বরিশালের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে সিটি নির্বাচন

আ’লীগে কোন্দল ॥ বিএনপি একাট্টা

এনায়েত হোসেন মুন্না, বরিশাল থেকে ফিরে ॥  বরিশালের রাজনৈতিক দৃশ্যপট সিটি নির্বাচনের পর পুরোটাই পাল্টে গেছে। দীর্ঘ একযুগের কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন একাট্টা হয়ে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছে। ঠিক তার উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঐক্য যখন দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করেছে, ঠিক তখনই হতাশায় ভুগছেন এখানকার আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকেরা। তারা জরুরি ভিত্তিতে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দলের সভাপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সময় থেকে বরিশালে বিএনপির কোন্দল শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাঘে-সিংহে লড়াইয়ের ভূমিকায় নেমেছিলেন সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামাল এবং সাবেক মেয়র, মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি। এ দুই নেতার কোন্দলে এখানকার বিএনপি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরধরে ঢাকার পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পর্যন্ত হামলা ও ভাংচুর হয়েছিলো। সহিংসতায় রক্ত ঝড়েছে অসংখ্য নেতা-কর্মীর। এ দু’নেতার মুখ দেখাদেখিও ছিলো বন্ধ। কিন্তু সিটি নির্বাচনের পূর্বে সকল বিভেদ ভুলে আহসান হাবিব কামাল নিজেকে আত্মসমর্পন করেন চির প্রতিদ্বন্ধী মজিবর রহমান সরোয়ারের কাছে।

 

 

শুরুতে সরোয়ার ও তার নেতা-কর্মীরা বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। দু’নেতার বিরোধের মাঝে আবার তৃতীয়পক্ষ হিসেবে নির্বাচনের মাঠে বিএনপির বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবায়দুল হক চাঁন ও কামরুল আহসান শাহিন। চরম বিরোধের মাঝেই বিবদমান সকল নেতাকে নিয়ে ঢাকায় বৈঠক করে মাত্র এক সপ্তাহে সকলপক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করে এক যুগের বিরোধ মিটিয়ে সিটি নির্বাচনে নামাতে সক্ষম হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণের বিরুদ্ধে জয় পেয়ে যায় বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। সে ঐক্য নির্বাচনের পর মজবুত হয়ে কর্মী-সমর্থকদের আরো চাঙ্গা করে তুলেছে।

 

 

অন্যদিকে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর সাবেক চীফ হুইপ ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরণের স্নায়ু যুদ্ধ চললেও তা বিএনপির মতো কখনো খুব বেশি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে সকলের কাছে দু’নেতা বিরোধের কথা অস্বীকার করতেন। শওকত হোসেন হিরণ প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে হাসানাত আব্দুল্লাহকে রাজনৈতিক অভিভাবক সম্বোধন করে সম্মান দেখাতেন। কিন্তু নির্বাচনের তিন দিন পর হিরণ কর্মীসভা ডেকে নির্বাচনে তার পরাজয়ের জন্য সরাসরি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকেই দায়ী করেন। এনিয়ে দলের মধ্যে শুরু হয় প্রকাশ্যে তীব্র কোন্দল।

 

হাসানাতের সমর্থকরাও একাধিক সংবাদ সম্মেলনে শওকত হোসেন হিরণের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য তুলে ধরেন। এনিয়ে উভয়পক্ষে সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষ, মামলাসহ নানা বিরোধে যেন বিএনপির সেই সাবেক দিনের পথেই হাঁটতে শুরু করেছে এখানকার আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। দলীয় নেতাদের এ ভূমিকা দেখে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। তাই তারা জরুরি ভিত্তিতে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নতুবা সিটি নির্বাচনের ন্যায় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর নিশ্চিত ভড়াডুবির আশংকা করছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকেরা।