গৌরনদী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজে স্বীকৃতি ও অনুমোদন বিহীন ॥ দশ বছর ধরে চলছে ॥ বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগ

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক (কলেজ) সরদার আকবর আলী জানান, গৌরনদী গার্লস হাইস্কুলকে ১৯৯৫ সালে কলেজে রুপান্তরিত করে মানবিক বিভাগে ছাত্রী ভর্তির অনুমোদন দেয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বীকৃতি ও অনুমোদন না নিয়ে ১৯৯৮ সালে বানিজ্য, ২০০০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রী ভর্তি শুরু করেন। এ কলেজে অবৈধভাবে  বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগ চালু করা হয়। ওই বছরই বিজ্ঞান বিভাগে মীর আব্দুল আহসান আজাদ (গনিত), দূর্লভ ভান্দ বাড়ৈ (রসায়ন), অসিম কান্তি বিশ্বাস (পদার্থ), মোঃ কামরুজ্জামান (জীব বিজ্ঞান), সুবীর কুমার চাকলাদার (পরিসংখ্যান), রুনা হেনা (কম্পিউটার), বানিজ্য বিভাগে মোঃ আলিমুজ্জান (ব্যাবস্থাপনা), মোঃ সানাউল হক (হিসাব বিজ্ঞান), আফসানা কুমকুমকে (শাচীবিক বিদ্যা) প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সরকারিবিধি অনুযায়ী কলেজে কোন বিভাগ চালু করতে হলে সে বিভাগে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হয়। গৌরনদী গার্লস কলেজে ২০০০ সালে অনুমোদনহীনভাবে যখন বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয় তখন ওই বিভাগে ছাত্রী সংখ্যা ছিল ৫ জন। চলতি বছর প্রথম বর্ষে ১২জন, দ্বিতীয় বর্ষে ১৫ জন ছাত্রী রয়েছে। ওই সময় ১৩ জন ছাত্রী নিয়ে বানিজ্য বিভাগ চালু করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের জনৈক এক কর্মকর্তা জানান, দুটি বিভাগেই বোর্ডের অনুমোদন ও স্বীকৃতি ছাড়া নয়জন প্রভাষক নিয়োগ করা হয়। এসব প্রভাষকের শুরুতেই বেতন স্কেল ছিল ৪ হাজার ৩শ’ টাকা। বর্তমানে ১২ হাজার টাকা। সরকারি রাজস্ব তহবিল থেকে প্রতি বছর নয়জন প্রভাষককের বেতন ভাতা হিসেবে সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। গত ১০ বছর ধরে বোর্ডের স্বীকৃতি ও অনুমোদনহীন বিভাগ দুটির প্রভাষকরা প্রায় এক কোটি টাকারও বেশী বেতন ভাতা গ্রহন করেছেন। অথচ বিভাগ দুটিতে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ছাত্রী সংখ্যা ছিলো ২০ থেকে ২৫ জন।
স্বীকৃতি ও অনুমোদনবিহীন বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগে ছাত্রী ভর্তি ও প্রভাষক নিয়োগদান প্রসংঙ্গে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মীর আব্দুল আহসান আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি স্বীকৃতি বা অনুমোদনহীন নয় দাবি করে বলেন, বিভাগ দুটিতে ছাত্রী ভর্তির অনুমতি ও সাময়িক স্বীকৃতি রয়েছে। অধ্যক্ষের এ দাবি নাচক করে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক (কলেজ) সরদার আকবর আলী বলেন, বিভাগ দুটির কোন স্বীকৃতি ও অনুমতি নেই। অধ্যক্ষ আজাদ আরো বলেন, বোর্ড কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বা স্বীকৃতি না নিয়ে বিভাগ দুটিতে প্রভাষক নিয়োগ দেয়ায় অনিয়ম হয়ে থাকলে তার দায় দায়িত্ব তৎকালীন কলেজ ও বোর্ড কর্তৃপক্ষের। স্বীকৃতি না থাকার জন্য যদি গত দশ বছরে প্রভাষকদের গৃহীত বেতনভাতার সরকারি অংশের টাকা ফেরত চাওয়া হয় তাহলে আমরা আদালতের আশ্রয় নিব। এ প্রসংঙ্গে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক (কলেজ) সরদার আকবর আলী বলেন, বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগ দুটির স্বীকৃতি নেই। স্বীকৃতিবিহীন নিয়োগকৃত প্রভাষকদের গত দশ বছর যাবত বেতনভাতা গ্রহন বৈধ কিনা প্রসংঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত দিনের বেতন ভাতা গ্রহন বিধি সম্মত নয়।
বিধি লংঘন করে স্বীকৃতি বা অনুমোদন না নিয়ে বিভাগ চালু এবং নয়টি প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদানের বৈধতা আছে কিনা বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০০ সালে মানবিক বিভাগে ছাত্রী ভর্তির অনুমতি নবায়ন করার সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ তৎকালীন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মানবিক বিভাগের সাথে অবৈধভাবে বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগ নবায়ন করে নেয়। বিষয়টি ছিল সম্পূর্ন অবৈধ। স্বীকৃতি নেই অথচ বিভাগ দুটি নবায়ন করা হয়। নিয়োগকৃত শিক্ষকরা গত দশ বছর সরকারি অংশের যে সুবিধা নিয়েছে তারও বৈধতা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।