বিসিসি নির্বাচন : প্রার্থীদের অতীত হিসেব করছেন ভোটাররা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥  বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী নির্বাচনে তাদের অতীত ও বর্তমান নিয়ে হিসেব নিকেশ কষতে শুরু করেছেন সাধারন ভোটররা। এ নিয়ে এক বিশেষ অনুসন্ধানে রেরিয়ে এসেছে বিভিন্নজনের নানা মত।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দীর্ঘদিন থেকে নগরীর সদর রোডের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এ প্রতিনিধির কাছে বলেন, এসময় বরিশাল ছিলো ত্রাসের নগরী। বরাবরেই বিরোধী দলের লোকজন ছিলো বরিশালছাড়া। বিশেষ করে ৯১ সন থেকে ৯৬ সন পর্যন্ত বরিশালে ত্রাস ও চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা। ৯৬ সনে ক্ষমতার পালা বদল হলে সেই ত্রাস ও চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দেন আ’লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা। এরইমধ্যে বরিশালের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়ায় শওকত হোসেন হিরন। তিনি ২০০৮ সনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় পর শক্ত হাতে সন্ত্রাস দমন করতে থাকেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পরই বরিশালে প্রথম প্রকাশ্যে হিরন ঘোষণা করেছিলেন-‘চাঁদাবাজ যে দলেরই হোক না কেন, তাকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে আমাকে খবর দেবেন।’ যে কারনে গত ৪ বছর ৭ মাস বরিশালে কোন চাঁদাবাজির ঘটনা ছিলো না। আমরা ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন বরিশালে শান্তিতে ব্যবসা করেছি।

 

বরিশাল আইনজীবী সমিতির নেতা এ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক বলেন, হিরন শুধু উন্নয়নই নয়; শান্তি দিয়েছে বরিশাল নগরবাসীকে। হিরন মেয়র হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম ছিলো। এখন আর সেই ত্রাস নেই। তিনি আরো বলেন, এখানে রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করেছেন মেয়র হিরন।

 

বাংলাদেশ দলিত পরিষদের বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিনয় চন্দ্র ঋষী বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই প্রথমবারের মতো আমরা কোন নির্বাচিত জনপ্রতিধিকে অভিভাবক হিসেবে কাছে পেয়েছি, সে হলেন শওকত হোসেন হিরন। কারন হিসেবে তিনি বলেন, দলিত সম্প্রদায় দেশের অবহেলিত ও সমাজের নিচুঁ শ্রেনীর লোকবলে তাদের কাছে কেউ কখনো যেতো না। কিন্তু মেয়র থাকাকালীন তার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটিয়েছেন শওকত হোসেন হিরন। তিনি নগরীর দলিত সম্প্রদায়ের প্রায় সহস্রাধীক পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন। সকল ধর্ম ও সহঅবস্থানে সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড ও ব্যাপক উন্নয়নে হিরন নতুন ইতিহাস গড়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

অপরদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশালের উন্নয়নের বীজ বুনেছেন। আর সেই গাছ পরিচর্যা করে বড় করে তুলেছেন শওকত হোসেন হিরন। এছাড়া কামাল নিজেও বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকার সময় অনেক কাজ করেছেন। সে কথা মানুষ এখনও ভুলে যায়নি। ভোটের ফলাফলে এর প্রভাব পড়বে বলেও তারা উল্লেখ করেন। এছাড়াও বিএনপির সমর্থকেরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনের সাথে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

বরিশাল নগরীতে ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি অতীতে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কারনেই আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সাধারন ভোটারদের কাছে আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। উল্লেখ্য, এখানে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ১৪ দলের মনোনীত আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন, বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, বিএনপির মনোনীত আহসান হাবিব কামাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়দুল হক চাঁন প্রচার প্রচারনা করে যাচ্ছেন।

আচরণবিধির ওপর তিন মেয়র প্রার্থীকে সতর্ক

মটরসাইকেল মহড়া নিয়ে শো-ডাউন, নির্ধারিত সময়ের আগেই গণসংযোগ ও রঙিন লিফলেট বিতরণ করায় ইতোমধ্যে আচরনবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তিন মেয়রসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন। বরিশালের আঞ্চলিক রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মুজিবর রহমান বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রার্থীদের সতর্ক করা হচ্ছে। এরপর আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আরো এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা
 

অবশেষে হাইকোর্টের রায়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছেন ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রেজাউল কবির চৌধুরী রেজভী। এ নিয়ে যাচাই বাছাইয়ে বাদ পরা চারজন সাধারন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হলো। বরিশাল

আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রেজাউল কবির রেজভী হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট থেকে মঙ্গলবার তার দায়েরকৃত রিটের পক্ষে রায় দেয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ ফিরে পান। রেজভী জানান, তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি নিস্পত্তি হওয়া মামলার বিষয় হলফনামায় উল্লেখ না করায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে তিনি হাইকোর্টে রিট করলে আদালত তার পক্ষে রায় দেন। ফলে এখন তার নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে আর কোন বাঁধা রইলনা।