থাকেন হয়তো বইটা তার ভালো লাগে না তাই ফেরত দিইনি।
আচ্ছা এটি সত্যিই কি কোনো যথাযথ যুক্তি। বই পড়া শেষ হয়ে গেলে সময়মতো ফেরত দেয়া কিন্তু আপনারই দায়িত্ব। কারণ বই পড়তে নিয়ে ফেরত না দেয়া পরোক্ষ চুক্তিরই শামিল। এতে একদিকে আপনার সম্মানহানি হবে। তেমনই পরে কেউ আর আপনাকে বই পড়তে দেবে না। এ ছাড়া তাদের সাথে আপনার সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যাবে।

কী করবেন
বই পড়া যদি আপনার প্যাশন হয়ে থাকে তাহলে আশপাশের কোনো লাইব্রেরি থেকে মেম্বারশিপ কার্ড করে নিতে পারেন। চাইলে একই সাথে দুই-তিনটা লাইব্রেরিতেও মেম্বারশিপ করতে পারেন। এতে একটা সুবিধা পাবেন। আগের বই ফেরত না দেয়া পর্যন্ত নতুন বই দেয়া হবে না। এতে আপনার বদঅভ্যাস দূর করা সহজ হবে।

অল্প আলোতে বই পড়া
বই পড়া যাদের অভ্যাস তারা যেকোনো সময় যেকোনো জায়গাতেই বই পড়তে পারেন। বই পড়াটা আসলে একটা নেশার মতো। সে স্কুলের বই হোক অথবা নিজের পছন্দমতো কোনো বই হোক, পড়তে তার কোনো সমস্যা হয় না। তখন বই সঙ্গে নেয়া না হলে মনে হয় কী যেন একটা নেই। সব জায়গাতেই তার ইচ্ছা করে বই পড়তে। দেখা যায় অনেক সময় অন্যের সমস্যার কথা চিন্তা করে রাতের বেলা লাইট নিভিয়ে বেডসাইট ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়েন। আর তখনই সমস্যাটার সৃষ্টি হয়। অনেকে ভাবতে পারেন বই পড়াতে কেন সমস্যা হবে। অবাক হওয়ার কিছু কারণ সমস্যাটা বই পড়া নিয়ে না। কম আলোয় বই পড়া নিয়ে।
বই পড়তে পড়তে অনেক সময় সময়ের খেয়াল থাকে না। তেমনি অনেকক্ষণ এভাবে কম আলোয় বই পড়তে থাকলে চোখের ব্যথা শুরু হয়। যখন আমরা কম আলোয় বই পড়ি তখন আমাদের চোখে খুব স্ট্রেস পড়ে। বিশেষ করে যারা চশমা পরেন, তাদের কম আলোতে বই পড়া একদমই উচিত না। আমরা যদি কম আলোয় বই পড়ার চেষ্টা করি। সেই মুহূর্তে আমাদের চোখের রেটিনা সেই আলোর সঙ্গে মানিয়ে নিলেও চোখের নার্ভের ওপর খুব বেশি চাপ পড়ে। এভাবে টানা কয়েক দিন চললে চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখ থেকে পানি পড়তে পারে, চোখ অথবা মাথাব্যথা করতে পারে। এগুলো হলো প্রাথমিক লক্ষণ। এগুলোর মাধ্যমে আসলে শরীর আমাদের জানান দেয় যে ভবিষ্যতে গুরুতর সমস্যা হতে পারে।

কী করবেন
নাইট ল্যাম্পের আলোয় বই না পড়ে বেড সাইট টেবিলে রিডিং ল্যাম্প জ্বালিয়ে বই পড়া যেতে পারে। যদি মনে হয় রিডিং ল্যাম্পেও কারও সমস্যা হতে পারে সে ক্ষেত্রে বুক ল্যাম্পও ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে তা চোখের থেকে অন্তত ১ ফুট দূরে রাখবেন। এরপরও প্রতি ২০ মিনিট পরপর চোখের ব্যায়াম করতে হবে। নইলে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া শাক-সব্জি খাওয়া যেতে পারে। আর প্রতি রাতে এক গ্লাস দুধ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে তো খুবই ভালো হয়।

অতিরিক্ত টিভি দেখা
সিফাত সকাল-সন্ধ্যা যখনই ঘরে ঢোকে তখনই দেখে তার মা এবং বোন টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখা নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া অন্য কোনো কাজ করার তাদের সময় নেই বললেই চলে এক কথায়। হিন্দি সিরিয়ালের এই প্রভাব তাদের বাস্তবিক জীবনেও নানাভাবে পরিলক্ষিত হয়। সব মিলিয়ে একেবারে ধুন্ধুমার কাণ্ড। মা তো আগে থেকেই চোখে চশমা ব্যবহার করেন, ইদানীং দেখা গেছে ছোট বোনটিও নাকের ডগায় চশমা ঝুলিয়ে বেড়ায়। সব মিলিয়ে একেবারে কানার স্বর্গে বসবাস করার মতো। এ রকম গল্প বর্তমানে আমাদের প্রায় সবার ঘরেই দেখা যায়। পুরুষের চেয়ে এক্ষেত্রে শিশু এবং নারীরা অনেক বেশি এগিয়ে। তাদের কাজের পরিধিটাও কম তো বেশির ভাগ সময়ই তারা তাদের অবসর সময়টুকু টিভির সামনে কাটিয়ে দেয়।
যারা অধিক সময় টিভি দেখে তারা পরবর্তী জীবনে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। ইউনিভার্সিটি অব সিডনির গবেষকরা এর প্রমাণ পেয়েছেন। তারা দেখতে পান ছয় বছরের একটি বাচ্চা যে অধিকাংশ সময় টিভি দেখে তার চোখের পেছনের শিরা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এই শিরা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে বাচ্চাটির বড় হওয়ার সাথে সাথে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। সাধারণত গড়ে আমরা প্রতিদিন গড়ে ১.৯ ঘণ্টা টিভি দেখি এবং ৩৬ মিনিট শরীরচর্চা করি। যারা এক ঘণ্টারও বেশি টিভি দেখে, তাদের আধা ঘণ্টার কম টিভি দেখা মানুষের তুলনায় বেশি রোগাক্রান্ত হয়েছে। দেখা যায় যারা বেশি পরিমাণ খেলাধুলা করে তারা কম রোগে আক্রান্ত হয়। তারা পরবর্তী জীবনেও কম রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত স্বাস্থ্যহানিকর কাজ ছোট সময়ে প্রভাব ফেলে যা বড় হওয়ার সাথে সাথে রোগ আকারে আমাদের জীবনে এসে থাকে। এক ঘণ্টার বেশি বাচ্চাদের টিভি দেখাকে খেলাধুলার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে হবে। স্কুলগুলোতে দুই ঘণ্টার খেলাধুলার ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

