পানির নিচে আমনের বীজতলা ॥ দিশেহারা কৃষক

প্রেমানন্দ ঘরামী ॥  উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ, পূর্ণিমার জোয়ার ও গত চার দিনের ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমনের বীজতলা এখন পানির নিচে। এসব বীজতলার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পরেছেন কৃষকেরা। এমনিতেই দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়ছে না প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা এসব উপকূলের কৃষকদের। ধানের নায্যমূল্য না পাওয়া, বারবার ফসল বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এবার আমনের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশংকায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা।

কৃষি স¯প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চল থেকে নেমে আসা পানি ও পূর্ণিমার জোয়ারে গত ২৪ জুন থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলা প্ল¬াবিত হয়ে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। গত চারদিনের প্রবল বর্ষণে নতুন করে প্ল¬াবিত হয়েছে বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার নিম্নাঞ্চল। বর্তমানে এ বিভাগের অধিকাংশ জেলার আমনের বীজতলার ওপর ২ থেকে ৩ ফুট পানি জমে রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারন থেকে দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে বরিশালে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৪২ হেক্টর। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বীজতলা দরকার।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানি বীজতলা নষ্ট করে দিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করেছে। বরিশাল সদর উপজেলার সাহেবেরহাট, চরমোনাই, হিজলার বাউশিয়া, মেহেন্দীগঞ্জের ভাসানচর, আন্দারমানিকসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জানিয়েছেন, তাদের বীজতলার বীজ প্রায় ৩/৬ সেন্টিমিটার লম্বা হয়েছে। মুলাদী, বানারীপাড়া, উজিরপুর, গৌরনদী, বাবুগঞ্জসহ অনেক উপজেলার কৃষকেরা মাত্র ৩ থেকে ৪ দিন আগে অঙ্কুরোদগমকৃত ধান বীজতলায় ফেলেছেন। নিয়ামতি, টুঙ্গিবাড়িয়া, চরকাউয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বীজতলা এখন কমপক্ষে ২/৩ ফুট পানির নিচে ডুবে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে বীজতলা তৈরি করেছেন তাদের নতুন করে বীজতলা তৈরি করা ছাড়া কোন উপায় নেই। নগর সংলগ্ন কাশিপুর, চরবাড়িয়া, রায়পাশা, কড়াপুর ও সায়েস্তাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত চারদিন ধরে উপকূলে পূর্ণিমার প্রভাবে এখানে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে পানি জমে থাকায় বীজতলায় বীজের গোড়ায় পচন ধরতে শুরু করেছে।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের শস্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ রমেন্দ্রনাথ বাড়ৈ বলেন, বীজতলায় ২/৩ দিন স্থায়ীভাবে পানি জমে থাকলে সদ্য ফেলা বীজ ধান নষ্ট হয়ে যায়। তবে যেসব বীজতলা আংশিক ডুবেছে সেখানে তেমন ক্ষতি হবে না বলেও তিনি উল্লে¬খ করেন।