আগৈলঝাড়ায় ৪৫ দিন পর কবর থেকে কলেজ ছাত্রীর লাশ উত্তোলন

তপন বসু ॥  প্রেমিকের হাতে নিহত হওয়ার দীর্ঘ ৪৫ দিন পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে হতভাগ্য কলেজ ছাত্রী ঝুমুরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের সময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম তালুকদার, থানা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ নিহতের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। ৪৫দিন পর পূর্ণরায় মেয়ের লাশ দেখে হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহত ঝুমুরের বৃদ্ধ পিতা আব্দুল জব্বার হাওলাদার (৮০)। ঘটনাটি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ মোল্লাপাড়া গ্রামের।

নিহত ঝুমুরের ভাই ও মামলার বাদি সহিদুল ইসলাম মামলার এজাহারের উদ্বৃতি দিয়ে জানান, তার বোন ঝুমুর আক্তার উজিরপুর উপজেলার জল্লা আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। পরিবারের অজান্তে ঝুমুরের সাথে পাশ্ববর্তী বাড়ির মৃত আকবর আলী হাওলাদারের পুত্র লোকমান হাওলাদারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লোকমান বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মচারী হিসেবে পয়সারহাট নৌ-বন্দরে কর্মরত ছিলো। প্রেমের সম্পর্কে লোকমান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঝুমুরের সাথে দৈহিক মেলামেশা করতে থাকে। এতে ঝুমুর অন্তঃস্বত্তা হয়ে পরে। পরবর্তীতে ঝুমুর তার প্রেমিক লোকমানকে বিয়ের জন্য চাঁপ প্রয়োগ করলে লোকমান একাধিকবার ঝুমুরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একপর্যায়ে গত ৯ মার্চ লোকমান ঝুমুরের গর্ভপাত ঘটাতে ঔষধের সাথে বিষ মিশিয়ে তা খাইয়ে কৌশলে হত্যা করে। পরবর্তীতে লোক দেখানো ভাবে ঘাতক প্রেমিক লোকমান মৃত ঝুমুরের লাশ নিয়ে হাসপাতালেও দৌড়ঝাঁপ করে। পরবর্তীতে ঝুমুরের পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তরিঘড়ি করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই গভীর রাতে লাশের দাফন করে। এ ঘটনার প্রায় দশদিন পর ঝুমুরের পরিবারের সদস্যরা নিহত ঝুমুরের লেখা কয়েকটি চিরকুট উদ্ধার করে। ওই চিরকুটের সূত্র ধরেই তারা নিশ্চিত হন ঝুমুরকে কৌশলে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই চিঠিগুলোতে একাধিকবার ঝুমুরকে কৌশলে লোকমান বিষ খায়ানোর চেষ্ঠা চালিয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৩ মার্চ নিহত ঝুমুরের ভাই সহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আক্কাস আলী সুষ্ট তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে ঝুমুরের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করে আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় কবর থেকে ঝুমুরের লাশ উত্তোলন করা হয়। এস.আই আক্কাস আলী জানান, লাশের সুরতাহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ওইদিন দুপুরে লাশ মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ঝুমুরের মৃত্যুর পর থেকেই ঘাতক প্রেমিক লোকমান ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও লোকমানের বাড়ির দরজায় তালা ঝুঁলতে দেখা গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।