জোরে কথা বলা কি বদঅভ্যাস?
জোরে কথা কি বদঅভ্যাসের মধ্যে পড়ে? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই আসতে পারে। কিংবা মনে হতে পারে আমি জোরে কথা বলছি, সেটা অন্য কারও কেন অসুবিধার কারণ হবে। কিন্তু একবার নিজেকে অন্যের জায়গায় বসিয়ে দেখুন তো!
বাসে অথবা পাবলিক কোনো প্লেসে অথবা লাইব্রেরিতে আপনার পাশে বসে যদি কেউ জোরে কথা বলে, কেমন লাগবে আপনার। আর যাই মনে হোক না কেন বিষয়টি যে আপনার ভালো লাগবে না তা হলফ করে বলা যায়। আসলে প্রায়ই আমাদের সাথে এমন হয়ে থাকে। কোনো পাবলিক প্লেসে গেছি, কোথাও সিনেমা দেখতে গেছি অথবা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা, হঠাৎ পাশে বসে থাকা ব্যক্তির মোবাইলে বেজে উঠল কোনো সিনেমার আইটেম সং, সেই ব্যক্তি ফোন কেটে দেয়া অথবা দূরে গিয়ে কথা বলা তো দূরে থাক, আপনার পাশে বসেই জোরে জোরে কথা বলা শুরু করে তাহলে আপনার সিনেমা দেখার মুডটাই নষ্ট হয়ে যাবে। কিংবা মনে করেন কোথাও মন দিয়ে কোনো কিছু শুনছেন কিন্তু আপনার পাশের মানুষটি জোরে জোরে তার বন্ধুর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।
এসব তো গেল অচেনা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। আপনার কাছের কোনো মানুষ যদি এভাবে তার স্বরে কথা বলেন? স্থান, কাল-পাত্র বিবেচনা না করে সব কথা চেঁচিয়ে বলা অভ্যাস, এমন মানুষের সংস্পর্শে আমরা খুব কমবেশি অনেকেই এসেছি। এ ধরনের মানুষের যখন কথা বলেন তখন ভুলে যান যে, আশপাশে মানুষ আছে, যাদের অসুবিধা হতে পারে। এর ফলে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন। তার সংস্পর্শ সবাই তখন এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেন।

এমন হলে যা করা উচিত
কোনো একটি অভ্যাস একদিনে তৈরি হয় না, সেটা ভালো হোক অথবা খারাপ। ঠিক তেমনই কোনো একদিন হুট করে চাইলেই কোনো অভ্যাস বদলে ফেলা যায় না। তবে চেষ্টা করতে তো কোনো অসুবিধা নেই। বিশেষ করে কোনো খারাপ অভ্যাস যত দ্রুত সম্ভব পারা যায় ত্যাগ করাই ভালো। এতে আমরা নিজেরাও যেমন ভালো থাকতে পারব, তেমনি কারও অসুবিধাও হবে না আমাদের কারণে। অকারণে জোরে কথা বললে সবাই মনে করতে পারে আপনি ঝগড়া করছেন। এমন ভাবার সুযোগ আপনি কেন কাউকে দেবেন। আস্তে আস্তে কথা বললে শুনতেও ভালো লাগে আর আপনার ভোকাল কর্ডও ভালো থাকবে।

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করা
মুখের ভেতরে গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তির ফলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। আপনি নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস না করলে মুখের ভেতরে ও দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণিকায় ব্যাকটেরিয়া জমতে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো থেকে নির্গত গন্ধকের যৌগের কারণে আপনার নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়। নির্দিষ্ট কিছু খাবার বিশেষ করে যাতে ঝাঁঝাল তেল থাকে যেমন পেঁয়াজ ও রসুন খেলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে কারণ তেলগুলো আপনার ফুসফুসে বাহিত হয় ও তারপরে মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। ধূমপানও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হওয়ার একটি বড় কারণ, দুর্গন্ধের বড় যে কারণ নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করা এই বদঅভ্যাসটি অনেকের মাঝেই দেখা যায়।

নিয়মিত ব্রাশ করলে যা হয়
খাবার : আপনার দাঁত ও তার আশপাশে জীর্ণ হতে থাকা খাদ্যকণিকা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হতে পারে। উদ্বায়ী তেলযুক্ত খাবার খাওয়াও নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের আর একটি কারণ। সব থেকে পরিচিত উদাহরণ হলো পেঁয়াজ ও রসুন, কিন’ অন্যান্য সবজি ও মসলা থেকেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। এই খাবারগুলো হজম হয়ে গেলে ঝাঁঝাল তেলগুলো রক্তে মিশে যায় ও সেখান থেকে ফুসফুসে বাহিত হয় এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সেগুলোকে শরীরের বাইরে বের করে দেয়া হতে থাকে, যতক্ষণ না ওই খাবার আপনার শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়ে যায়। পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়ার পর ৭২ ঘণ্টা অবধি নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ থাকতে পারে।
দাঁতের সমস্যা
দাঁতের অপরিচ্ছন্নতা ও মাড়ি এবং দাঁতের রোগ থেকে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। রোজ ব্রাশ ও ফ্লস না করলে আপনার মুখে খাবারের কণা থেকে যায়, যাতে ব্যাকটেরিয়া জমা হয় ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস বেরোতে থাকে। আপনার দাঁতের ওপর একটি বর্ণহীন, চটচটে ব্যাকটেরিয়ার (প্লেইক) আস্তরণ জমে।

অসুখ
অনেক দিনের পুরনো ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ফুসফুসের ফোড়া থেকে নিঃশ্বাসে অত্যন্ত বিশ্রী গন্ধ হতে পারে। অন্যান্য রোগ যেমন কিছু ক্যান্সার এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট বিপাকীয় গোলযোগ নিঃশ্বাসে একটি বৈশিষ্ট্যমূলক গন্ধের জন্ম দিতে পারে।

  • মুখের ভেতর ও দাঁত অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন রাখুন। ব্রাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করে দুটি দাঁতের মাঝখানের অংশ পরিষ্কার করাও খুব জরুরি।
  • জিবছোলা ব্যবহার করুন ও জিবের একবারে গোড়া পর্যন্ত পরিষ্কার করুন।
  • আপনার দন্ত চিকিৎসক বা ওষুধদাতার সুপারিশ করা মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। এটি ব্যবহার করার পর থেকে ভালো সময় হলো ঠিক ঘুমাতে যাওয়ার আগে।
  • প্রচুর তরল গ্রহণ করুন, খুব বেশি কফি এড়িয়ে চলবেন অবশ্যই।
  • দুগ্ধজাত বস্ত, মাছ ও মাংস খাওয়ার পরে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
  • চিনিবিহীন চুইংগাম চিবান, বিশেষ করে যদি আপনার মুখ শুকনো লাগে।
  • টাটকা, আঁশযুক্ত তরিতরকারি খান।
  • নিয়মিত আপনার দন্ত চিকিৎসককে দেখান এবং প্রয়োজনমতো পেশাদারি হাতে দাঁত পরিষ্কার করুন।

অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন
শরীর ও মনের শক্তি পুনঃসঞ্চয় (রিস্টোর) করার জন্য এবং সব ধরনের শারীরবৃত্তিক কাজের সক্ষমতা রক্ষার জন্য ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। স্মৃতি ধরে রাখতে, আবেগকে পরিচালিত করতে ও মনঃসংযোগ বাড়াতে ঘুমের ভূমিকা আছে। হরমোনের নিঃসরণ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ৱায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালাতেও ঘুমের প্রয়োজন। কিন’ এই ঘুমের জন্য যদি কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করাটা বেশি বেশি হয়ে যায় তাহলে তা শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। অনেকেই আছেন ঘুমের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করে থাকেন। তাদের জন্য এবার কিছু পরামর্শ।

কতটা ঘুমালে তবে ‘ঘুম’ বলা যায়
কিছু মানুষ আছে যাদের বলা হয় ‘শর্ট স্লিপার’, যারা প্রতিদিন গড়ে ছয় ঘণ্টারও কম সময় ঘুমিয়ে তাদের স্বাভাবিক কাজগুলো সচল রাখতে পারেন। আর যাদের প্রতিদিন গড় ঘুমের পরিমাণ কমপক্ষে নয় ঘণ্টা, তাদের বলা হয় ‘লং স্লিপার’। কেউ কম ঘুমিয়েই তার ঘুমের চাহিদা পূরণ করতে পারে, আবার কারও লাগে বেশি ঘুম।

ঘুমের সমস্যার সাধারণ কিছু লক্ষণ
ঘুম না আসা, আসতে দেরি হওয়া। দিনের বেলায় জেগে থাকতে না পারা। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়া। ঘুমের মেধ্য যেকোনো অস্বাভাবিক আচরণ করা। শ্বাসকষ্ট হওয়া, হাঁটা, কথা বলা, চিৎকার করা, হাত-পা ছোড়া ইত্যাদি। নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমানোর পর জেগে উঠে তন্দ্রাভাব ও ক্লান্ত-বোধ করা।
মেজাজ খিটখিটে থাকা, মনোযোগ কমে যাওয়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া এমনকি খিঁচুনি হওয়া।

পরামর্শ
ঘুমের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবার আগে যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো ঘুমের সমস্যা। যাই হোক না কেন এ জন্য কোনো অবস্থাতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ সেবন করা যাবে না। ঘুমের সমস্যার রয়েছে নানা রকম বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা।

ঘুমের সমস্যা : কী করবেন
প্রতি রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাবেন ও প্রতি সকালে একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করবেন। বিছানায় হেলান দিয়ে বিশ্রাম নেয়া (বিশেষত বিকেলের পর) বর্জন করার চেষ্টা করুন।
হালকা ব্যায়াম অনেক ক্ষেত্রে ভালো ঘুমের সহায়ক। ঘুমাতে যাওয়ার দুই-তিন ঘণ্টা আগে একটু বেশি সময় নিয়ে হালকা গরম পানিতে গোসল করলে প্রশানি- পেতে পারেন। ঘুমের আধা ঘণ্টা আগে সামান্য হাঁটাহাঁটি, মেডিটেশন, গল্পের বই পড়াও ভালো ঘুমের জন্য উপযোগী।
শয়নঘরটিকে পরিপাটি, আরামদায়ক ও বাতাস চলাচলের উপযোগী রাখুন। রাতে বেশি সময় ইন্টারনেটে কাটাবেন না। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই-চার ঘণ্টা আগে রাতের খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। ভাজা, পোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। দিনের বেলা কিছুটা সময় সূর্যের আলোর নিচে কাটান।
রাতে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় বর্জন করুন। বর্জন করুন নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল। বিবাহিতদের জন্য নিয়মিত সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স ভালো ও পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সহায়ক।
ঘুমাতে গিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা বর্জন করুন। প্রয়োজনে নিতে পারেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। তবে নিজে নিজে ঘুমের ওষুধ সেবন কখনোই নয়।

খুব বেশি ধূমপান করা
নিকোটিন একটি অ্যাডিক্টিভ স্টিমিউলেন্ট যা আস্তে আস্তে মানুষকে শারীরিক, মানসিকভাবে সিগারেটের ওপর নির্ভর করে তোলে। নিয়মিত স্মোক করার ফলে হার্টে অক্সিজেন কম পৌঁছায়। যে কারণে ব্লাড কল্টিং এবং ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা দেখা যায় এবং শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। চেন স্মোকার না হলেও কিন্তু ক্ষতিটা যে কম হয় তা কিন্তু নয়। সরাসরি ইনহেল না করলেও ঠোঁটের, মুখের, গলা, জিবের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কোনোভাবেই কম হয় না। এর সঙ্গে থাকে যায় হার্ট এবং ফুসফুসের নানা অসুখ, এতে রয়েছে অ্যামনিয়া ক্যাডিমিয়াম ও কারসিনোজেনিক নাইট্রেটসেমাইন। এ ছাড়া সিগারেটে ক্ষতিকর কেমিক্যাল আছে যেমন ন্যাপথেলিন, এসিটোন, বিউটোন। আপনি ধূমপানের মাধ্যমে যে শুধু নিজের ক্ষতি করছেন তা কিন্তু নয়, আপনার দ্বারা আপনার পাশের লোকটিও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

কী করবেন?

  • আপনার ধূমপানের সময় বের করেন। যেমন- একাকী সময়, আড্ডার সময়, চা/কফির পর, খাবার পর, দুশ্চিন্তার সময় ইত্যাদি।
  • সময়গুলো লক্ষ করুন ও নোট করুন।
  • ঠিক করুন ওই সময়ে আপনি ধূমপানের পরিবর্তে কী করবেন? যেমন আপনি চা খাওয়ার পর ধূমপান করেন। এখন ঠিক করেন চা খাওয়ার পর আপনি কী করবেন, যেমন আপনার প্রিয় গেম খেলবেন অথবা ব্লগিং করবেন। মনে রাখবেন ওই সময় পার হয়ে গেলে আপনার ওই সময়ের ধূমপান করার আগ্রহ থাকবে না।
  • ধূমপান ছাড়ার একটা দিন ও সময় নির্ধারিত করুন। শেষ ধূমপান করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন যে আপনি আর ধূমপান করবেন না।
  • শেষ ধূমপানটা একটা আয়োজনের মতো করে পার্টি দিন অথবা বন্ধুদের সাক্ষী রাখুন।
  • বন্ধু, সহকর্মী যাদের সাথে প্রত্যেক দিন কথা হচ্ছে তাদের বিষয়টা জানান।
  • ধূমপানের কুফল সম্পর্কে যারা ধূমপান করে তাদের জানান।
  • যখনই আপনার ধূমপানের ইচ্ছা করবে, তখন পানি বা অন্য কিছু খেয়ে অন্য কিছুতে মনোযোগ দিন।
  • ধূমপানের কুফলসম্পর্কিত ম্যাগাজিন, ছবি, সিনেমা দেখুন।
  • একজন প্রতিরক্ষাকারী হোন।

পানি কম খাওয়া
শরীরকে সুস্থ, সুন্দর ও সতেজ রাখতে বেশি বেশি করে পানি খান। শুধু তেষ্টা পেলেই পানি খাওয়া নয়, ঠিকমতো পানি খেতে হবে। গরমকালে নিয়ম মেনে পানি খাওয়া তো অত্যাবশ্যকীয় কাজ। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই আমরা পানি খাওয়ার কথা ভুলে যাই। এটা একেবারেই ঠিক না। এই অভ্যাসটিও একটা গুরুতর বদঅভ্যাসের ফলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। নিয়মিত পানি খেয়ে সুস’ থাকার কিছু পরামর্শ।

কেন পানি খাবেন

  • হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে
  • কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে
  • হাই ব্লাডপ্রেশার থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে
  • মাথাব্যথা সারাতে
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে
  • ত্বক ভালো রাখতে

পানি কম খেলে কী হতে পারে

  • পানির অভাবে ডিপ্রেশন দেখা যেতে পারে।
  • শরীরে পানির অভাবে মাইগ্রেনের সমস্যা একটা বড় কারণ।
  • কোনো শক্ত খাবারের সঙ্গে বেশ খানিকটা পানি খাওয়া উচিত। পানি হজমের জন্য খুবই দরকারি।
  • আমাদের মস্তষ্কে তৈরি হওয়া এনার্জির মাত্রা বেশ কিছুটা হ্রাস পায়, শরীরের পানিশূন্যতা দেখা দিলে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের এক বড় কারণ কম পানি খাওয়া।
  • পানি আমাদের ফুসফুসকে আর্দ্র করে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের আনাগোনা সহজ করে তোলে।
  • পানির অভাবে বর্জ্য পদার্থ জমে জমে কিডনি দুটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • বুকজ্বালা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়, পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে।
  • পরিমাণমতো পানি খেলে ও এক্সারসাইজ করলে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথাও কমে যায়।

কতটা পানি খাবেন
কতটা পানি খাবেন তার কোনো নির্দিষ্ট মাপ নেই। দৈনিক কার্যাবলির ওপর নির্ভর করে কতটা পানি আপনার জন্য দরকার। সাধারণ অবস্থায় পুরুষের জন্য প্রতিদিন ৩ লিটার বা ১২ গ্লাস পানি খাওয়া দরকার। আর মেয়েদের জন্য প্রতিদিন ২ লিটার বা ৮ গ্লাস পানি খাওয়া দরকার। প্রতি ১৫ থেকে ২০ মিনিট এক্সারসাইজের পর ১ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই দিনে অন্তত ১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানিই সবচেয়ে সুরক্ষিত পানীয়।

শপ লিফটিং
ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া দিপা এবং নিপা বেরিয়েছে কিছু ছোটখাটো কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। তারা সিদ্ধান্ত নিল প্রথমেই কিছু কসমেটিক্স কিনে নেয়া যাক। তারা সোজা গিয়ে ঢুকল নিউমার্কেটের একটি কসমেটিক্সের দোকানে, সেখানে ঢুকেই তারা কানের দুল, হাতের চুড়ি ইত্যাদি দেখতে লাগল হঠাৎ করেই নিপা তার পছন্দ হওয়া একজোড়া বালা তার ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলল। কিন্তু দুঃখের বিষয় কাজটি সে দোকানদারের চোখ ফাঁকি দিয়ে করতে পারল না। দোকানদার সাথে সাথেই তার ব্যাগে তল্লাশি চালাল এবং বালাগুলো খুব সহজেই বেরিয়ে এলো। তারপর আর কী যা হওয়ার তাই, দোকানদারের চোটপাট-সব মিলিয়ে মহালঙ্কাকাণ্ড। মূলত কাজটি যে সে টাকার অভাবে করেছে তা কিন্তু নয়। অনেকটাই দুষ্টামি করেছে সে। অনেক ছেলে তো এটিকে শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। দোকান থেকে রেজর, শেভিং ফোম, কলম, পেন্সিল, অ্যান্টিকাটার, চকোলেট, বিস্কুট ইত্যাদি খুব সহজেই তারা চুরি করে। আবার এমনও হয় চুরি করা জিনিস পছন্দ না হলে আবার চুরি করে বদলে আনে। কিন্তু এটি একটি ভয়াবহ রকমের বদঅভ্যাস। এই রকম বদঅভ্যাস আমাদের অনেকেরই রয়েছে।

শপ লিফটিংয়ে মানহানি
সাধারণত এই রকম দোকানে ছোটখাটো চুড়ির অভ্যাসে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর নানা ধরনের বৈরী প্রভাব পড়ে। সামাজিকভাবে অপদস্ত হওয়া লাগে। নিজের সামাজিক অবস্থান নষ্ট হয়ে যায়। বন্ধুমহলে নিজের আর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। যা সব মিলিয়ে নিজেকে একেবারে সমাজচ্যুত করার মতো বিশাল বড় হুমকি। অনেকেই আছে এভাবে চুরি করাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। অনেকে বন্ধুদের মাঝে বাজি ধরে যা পরবর্তীতে ফলাফল অনেক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। হয়তো প্রথম এক-দুবার ধরা না খেতে পারেন বা দীর্ঘকাল ধরে আপনি বিভিন্ন দোকানে আপনার এই চর্চা চালিয়ে আসছেন কিন্তু ধরা এখনো পড়েননি, এতে নিজেকে অনেক বেশি চতুর ভাবার অবকাশ নেই। কেননা একদিন আপনি ধরা পড়বেনই। এটা চিরন্তন সত্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেদিন আর কিছুই করার থাকবে না। নিজেদের এই ছোটখাটো সমস্যা দূর করতে নিজের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। নিজেকে তৈরি করুন নতুন করে। প্রতিজ্ঞা করুন এটাই শেষ আর নয়।

ভালো শ্রোতা হওয়া
ভালো বক্তা অনেকেই হতে পারেন কিন্তু ভালো শ্রোতা হওয়াটাও খুবই জরুরি। আর সব ভালো বক্তাই যে ভালো শ্রোতা হবেন-এমন ধারণাটাও কিন্তু’ বেশির ভাগ সময় মেলে না। কিন্তু আমরা বুঝব কী করে যে কে খারাপ শ্রোতা? এটা বোঝা কিন্তু খুব একটা সমস্যা নয়। সাধারণত যারা খারাপ শ্রোতা হন তাদের কাছে বেশির ভাগ সময়ই যে কোনো রকমের আলোচনাই একঘেয়ে লাগে। কোনো বিষয়ে আলোচনা করতেই তারা উৎসাহ পান না। তাই বেশির ভাগ সময়ই তাদের মাঝে একটা গা-ছাড়া ভাব দেখা যায়। এরা খুব তাড়াতাড়ি অন্য মানুষকে সমালোচনায় ফেলে দেন। এদের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর অভ্যাস দেখা যায়। অন্য কেউ হয়তো কথা বলছে কিন্তু তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মাঝখান থেকে নিজেই কথা বলতে শুরু করেন। মন দিয়ে অন্য কারও কথা না শোনার কোনো অভ্যাস থাকে না। নিজেই কথা বলে যান অথবা কারণে-অকারণে যে কোনো কথার মাঝখানে হঠাৎ করে অধৈর্য হয়ে সে জায়গা থেকে উঠে চলে যাওয়া বা কোনো একটি জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ওরা অন্যের মনোযোগ কাড়তে চায়। খারাপ শ্রোতা হওয়ার অনেক অসুবিধা আছে। তখন কী করবেন?

যা করবেন
খারাপ শ্রোতা মানে আপনার অ্যাটেনশন স্প্যান খুবই কম। তাই প্রথমেই যেটা প্রয়োজন তা হলো আপনার মনঃসংযোগ এবং ধৈর্য বাড়ানো। আর তার জন্য খুব ভালো উপায় মেডিটেশন। প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে বিকেলে মেডিটেড করা উচিত। শুরুর দিকে ১০-১৫ মিনিট করতে পারেন। পরে আস্তে আস্তে এর সময়টা বাড়ানোর চেষ্টা করুন। মন থেকে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা বের করে দিন। ভালো-খারাপ মিশিয়ে সবকিছু হয়। কিন্তু সব সময় সবকিছুর মাঝে খারাপ দেখতে গেলে আপনার মানসিকতা খারাপ হয়ে যাবে। তাই সব কিছু পজিটিভলি দেখার চেষ্টা করুন। সবার কথাই মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন।

অজান্তে নখ খাওয়া
খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, নখ খাওয়ার অথবা দাঁত দিয়ে নখ কাটা কিংবা নখের পাশের চামড়া কাটার অভ্যাস অনেকেরই আছে। তবে এটাকে অভ্যাস বললে খুব কমই বলা হয়। আসলে দাঁত দিয়ে নখ কাটা খুবই খারাপ একটি অভ্যাস। এটি যত তাড়াতাড়ি পাল্টে ফেলা যায় তত ভালো। শুধু ছোট নয়, বড়দের মাঝেও এই নখ খাওয়ার বদঅভ্যাসটি দেখা যায়।
কিন্তু কেন আমাদের মধ্যে এই দাঁত দিয়ে নখ কাটার বদঅভ্যাসটি তৈরি হয়? এর পেছনেও রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। সাধারণত দেখা যায় কেউ যখন কোনো প্রকার টেনশনে থাকে অথবা এক্সাইটেড থাকে, তখন নিজের অজান্তেই একেকজন একেক রকম ব্যবহার করতে থাকেন। কেউ হয়তো বারবার একই রকম অ্যাকশন রিপিট করতে থাকে। যেমন পায়চারি করা, কেউবা কোনো একটি জিনিস যেমন- পেন্সিল মোবাইল ফোন ইত্যাদি সমানে নাড়াচাড়া করতে থাকেন। তেমনই কেউ কেউ আবার খুব এক্সাইটমেন্ট অথবা টেনশনের সময়ে নখ খান। এই বদঅভ্যাসটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় অনিকেফ্যাজিয়াও বলা হয়। এই অভ্যাসকে একধরনের ‘স্টেরিওটাইপিক মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার’ বলে ধরা হয়। সমীক্ষা করে দেখা গেছে, যেসব বাচ্চা নিয়মিত নখ খায়, তাদের লেড পয়জনিং হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। অনেকেই হয়তো ভাবছেন নখ খেলে লেড পয়জনিং হবে কীভাবে? বাচ্চারা যখন বাইরে খেলাধুলা করে, বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয়, তখনই তারা বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংস্পর্শে আসে। যখন তারা আঙুল মুখে দেয় জার্মগুলোও তাদের মুখে ঢুকে পড়ে। এর ফলে ইনফেকশনসহ পেট খারাপও হতে পারে। তবে এর সাথে সৌন্দর্যের ব্যাপারও জড়িত। চিন্তা করে দেখুন তো নখ খাওয়া আঙুল দেখতে কি খুব ভালো লাগে!

যা করবেন
কীভাবে এই বদঅভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, উত্তরটা আমরা সকলেই জানি। ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। বাচ্চাদের এই অভ্যাস দূর করার দায়িত্ব নিতে হবে বাবা-মায়ের। তাদের  বোঝাতে হবে যে নখ খেলে অনেক ধরনের বাজে অসুখ হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে তারা নখ খাওয়া বন্ধ করলে তাদের পুরস্কারও দেয়া যেতে পারে। নখ খেলে তাদের সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে যাবে- এমন ধারণা তাদের মধ্যে জন্মালে তারা সচেতন হতে পারে।

গোসল করতে অনীহা
রোজ স্নান না করার অভ্যাসটি একবাক্যে খুবই অস্বাস্থ্যকর। আর আমাদের মতো গ্রীষ্মকালীন দেশের জন্য তো অবশ্যই। এই বদঅভ্যাসের ফলে হতে পারে নানা রকমের অসুখ। প্রতিদিন গোসল না করলে দেখা দিতে পারে স্কিন র‌্যাশ ও নানা ধরনের স্কিনের সমস্যা। সব থেকে বেশি বিরক্তিকর হলো এর ফলে সৃষ্টি হয় গায়ের দুর্গন্ধ। কেউ আবার ভাবতে পারেন পারফিউম ব্যবহার করে সমস্যাটির সমাধান করা যেতে পারে। তবে তাদের জন্য বলা যায় এ কাজটি সমাধান না সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেবে। ঘামের দুর্গন্ধের সাথে মিলে পারফিউম এক বিকট গন্ধের সৃষ্টি করবে।
অনেক সময় দেখা যায় যারা শীতপ্রধান দেশে থাকেন তারা প্রতিদিন গোসল না করে স্পঞ্জ বাথ নিয়ে থাকেন। তবে আমাদের দেশে গরম ও আর্দ্রতার সাথে দূষণও এত বেশি হয় যে প্রতিদিন ঘামের সঙ্গে আমাদের শরীরে জমে অনেক ধুলো, ময়লা। আর এই ধুলো-ময়লা আমাদের ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। এ ক্ষেত্রে গোসল করলে ত্বক রিহাইড্রেটেড হয়, কারণ জল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। সারা দিনের ক্লান্তি কাটানোর জন্য ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে খুবই তরতাজা লাগে।
নিয়মিত গোসল না করলে ঘুমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কারণ গোসল না করলে আপনার বডি টেম্পারেচার বেড়ে যায়, এর ফলে শরীরে একটি অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। যাদের ঘুমের সমস্যা ইনসমনিয়া আছে তাদের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গোসল করা উচিত।

এমনটা হলে কী করবেন
গরমকালে প্রতিদিন নিয়ম করে ২ বার গোসল করা উচিত। এছাড়া যারা খেলাধুলা করেন তাদের জন্য গোসল করা জরুরি। এতে একদিকে যেমন শরীরের ধুলো-ময়লা দূর হয়, সেই সাথে শরীরটাও ফ্রেশ হয়ে যায়। সন্ধ্যার সময় বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ৱান করা উচিত। এ সময়ে সারা দিনের সব চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে রাখলে ভালো। দেখবেন আপনার মুডটা একেবারে পাল্টে গেছে।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
তরকারিতে লবণ আছে তারপর খাওয়ার সময় অনিকের লবণ চাই-ই চাই। এ জন্য মায়ের কাছে তার শুনতে হয় বকা। কিন্তু কী আর করা লবণ ছাড়া যে ভাত মুখে যাওয়ার কথা নয়। অনিকের মতো অনেকেই জানে না খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অনেক ক্ষতিকারক দিক আছে। তাই প্রথমেই জেনে রাখা ভালো যাদের হাইব্লাডপ্রেশার আছে তাদের জন্য লবণ খাওয়া খুবই বিপজ্জনক। অতিরিক্ত লবণ আপনার হার্টের আর্টারি বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে আপনার স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশি লবণ খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আবার অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে কিডনিতে স্টোনও হতে পারে। সাধারণত যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক লোকের কখনোই ৬ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এটা কোনোভাবেই মনে রাখা হয়ে ওঠে না এবং লবণ খাওয়ার পরিমাণটাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়। আমরা প্রত্যেকেই রোজ ৯.৫ গ্রামেরও বেশি লবণ খেয়ে থাকি যা প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। আমাদের অনেকের হয়তো জানা নেই যে, বিভিন্ন রকমের প্রসেসড ফুড যেমন ব্রেকফাস্ট ম্যানু, স্যুপ, সস, বিস্কুট এবং রেডি মিলে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো।

কী করবেন?
লবণ বেশি খাওয়া খারাপ মানেই যে খাবারে একেবারেই লবণ দেবেন না এমনটি কিন’ নয়। আপনার শরীরে কিন্তু সোডিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে। যদি কিছুদিন ধরে একেবারেই সোডিয়াম ছাড়া খাবার খান এবং কিছুদিন পরে হুট করেই সোডিয়াম রিচ খাবার খেয়ে ফেলেন, তা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এমন কি হার্টঅ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রান্নায় যতটুকু লবণ না দিলেই নয় ততটুকু দিন। পারলে আয়োডাইজ লবণ ব্যবহার করুন। যদি বেশি লবণ খেয়ে ফেলেন তাহলে বেশি পানি খেতে হবে। ব্যাপারটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন।

অতিরিক্ত গসেপিং
‘আরে ভাই আর বলবেন না, আমাদের বাড়িওয়ালা কাল কী করেছে জানেন, ওনার ভাই কোথা থেকে এক মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। আর এখন কী হচ্ছে শুনুন…থাক বাকিটুকু আমরা আর না শুনি, এ রকম পরচর্চাজনিত অনেক কথাই থাকে যা প্রায়ই আমরা একে অন্যের সাথে বলে থাকি, আপাত অর্থে একে আমরা গসিপ বলে থাকি। গসিপ করাটা খুব একটা ক্ষতিকর মনে না হলেও এর অনেকগুলো খারাপ দিক কিন্তু আছে। সরাসরিভাবে শারীরিক কোনো ক্ষতি না হলেও মানসিক ক্ষতি এবং সম্মান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কখনোই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কোনো ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জীবনে কী করবেন, না করবেন তা পুরোটাই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, এ নিয়ে অযথা গসিপ করলে সবার কাছে আপনি আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবেন। কেউ আপনাকে বিশ্বাস করবে না বা আপনার সামনে তারা মন খুলে কথাও বলতে পারবে না। কারণ তাদের মনে হতে পারে পরবর্তীকালে হয়তো সেই সব কথা আপনার গসিপের বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
আমাদের সবার মাঝেই একটি পজিটিভ এনার্জি আছে যা দৈনন্দিন জীবনকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে আশপাশের সবকিছুর ওপর একটি পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা করতে সাহায্য করে। কেউ যদি ক্রমাগত গসিপের মতো কোনো নেগেটিভ কাজে সময় নষ্ট করে তাহলে ব্যক্তির মাঝে আস্তে আস্তে একটা নেগেটিভ ভাবই তৈরি হয়, যা কোনোভাবেই মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। অত্যধিক গসিপ আপনার মনঃসংযোগ নষ্ট করে ধীরে ধীরে আপনার মধ্যে একটা অস্থিরতা তৈরি করে।

কী করা উচিত

  • অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে তাদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে অকারণে মন্তব্য করা একেবারেই উচিত নয়। তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
  • কেউ বিশ্বাস করে আপনার কাছে তার কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে আলোচনা করলে তা তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সাথে আলোচনা না করা উচিত।
  • অতিরিক্ত গসিপ করার অভ্যাস যাদের আছে তাদের পক্ষে হুট করে একদিনে গসিপ বন্ধ করে দেয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে সব সময় একটা নোটবুক রাখুন। একান্তই কারও সাথে কোনো কিছু শেয়ার করতে ইচ্ছা করলে তা সেই নোটবুকে লিখে রাখুন। এতে আস্তে আস্তে আপনার গসিপ করার অভ্যাসটা কমে যাবে।
  • নিজেকে সব সময় অন্য কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।
  • ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন। সব সময় পজিটিভ চিন্তা করুন।

অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া
মিষ্টি খেতে কে না পছন্দ করে। দোকানপাটে নানা রকমের মিষ্টির বহর দেখে কার না জিবে জল আসে। মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি দুর্বলতা মানুষের আজন্ম। কিন্তু অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া শরীরের জন্য মোটেও শুভকর নয়, কেননা অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে মানুষের শরীরের নার্ভ দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। জিহ্বার স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়াটা অনেকটা বদঅভ্যাসের মতো। এই বদঅভ্যাস আমাদের শারীরিক সমস্যা তো সৃষ্টি করেই সাথে আমাদের মানসিকতাও অসি’তিশীল করে তোলে। অতিরিক্ত খাওয়ার প্রতি মনোযোগী করে তোলে।
অতিরিক্ত মিষ্টি শুধু মানুষের শরীরকে মুটিয়েই দেয় না, এর ফলে মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকিটাও বেড়ে যায় বহুগুণে। অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আরও বেশ কিছু রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে শরীরে। এর মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিটাই থাকে সবচেয়ে বেশি। মিষ্টি কোমল পানীয়তেও চিনি থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ডায়াবেটিস রোগের জন্যও কিন’ অনেকাংশে দায়ী এই অতিরিক্ত মিষ্টি। আমেরিকার একদল গবেষক মানব শরীরে মিষ্টির প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে সমপ্রতি এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে। গবেষণায় বলা হয় বিশেষ করে মহিলাদের দিনে মিষ্টিযুক্ত খাবার ১০০ ক্যালরি অথবা ছয় চা চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। পুরুষের বেলায় এই পরিমাণটা ১৫০ ক্যালরি বা নয় চা চামচ। এই অতিরিক্ত মিষ্টি হৃদযন্ত্রের রোগ তৈরিসহ উচ্চরক্তচাপ এমনকি স্ট্রোকও ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে শরীরে যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত খাবারও শরীরে একই রকম প্রভাব ফেলে। আর শরীরের এই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব এড়াতে প্রয়োজন একটু বাড়তি সচেতনতা। এই সচেতনতা আর পরিমিত খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই আপনি আপনার শরীরকে রাখতে পারেন রোগ ও ঝামেলামুক্ত।

পরিষ্কার রাখুন আশপাশের পরিবেশ
মানুষ পরিবেশের একটি অংশ এবং জীবজগৎসহ মানুষের জন্যই পরিবেশ। পরিবেশ জীবজগতের স্বাভাবিক জন্ম, সি’তি, ক্রমবৃদ্ধি ও মৃত্যুকে প্রভাবিত করে। পরিবেশের সব উপাদান একে অপরের সম্পূরক ও সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের অস্তিত্ব এবং উন্নতি নির্ভরশীল। সমপ্রতি প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাবনতির ফলে সব ধরনের প্রাণের অস্তিত্ব ও মানবসভ্যতার উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশের অবক্ষয় ও দূষণ একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পরিবেশ মূলত মানুষের কর্মকাণ্ডেই দূষিত হচ্ছে। পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন, অসঙ্গতিপূর্ণ নগরায়ণ, জমিতে বেশি মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার, শিল্পকাখানায় অপরিশোধিত বর্জ্য পদার্থ, আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানার অবস্থান, যথেচ্ছ বৃক্ষনিধন, অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, জোরাল শব্দের হর্ন, উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিমাত্রায় আহরণ ইত্যাদি পরিবেশ দূষিত করছে এবং সামগ্রিক পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যেহেতু আমরা এ পরিবেশেরই অংশ, তাই পরিবেশ দূষিত হলে তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের শরীর ও মনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষিত পরিবেশ যেমন মানুষের সম্পদ নষ্ট করছে, তেমনি অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সে কারণে পরিবেশের অবক্ষয়রোধ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মানুষেরই। আমাদের নিজেদের রক্ষার প্রয়োজনেই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা ও সদিচ্ছা। পরিবেশের ওপর নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই বদঅভ্যাসটি ত্যাগ করার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

কী করবেন
রাস্তায় যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের প্যাকেট ছুড়ে না ফেলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলুন। যদি সম্ভব না হয় প্লাস্টিকের প্যাকেটটা মুড়ে বাড়িতে এনে তারপর ফেলুন। বাড়িতে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ একই ঝুড়িতে ফেলবেন না। প্লাস্টিকের জন্য আলাদা ঝুড়ি ব্যবহার করুন। এতে রিসাইক্লিং সুবিধা হবে এবং অনেক জিনিস আছে আমরা একাধিকবার ব্যবহার করি, এতে সাশ্রয় তো হবেই বর্জ্য পদার্থও অনেক কমে যাবে। বাড়ির প্রত্যেকে পলিব্যাগ এবং প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা কমিয়ে দিন। কাগজের ব্যাগ বা বড় রুমালে জড়িয়ে আপনার টিফিন ব্যাগটি নিতে পারেন। রাস্তাঘাটে যদি অন্যকে দেখেন ডাস্টবিন ব্যবহার করছে না তাহলে তাকে বাধা দিন। ‘আমি তো ফেলছি না, তাহলে অন্য কাউকে ফেলতে দেব কেন’-এই রকম মানসিকতা তৈরি করুন।